বয়সে ২৪ বছরের বড় ব্রিজিতের সঙ্গে মাখোঁর বিয়ের পেছনের সত্যিকার গল্প কী
Published: 27th, May 2025 GMT
ব্রিজিত ও এমানুয়েল মাখোঁর গল্পের সবচেয়ে অদ্ভুত দিক হলো, এটি সত্য বলে মনে হয়। ফ্রান্সে অনেক প্রেসিডেন্ট পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। তাই মানুষ সন্দেহের চোখে দেখেছেন, যখন শুনেছেন যে মাখোঁ কিশোর বয়স থেকেই তাঁর স্ত্রীকে একনিষ্ঠভাবে ভালোবেসে এসেছেন, তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন। তবু ব্রিজিত মাখোঁর নতুন জীবনী বলছে, তাঁদের এই ‘অস্বাভাবিক বিবাহ’ ফ্রান্সের রাজনীতিতে সবচেয়ে স্থির দাম্পত্য সম্পর্কগুলোর একটি এবং দেশ আরেকবার এমন এক রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যিনি তাঁর কাজে মনোযোগী।
এটা সত্য, পারিবারিক সুখ যে পেশাজীবনে সাফল্য আনবেই, সে নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ‘ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন’ (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো) বইয়ের লেখক ফরাসি সাংবাদিক সিলভি বোমেলের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচলিত করার মতো বিষয় বা কেলেঙ্কারি প্রেসিডেন্টের পদকে প্রায়ই ভাঁড়ামি বা নাটকীয় রূপ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী মাখোঁ তাতে প্রভাবিত হননি।
এটা সত্য, পারিবারিক সুখ যে পেশাজীবনে সাফল্য আনবেই, সে নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ‘ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন’ (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো) বইয়ের লেখক ফরাসি সাংবাদিক সিলভি বোমেলের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচলিত করার মতো বিষয় বা কেলেঙ্কারি প্রেসিডেন্টের পদকে প্রায়ই ভাঁড়ামি বা নাটকীয় রূপ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী মাখোঁ তাতে প্রভাবিত হননি।তবে এর মানে এ নয় যে এতে (ফরাসি প্রেসিডেন্টের) কোনো কেলেঙ্কারি নেই। বোমেলের বইটি সম্প্রতি ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়েছে। এর জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে পাঠকেরা অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, এতে এমন এক ‘সাধারণ প্রেমকাহিনি’ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার শুরুটা ছিল মাখোঁর স্কুলজীবনে। মাখোঁ যে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, সেখানেই শিক্ষকতা করতেন ব্রিজিত (ওই সময়ে মাখোঁর ভবিষ্যৎ স্ত্রী)।
বইটিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে থাকা মাখোঁর সঙ্গে যখন ব্রিজিতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন তাঁকে নানা বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। কিশোর বয়সী ছেলের সঙ্গে তাঁকে দেখা যেতে লাগলে স্থানীয় সমাজে অবিশ্বাস ও কানাঘুষা শুরু হয়। তাঁর আত্মীয়স্বজন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন এ সম্পর্ক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন সম্পর্ককে বিয়েতে রূপ দিতে মাখোঁ যে ধরনের জেদ ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন বইটির ৬৩ বছর বয়সী লেখিকা। এ ক্ষেত্রে নানা সামাজিক, আইনগত ও বাস্তবিক বাধা মাখোঁ একে একে অতিক্রম করেছেন।
১০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা (মাখোঁ ও ব্রিজিত) একে অপরের প্রতি অনুগত ছিলেন, যদিও একসঙ্গে থাকতেন না। এই ১০ বছরে মাখোঁর একগুঁয়েমি বোঝা যায়। এটা তাঁর চরিত্রের এক বৈশিষ্ট্য। আপনি তাঁকে পছন্দ করুন বা না করুন, তাঁর এ অটল থাকা সত্যি প্রশংসনীয়। তিনি তাঁকে (ব্রিজিতকে) বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছেন।সিলভি বোমেল, ফরাসি সাংবাদিক ও লেখকবোমেলের বিশ্বাস, ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের অস্থিরতা, চরম ডানপন্থার পুনরুত্থান ও জনপ্রিয়তা পড়তির মধ্যেও প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজের অবস্থান যেভাবে ধরে রেখেছেন; তার পেছনে ওই একই গুণাবলি কাজ করে থাকতে পারে। প্যারিসের শঁজেলিজের কাছে নেপোলিয়ন হোটেলের কাঠঘেরা একটি রেস্তোরাঁয় আমাদের আলাপকালে বোমেল বলেন, ‘তিনি (মাখোঁ) জানেন তিনি কী চান, যা চান সেটা পান এবং তিনি একজন স্বাধীন মানুষ।’
ব্রিজিত মাখোঁ তাঁর স্বামীর চেয়ে বয়সে ২৪ বছরের বড়। তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল আমিয়েঁ শহরের একটি বেসরকারি কলেজে। সেখানে ব্রিজিত ছিলেন ফরাসি ভাষার শিক্ষক আর মাখোঁ ছাত্র। সে সময় ব্রিজিত বাস করতেন শহরের অভিজাত একটি পাড়ায়। ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির ব্যবসার জন্য তাঁর পরিবারের নামডাক ছিল। আন্দ্রে-লুঁই ওজিয়ের নামের একজন নামকরা ব্যাংকারের সঙ্গে তখন তিনি বিবাহিত জীবনে ছিলেন; বোমেল যাঁকে ‘নির্ভরযোগ্য, কিন্তু একঘেঁয়ে’ মানুষ হিসেবে চিত্রিত করেন। তাঁদের সংসারে ছিল তিনটি সন্তান। বোমেল বলেন, ‘আমি মনে করি না, ব্রিজিত তাঁর সঙ্গে অখুশি ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল শান্ত, ছিমছাম। এরপর হঠাৎই (মাখোঁর সঙ্গে) “এই” সম্পর্কটা তাঁর জীবনে এসে পড়ল।’
এখানে ‘এই’ বলতে বোঝানো হচ্ছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই মেধাবী ছাত্রের (মাখোঁ) প্রতি ব্রিজিতের আকর্ষণকে, যে কিনা যোগ দিয়েছিল তাঁরই পরিচালিত স্কুলের নাট্যদলে। বোমেল জানাচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৯৪ সালের বসন্তে। তখন মাখোঁর বয়স ১৬, আর ব্রিজিতের ৪০। দুজনে মিলে একটি নাটক নতুন করে লিখেছিলেন, যাতে নাট্যদলের প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি করে চরিত্র রাখা যায়। বোমেল বলেন, ‘অন্তত তখন থেকেই লোকজন তাঁদের হাতে হাত ধরে হাঁটতে দেখা শুরু করেন।’
ব্রিজিতের দুটি হাত পাশ থেকে হঠাৎ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মুখে পড়তে দেখা যায়, যা অনেকটা চপেটাঘাত বলে মনে হয়েছে। হ্যানয়ের নই বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে, ২৫ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান