ব্রিজিত ও এমানুয়েল মাখোঁর গল্পের সবচেয়ে অদ্ভুত দিক হলো, এটি সত্য বলে মনে হয়। ফ্রান্সে অনেক প্রেসিডেন্ট পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। তাই মানুষ সন্দেহের চোখে দেখেছেন, যখন শুনেছেন যে মাখোঁ কিশোর বয়স থেকেই তাঁর স্ত্রীকে একনিষ্ঠভাবে ভালোবেসে এসেছেন, তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন। তবু ব্রিজিত মাখোঁর নতুন জীবনী বলছে, তাঁদের এই ‘অস্বাভাবিক বিবাহ’ ফ্রান্সের রাজনীতিতে সবচেয়ে স্থির দাম্পত্য সম্পর্কগুলোর একটি এবং দেশ আরেকবার এমন এক রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যিনি তাঁর কাজে মনোযোগী।

এটা সত্য, পারিবারিক সুখ যে পেশাজীবনে সাফল্য আনবেই, সে নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ‘ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন’ (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো) বইয়ের লেখক ফরাসি সাংবাদিক সিলভি বোমেলের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচলিত করার মতো বিষয় বা কেলেঙ্কারি প্রেসিডেন্টের পদকে প্রায়ই ভাঁড়ামি বা নাটকীয় রূপ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী মাখোঁ তাতে প্রভাবিত হননি।

এটা সত্য, পারিবারিক সুখ যে পেশাজীবনে সাফল্য আনবেই, সে নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ‘ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন’ (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো) বইয়ের লেখক ফরাসি সাংবাদিক সিলভি বোমেলের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচলিত করার মতো বিষয় বা কেলেঙ্কারি প্রেসিডেন্টের পদকে প্রায়ই ভাঁড়ামি বা নাটকীয় রূপ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী মাখোঁ তাতে প্রভাবিত হননি।

তবে এর মানে এ নয় যে এতে (ফরাসি প্রেসিডেন্টের) কোনো কেলেঙ্কারি নেই। বোমেলের বইটি সম্প্রতি ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়েছে। এর জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে পাঠকেরা অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, এতে এমন এক ‘সাধারণ প্রেমকাহিনি’ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার শুরুটা ছিল মাখোঁর স্কুলজীবনে। মাখোঁ যে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, সেখানেই শিক্ষকতা করতেন ব্রিজিত (ওই সময়ে মাখোঁর ভবিষ্যৎ স্ত্রী)।

বইটিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে থাকা মাখোঁর সঙ্গে যখন ব্রিজিতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন তাঁকে নানা বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। কিশোর বয়সী ছেলের সঙ্গে তাঁকে দেখা যেতে লাগলে স্থানীয় সমাজে অবিশ্বাস ও কানাঘুষা শুরু হয়। তাঁর আত্মীয়স্বজন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন এ সম্পর্ক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন সম্পর্ককে বিয়েতে রূপ দিতে মাখোঁ যে ধরনের জেদ ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন বইটির ৬৩ বছর বয়সী লেখিকা। এ ক্ষেত্রে নানা সামাজিক, আইনগত ও বাস্তবিক বাধা মাখোঁ একে একে অতিক্রম করেছেন।

১০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা (মাখোঁ ও ব্রিজিত) একে অপরের প্রতি অনুগত ছিলেন, যদিও একসঙ্গে থাকতেন না। এই ১০ বছরে মাখোঁর একগুঁয়েমি বোঝা যায়। এটা তাঁর চরিত্রের এক বৈশিষ্ট্য। আপনি তাঁকে পছন্দ করুন বা না করুন, তাঁর এ অটল থাকা সত্যি প্রশংসনীয়। তিনি তাঁকে (ব্রিজিতকে) বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছেন।সিলভি বোমেল, ফরাসি সাংবাদিক ও লেখক

বোমেলের বিশ্বাস, ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের অস্থিরতা, চরম ডানপন্থার পুনরুত্থান ও জনপ্রিয়তা পড়তির মধ্যেও প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজের অবস্থান যেভাবে ধরে রেখেছেন; তার পেছনে ওই একই গুণাবলি কাজ করে থাকতে পারে। প্যারিসের শঁজেলিজের কাছে নেপোলিয়ন হোটেলের কাঠঘেরা একটি রেস্তোরাঁয় আমাদের আলাপকালে বোমেল বলেন, ‘তিনি (মাখোঁ) জানেন তিনি কী চান, যা চান সেটা পান এবং তিনি একজন স্বাধীন মানুষ।’

ব্রিজিত মাখোঁ তাঁর স্বামীর চেয়ে বয়সে ২৪ বছরের বড়। তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল আমিয়েঁ শহরের একটি বেসরকারি কলেজে। সেখানে ব্রিজিত ছিলেন ফরাসি ভাষার শিক্ষক আর মাখোঁ ছাত্র। সে সময় ব্রিজিত বাস করতেন শহরের অভিজাত একটি পাড়ায়। ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির ব্যবসার জন্য তাঁর পরিবারের নামডাক ছিল। আন্দ্রে-লুঁই ওজিয়ের নামের একজন নামকরা ব্যাংকারের সঙ্গে তখন তিনি বিবাহিত জীবনে ছিলেন; বোমেল যাঁকে ‘নির্ভরযোগ্য, কিন্তু একঘেঁয়ে’ মানুষ হিসেবে চিত্রিত করেন। তাঁদের সংসারে ছিল তিনটি সন্তান। বোমেল বলেন, ‘আমি মনে করি না, ব্রিজিত তাঁর সঙ্গে অখুশি ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল শান্ত, ছিমছাম। এরপর হঠাৎই (মাখোঁর সঙ্গে) “এই” সম্পর্কটা তাঁর জীবনে এসে পড়ল।’

এখানে ‘এই’ বলতে বোঝানো হচ্ছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই মেধাবী ছাত্রের (মাখোঁ) প্রতি ব্রিজিতের আকর্ষণকে, যে কিনা যোগ দিয়েছিল তাঁরই পরিচালিত স্কুলের নাট্যদলে। বোমেল জানাচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৯৪ সালের বসন্তে। তখন মাখোঁর বয়স ১৬, আর ব্রিজিতের ৪০। দুজনে মিলে একটি নাটক নতুন করে লিখেছিলেন, যাতে নাট্যদলের প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি করে চরিত্র রাখা যায়। বোমেল বলেন, ‘অন্তত তখন থেকেই লোকজন তাঁদের হাতে হাত ধরে হাঁটতে দেখা শুরু করেন।’

ব্রিজিতের দুটি হাত পাশ থেকে হঠাৎ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মুখে পড়তে দেখা যায়, যা অনেকটা চপেটাঘাত বলে মনে হয়েছে। হ্যানয়ের নই বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে, ২৫ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস

জমকালো সাজে সেজেছে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল। উপলক্ষটাও অনন্য, রাজকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে এখানে রাজকীয় নৈশ্যভোজ আয়োজন করেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।

বুধবার রাতের রাজকীয় এ আয়োজনে কূটনীতি, খাবার, ঐতিহ্য, সংগীত আর আভিজাত্য একসুতোয় বাঁধা পড়েছিল। ট্রাম্প–মেলানিয়াসহ রাজার অতিথি হয়েছিলেন বিশ্বের ১৬০ জন গণমান্য ব্যক্তি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মানে রাজা তৃতীয় চার্লসের আয়োজন করা রাজকীয় ভোজের টেবিল। যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ