কারামুক্ত হয়েই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতা আজহার, ধন্যবাদ দিলেন জুলাই আন্দোলনকারীদের
Published: 28th, May 2025 GMT
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কারামুক্ত হওয়ার পরেই শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে নিজেকে ‘মুক্ত’ ও ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ এই নেতা।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক ব্লক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শাহবাগ মোড়ে দলের আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নেন তিনি। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন।’
আজহারের মতে, তার মুক্তির পথ তৈরি হয়েছে গত বছরের 'জুলাই অভ্যুত্থান' এর মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘যাদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেই ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। ছাত্রসমাজই রাজপথে রক্ত ঢেলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে।’
দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর কারাভোগের পর জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধের মামলায় আপিল বিভাগে খালাস পান। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। এর আগে তিনি ২০১২ সালের ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার হন এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।
শাহবাগ মোড়ে বানানো অস্থায়ী মঞ্চে আয়োজিত সংবর্ধনায় আজহার বলেন, ‘আমি সর্বপ্রথম আমাদের মহান আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা আজ সত্যিকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। অতীতে আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন আদালত জনগণের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।’
তিনি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন, ‘তারা জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলেই আজ আমরা এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।’
কারাগারে থাকা সময়ের সহযোদ্ধাদের স্মরণ করে আজহার বলেন, ‘‘আমি দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করছি, আমার যেসব নেতাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ করা হয়েছে। আমি চাই, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক।”
কারামুক্তির পর জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ দলের শীর্ষ নেতারা ফুল দিয়ে আজহারকে বরণ করে নেন। সকাল থেকেই হাসপাতালে ও শাহবাগ এলাকায় ছিল জামায়াত কর্মীদের উপস্থিতি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গলায় ছুরি ধরা ফিলিস্তিনিদের হাতে ব্যান্ডেজ দরকার নেই
২৭ মে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাফাহতে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায়। তারা মাসের পর মাস অনাহারে থাকার পর খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আতঙ্কিত বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তাল আস-সুলতান ত্রাণকেন্দ্রে বিশ্ব যা দেখেছিল, তা কোনো ট্র্যাজেডি ছিল না। বরং এ ছিল উদ্ঘাটন। অর্থাৎ মানবিক সাহায্য সাম্রাজ্যের চেয়ে মানবতার সেবার জন্য টিকে আছে– এই ভ্রান্ত ধারণার চূড়ান্ত ও সহিংস উন্মোচন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মর্যাদা ও নিরপেক্ষতার মডেল হিসেবে প্রচার করা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের নতুন বিতরণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। কিন্তু এটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। ছিল সাজানো ব্যবস্থা অনুযায়ী এক ধরনের সমাপ্তি, যা ক্ষুধার্তদের পুষ্টি জোগাতে কাজ করে না; বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ ও চার দেয়ালে আবদ্ধ করার জন্য তৈরি হয়েছিল।
গাজার ক্ষুধার্ত মানুষ প্রচণ্ড রোদের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে। খাবারের একটি ছোট বাক্স পেতে তারা ধাতব পদার্থবেষ্টিত গলিতে আটকে থাকতে বাধ্য হয়। অবশেষে হতাশা নিয়ে এগিয়ে যায় এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মার্কিন সমর্থিত ঠিকাদার নিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মীরা পদদলিত হওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ গুলি চালায়। তৎক্ষণাৎ মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয় এবং জনতার ওপর সতর্কীকরণ গুলিবর্ষণ শুরু করে। বহুল প্রচারিত সাহায্য কেন্দ্রটি মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পরই সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ে।
মানুষকে যা দেওয়া হয়েছিল, তা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না; মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার তো দূরের কথা। বিতরণ করা বাক্সগুলোতে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঠেকাতে পর্যাপ্ত ক্যালোরি ছিল। এগুলো পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতা, যা মানুষকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাজানো ঘটনা, যেখানে তাদের শরীর ধীরে ধীরে নিজেদের গ্রাস করে। এখানে পুষ্টির জন্য কোনো শাকসবজি নেই। রোপণের জন্য কোনো বীজ নেই। পুনর্নির্মাণের জন্য কোনো সরঞ্জাম নেই। শুধু প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, স্থায়ী সংকট বহালের জন্য জনসমাগম বজায় রাখতে তৈরি করা হয়েছিল। এভাবে চিরকাল তাদের ধ্বংসকারীদের করুণার ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে।
বিতরণ কেন্দ্রের ছবিগুলোতে ক্ষুধা, রোগ ও অবিরাম যুদ্ধের কারণে দৃশ্যত ক্লান্ত মানুষদের দেখানো হয়েছে। তারা গবাদি পশুর মতো ধাতব গলিতে আটকে আছে এবং বন্দুকের নলের দিকে তাকিয়ে থাকা অবশিষ্টাংশের জন্য অপেক্ষা করছে, যা গত শতাব্দীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে আসা দুর্ভোগ ও মৃত্যুর সুপরিচিত চিত্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়।
এই সাদৃশ্য আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। গাজার ‘সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলো’ আমাদের সময়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, যা ইউরোপীয় পূর্বসূরিদের মতোই; অবাঞ্ছিত জনগোষ্ঠীকে বেঁচে থাকতে
সাহায্য করার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ করা, চালিত হতে বাধ্য করা এবং গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করার জন্য সাজানো হয়েছে।
অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের ইতোমধ্যে কারামাহ বা মর্যাদা রয়েছে। এটি তাদের নির্মূল হতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্যেই টিকে আছে; তাদের মানুষ হিসেবে লড়াই করা ও তাদের জেদের মধ্যেই এটি বেঁচে আছে। যতক্ষণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সহজ সত্যটি বুঝতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল এবং তার মিত্ররা আধিপত্যের হাতিয়ারকে ত্রাণ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকবে। আর আমরা বছরের পর বছর রাফাহতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকব। সেখানে যা ঘটেছে তা সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতা ছিল না। এটি ছিল এমন একটি ব্যবস্থার সাফল্য, যা অমানবিক করে তোলা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং মুছে ফেলার জন্য তৈরি করার নকশা। যারা ফিলিস্তিনিদের গলায় ছুরি ধরেছে, তাদের হাতে আর ব্যান্ডেজের প্রয়োজন নেই।
আহমদ ইবসাইস: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রথম প্রজন্মের ফিলিস্তিনি; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম