“আমরাও মানুষ। আমাদেরও অসুখ-বিসুখ হয়। অন্তত একদিন ছুটি দরকার”—রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক জনসংলাপে এমন কথা উঠে এসেছে গৃহকর্মীদের কণ্ঠে।

বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই জনসংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা বারসিক। সংলাপের শিরোনাম ছিল—‘রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা এবং সমাধানের উপায়’।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা ও সমাধানে নীতি গবেষণা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী নগরে বর্তমানে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার গৃহকর্মী কাজ করছেন।

আরো পড়ুন:

টানা ২৩ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে জবি

কড়াইতে পপকর্ন বানানোর রেসিপি

৭০ বছর বয়সী গৃহকর্মী শহরবানু বিবির এক হাত ভাঙা। থাকেন পদ্মাপাড়ের বস্তিতে। ভাঙা হাত নিয়ে তিনি গৃহকর্মীর কাজ করে যাচ্ছেন। জনসংলাপে তিনি বলেন, “আমি একা হয়ে গেছি। তাই এক বাড়িতে কাজ করি। ওখানে খাইতে দ্যায়, মাস শেষে দেয় এক হাজার টাকা। কাজ করতে গিয়ে ভুল হলে বাড়িওয়ালির কড়া কথা খুব কষ্ট দেয়। মানুষ মাত্রই ভুল করে, এইটুকু বুঝলে ভালো হতো।”

গৃহকর্মী মুনমুন বলেন, ‘‘একদিন কাজ করতে করতে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন গৃহকর্তার স্ত্রী তাকে পা দিয়ে লাথি দিয়ে ওঠান। অসুস্থ থাকায় পরদিন ছুটি চাইলেও তা মেলেনি।’’ তিনি বলেন, “কাজে না গেলে বাদ দিয়ে দিত। অসুস্থ শরীর নিয়েই কাজ করতে হয়েছিল। অন্তত একটা দিন ছুটি আমাদেরও দরকার।”

আজেমা বেগম নামের আরেক গৃহকর্মী বলেন, “ওরা চাকরি করে, ছুটি পায়। আমরা সামান্য বেতনে কাজ করি, অথচ ছুটি চাইলে বলা হয়, ‘চাইলে কাজ করো, না চাইলে যাও।’ এটা অন্যায়।”

গৃহকর্মী শিলা বলেন, “কাজ দেয়ার সময় বলা হয় একটা কাজ। কিন্তু কাজে গেলে সাতটা কাজ দাঁড়িয়ে যায়। ভুল করলেও ক্ষমা নেই। অসুস্থ হয়ে একদিন না গেলে দারোয়ানকে বলে রাখা হয় যেন পরদিন ভেতরে ঢুকতে না দেয়। এটা খুব কষ্টের।”

নগর দরিদ্র অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “গৃহকর্মীরা বাড়িতে রান্না করেন, সেই খাবার দিনের পর দিন ফ্রিজে থেকে নষ্ট হয়। অথচ তাদের ভালো খাবার দেয়া হয় না। অসুস্থ হলে বেতন কেটে নেয়া হয়। এ বিষয়ে গৃহকর্তাদের আরো উদার হওয়া দরকার। যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে, যারা গৃহকর্মীদের সম্মান করেন ও আপনজন মনে করেন।”

উন্নয়নকর্মী সম্রাট রায়হান বলেন, “অবহেলিত এই শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হওয়া দরকার। তাদেরও অ্যাসোসিয়েশন থাকা উচিত, যেন তারা যৌক্তিক দাবি আদায়ে একত্রিতভাবে সোচ্চার হতে পারে।”

জনসংলাপে অংশ নেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক নীলা ইয়াসমিন, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল আমিন, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের হোস্টেল সুপার ফেরদৌস রাবিয়া এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আইনুল হক। সংলাপ পরিচালনা করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম।

এর আগে বারসিকের পলিসি রিসার্স অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার আমরীন বিনতে আজাদ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

এ বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহীতে এখনও ১১ শতাংশ গৃহকর্মীর বয়স ১৫ বছরের নিচে। ৪০ শতাংশ গৃহকর্মী নিরক্ষর। মাসে ২ হাজার টাকার কম বেতন পান ২৫ শতাংশ। আর ৪ হাজার টাকার বেশি পান মাত্র ১০ শতাংশ।

গবেষণায় শিশুশ্রম বন্ধ, বেতন কেটে না নিয়ে সাপ্তাহিক ছুটি নিশ্চিত করা এবং গৃহকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ হকর ম দ র গ হকর ম র জনস ল প ক জ কর দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।

ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র‍্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র‍্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেউ কটুক্তি করলে কী করবেন?
  • বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স‌্যামির
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার