দীপিকা পাড়ুকোন ও প্রভাস একসঙ্গে ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’ ছবিতে কাজ করেছিলেন। বলা হচ্ছিল যে দুজনে ‘অ্যানিমেল’ ছবির পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার আসন্ন ছবি ‘স্পিরিটে’-ও একসঙ্গে কাজ করবেন। কিন্তু একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দীপিকার ‘অত্যধিক’ দাবির কারণেই নাকি সন্দীপ তাঁকে ছবি থেকে বাদ দিয়েছেন। সম্প্রতি বলিউডে আলোচিত দীপিকা বনাম সন্দীপের অঘোষিত যুদ্ধের নেপথ্যে কী?

দীপিকা পাড়ুকোন। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমাকে আমার মতো পাকতে দাও’

‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও...যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন...।’ কয়েক দিন থেকেই এই গানটার একটা প্যারোডি মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে। সেটা হচ্ছে, ‘আমাকে আমার মতো পাকতে দাও, যেটা পাকেনি পাকেনি সেটা না খাওয়াই ঠিক, সব খেলে নষ্ট জীবন...।’ ১৭ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নোন্দাপুর চাত্রাপুকুর এলাকায় ক্ষীরশাপাতি আম পাড়তে দেখা গেছে।

অপরিপক্ব এই আমে ‘টম টম’ নামের একধরনের রাসায়নিক ছিটানো হচ্ছে। আবার উপজেলার কাঁকনহাট পৌর এলাকার সাহাপুর মহল্লায় গোপালভোগ আম পেড়ে একইভাবে হরমোন ছিটাতে দেখা গেছে। চাষিরা বলছেন, এই হরমোন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। আমগুলো একসঙ্গে পাকবে আর সুন্দর একটা রং হবে, পচবে না, সে জন্য তাঁরা এই হরমোন ব্যবহার করছেন। তাঁরা বলছেন, দেশে এই হরমোন অনুমোদিত।

তবে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার ঘোষণার সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে এই ক্যালেন্ডারের বাইরেও যদি কোনো এলাকায় কোনো আম আগাম পেকে যায়, তাহলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আম বাজারজাত করা যাবে। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এখন পর্যন্ত রাজশাহীর কোনো কৃষক আগাম আম পাড়ার জন্য প্রত্যয়নপত্র নেননি।

এ বিষয়ে ১৯ মে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আম পাকাতে ব্যবহৃত হরমোন কি ক্ষতিকর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলছেন, ‘একটি গাছে সব মুকুল একসঙ্গে আসে না। প্রথম মুকুল থেকে শেষ মুকুলটা আসা পর্যন্ত প্রায় ২০ দিন সময় লাগে। তাহলে প্রথম পর্যায়ে আসা মুকুলের আম এবং শেষ পর্যায়ে আসা মুকুলের আম একসঙ্গে পাকে না। কিন্তু যাঁরা বাণিজ্যিকভাবে আম কেনাবেচা করেন, তাঁদের সব আম একসঙ্গে পাকা দরকার। তা ছাড়া তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ জন্য তাঁরা বলে থাকেন গাছ থেকে দু–একটি পাকা আম ঝরে পড়লে তা দিয়েই একটা ধারণা পাওয়া যায় যে আমগুলো পরিপক্ব হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিপক্ব আমে হরমোন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অপরিপক্ব আমে অবশ্যই নয়।’

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, গাছের সব আম একসঙ্গে পরিপক্ব হয় না এবং পাকে না।
কৃষিবিদদের কাছ থেকে বরাবরই আমরা জেনে আসছি ‘আম পাকাতে ইথিলিন গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আমের রেস্পিরেশন রেট এবং অভ্যন্তরীণ এনজাইমেটিক রিঅ্যাকশন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ফলের মধ্যে থাকা স্টার্চ ধীরে ধীরে সুক্রোজে রূপান্তরিত হয়, যা ফলকে মিষ্টতা ও নরম অনুভূতি প্রদান করে। তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রা (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ফল দ্রুত পাকায়। এতে পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও রং কমে যেতে পারে।’

এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে আমরা প্রকৃতির দিকে তাকাব, নাকি সব আম একসঙ্গে পাকাব। আর  তা করতে মাত্রাতিরিক্ত গরম সৃষ্টির জন্য কার্বাইড ব্যবহার করব, নাকি হরমোন ছিটাব। যদি তা–ই করি, তাহলে আমের স্বাদ আর পুষ্টিমান দুটোই হারাতে হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কী?

১৭ মে যখন ক্ষীরশাপতি আমে হরমোন ছিটানো হচ্ছিল, তখন থেকে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আরও ১৩ দিন পরে এই জাতের আম পরিপক্ব হওয়ার কথা। অর্থাৎ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩০ মে এই আম বাজারে আসার কথা। তবে আম–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলছেন, ক্ষীরশাপতি আম ১০ জুনের আগে খেলে তার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। সেই হিসাবে আরও ২৩ দিন পরে এই আম পরিপক্ব হবে।  

যেদিন রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়, সেদিনই আম–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে এখন ব্যবসায়ী ও চাষিরা আম গাছে থাকতেই একসঙ্গে পাকানো ও রং ধরানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। বিষয়টি তিনি প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করেছিলেন।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার একজন আম ব্যবসায়ী সেদিন কথায় কথায় বললেন যে চিটাগাংয়ের ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছ থেকে এক শর্তে আম নিতে রাজি আছেন। শর্ত হচ্ছে কার্বাইড দিয়ে সব আম একসঙ্গে পাকিয়ে দিতে হবে। তাঁরা বারবার বলছেন কার্বাইড করেন, কার্বাইড করেন, তা ছাড়া আপনার আম চলবে না।

এই ব্যবসায়ীর বক্তব্য হচ্ছে, তিনি গাছে আম পাকা দেখলে সেই আম পেড়ে অল্প অল্প করে অনলাইনে ভোক্তাদের বিশ্বস্ততার সঙ্গে পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু বেশি লাভের জন্য বড় পার্টি ধরতে গেলে তাঁকে এই অসততার আশ্রয় নিতে হবে। তাঁরা রঙিন আম পাবেন, দেখে মনে হবে ফ্রেশ। সবগুলো একসঙ্গে পাকা পাবেন কিন্তু হয়তো পুষ্টি আর স্বাদটা কম পাবেন।

১৩ মে রাজশাহীর সাহেববাজারে ডালি ভরে গোপালভোগ আম নিয়ে বসে আছেন একজন ব্যবসায়ী। খদ্দেরদের ডেকে বলছেন, ভাই নেন নেন, স্বাদ হবে। ভেতরে রস আছে, কিন্তু রাজশাহীর মানুষ তো আমের স্বাদ বোঝে। একজন ক্রেতা এসে একটা আমের ঘ্রাণ নিয়ে কিচ্ছু না বলে চলে গেলেন। রাজশাহীর গোপালভোগ ২২ মে থেকে বাজারে আসার কথা। আর মাহবুব সিদ্দিকীর হিসাব অনুযায়ী ২৮ মের আগে গোপালভোগ খেলে স্বাদ পাওয়া যাবে না।

রাজশাহীতে ঘোষিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম ভাঙা হচ্ছে। ২২ মে থেকে গোপালভোগ ও ৩০ মে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর আম বাজারজাত করার কথা। তার আগেই গোপালভোগ আমে বাজার ভরে গেছে।

রাজশাহীর আম–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী ফেসবুকে নিজের মতো একটা ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছেন। তাতে বলেছেন, ‘সরকারিভাবে আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশ পেলেও সেটি মোটেই নির্ভুল নয়। দেশের অগণিত আম ভোক্তাগণের সদয় অবগতির জন্য সঠিক সময়ে আম কেনার একটি ক্যালেন্ডার প্রদান করছি। এতে ভোক্তাগণ ঠকবাজ ও প্রতারক আম ব্যবসায়ীর কবলে পড়বেন না।’

তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, গোপালভোগ মে মাসের ২৮ তারিখ থেকে জুন মাসের ১০ তারিখের মধ্যে, ক্ষীরশাপাতি জুন মাসের ১০ তারিখ থেকে ৩০ জুন অবধি। অন্য আম আরও পরে।

এখন বেচারা আম কী করবে বলুন। কোন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পাকবে। প্রশাসনের, গবেষকের, কৃষকের নাকি ভোক্তার? সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, আমের যদি জবান থাকত, তাহলে সে ওই প্যারোডিটা গাইত, ‘আমাকে আমার মতো পাকতে দাও, যেটা পাকেনি পাকেনি সেটা না খাওয়াই ঠিক, সব খেলে নষ্ট জীবন...।’

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এশিয়ার ভবিষ্যৎ আমরাই লিখব: নিক্কেই ফোরামে অধ্যাপক ইউনূস
  • ‘এখন আমাদের কী হবে কার কাছে থাকব’
  • যেখানে পথিক থমকে দাঁড়ান, মুগ্ধ স্থানীয়রাও
  • পল্লবীতে বাসায় ঢুকে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা
  • পল্লবীতে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, সৌদিপ্রবাসী যুবক গ্রেপ্তার
  • ‘আমাকে আমার মতো পাকতে দাও’
  • সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপরীতে দাঁড়ায়নি, একসঙ্গেই কাজ করছে