হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের বড় দুটি ষাঁড়। খামারি একটির নাম রেখেছেন—‘লাল বাদশাহ’, অপরটির ‘সাদা বাদশাহ’। একটির ওজন ১৫ মণের মতো, অন্যটি প্রায় ১৬ মণ। ষাঁড় দুটি প্রস্তুত করা হয়েছে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য। দুটি ষাঁড়ের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৭ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা দাম উঠেছে বলে জানিয়েছেন খামারি। কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সদর ইউনিয়নের লম্বরী গ্রামের নুর অ্যাগ্রো খামারে রয়েছে ষাঁড় দুটি।

গত মঙ্গলবার দুপুরে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, খামারের আঙিনায় থাকা বড় একটি গাছে ষাঁড় দুটি বেঁধে রাখা হয়েছে। ষাঁড়গুলো দেখতে স্থানীয় অনেক মানুষ ভিড় করেছেন। তবে মানুষ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে ষাঁড় দুটি।

সরেজমিনে কথা হয় খামারি আবদুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কালো বাদশাহর ওজন ১৫ মণের মতো। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ৫ ইঞ্চি, উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। অন্যদিকে সাদা বাদশাহর ওজন ১৬ মণ। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ৭ ইঞ্চি, উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। আগামী ১ জুন টেকনাফ সদরের লম্বরীর পর্যটন মাঠের কোরবানির পশুর হাটে ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য তোলা হবে।

‘অনেক ক্রেতা ষাঁড় দুটি দেখতে খামারে আসছেন। ১৭ লাখ দাম চেয়েছিলাম। এর মধ্যে ১২ লাখ টাকায় কেনার ক্রেতা রয়েছে। দুটি ষাঁড়ের পেছনে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে, এই মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব নয়’আবদুল করিম, খামারি

আবদুল করিম বলেন, ‘অনেক ক্রেতা ষাঁড় দুটি দেখতে খামারে আসছেন। ১৭ লাখ টাকা দাম চেয়েছিলাম। এর মধ্যে ১২ লাখ টাকায় কেনার ক্রেতা রয়েছে। দুটি ষাঁড়ের পেছনে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে এই মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব নয়।’

খামারের পাঁচ শ্রমিক মনির আহমদ, মো.

হোসেন, মো. ফারুক, মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. রুবেল ষাঁড় দুটির পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন। লাল বাদশাহকে ঘাস খাওয়াতে খাওয়াতে মনির আহমদ (৩৪) বলেন, ‘অচেনা লোক দেখলে ষাঁড়টি হুংকার ছাড়ে, শিং নেড়ে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে সাদা বাদশাহ শান্ত প্রকৃতির। পিঠে উঠলেও নড়াচড়া করে না।’ তিনি বলেন, ‘ষাঁড় দুটিকে খামারে আলাদা শেডে রাখা হয়। মশা-মাছির উৎপাত ও অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষার জন্য ফ্যানের নিচে রাখতে হয়। লোডশেডিং হলে জেনারেটরের সাহায্যে ফ্যান চলে।’

খামারের কর্মচারীরা বলেন, প্রতিদিন ১০ কেজি গমের ভুসি, ভুট্টা, খেসারি ও মটর ডাল; ৫ কেজি ছোলা বুটের গুঁড়ার মিশ্রণ, ২০ কেজি ঘাস, ৫ কেজি খড় খাওয়ানো হয় ষাঁড় দুটিকে। খাবারের পেছনে দৈনিক খরচ হয় ১ হাজার টাকার বেশি। তা ছাড়া সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে প্রতিদিন দুই বেলা করে গোসল করাতে হয় ষাঁড় দুটিকে।

শখ করে ষাঁড়ের নাম লাল বাদশাহ ও সাদা বাদশাহ রেখেছেন জানিয়ে খামারের মালিক আবদুল করিম বলেন, দুই বছর আগে ষাঁড় দুটি বাজার থেকে কেনা হয়। তখন ওজন ছিল তিন মণের কাছাকাছি। মোটাতাজাকরণের কোনো ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশি ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ষাঁড় দুটিকে মোটাতাজা করেছেন তিনি।

খামারে কথা হয় উপজেলার সাবরাং এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের সঙ্গে। একটি ষাঁড় কেনার উদ্দেশে তিনি খামারে এসেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয় লাখ টাকায় তিনি লাল বাদশাহকে কিনতে চেয়েছেন। তবে খামারি সাড়ে ৮ লাখের কমে বিক্রি করতে রাজি নন। এত টাকা দিয়ে ষাঁড়টি কিনলে প্রতি কেজি মাংসের দাম ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি পড়বে।

খামারের এই দুটি ষাঁড় ছাড়াও কয়েকটি শেডে আরও ১১০টি গরু ও মহিষ রাখা। খামারি জানান, এর মধ্যে ৪২টি গরু-মহিষ এবারের কোরবানির হাটে বিক্রি হবে। খামার মালিক আবদুল করিম বলেন, সাত বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খামারটি পরিচালনা করে আসছেন তিনি। খামারের কয়েকটি গাভি থেকে নিয়মিত দুধ সংগ্রহ করা হয়। প্রতিবছর খামারের পশু বিক্রি করে অন্তত ২০-৩০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। গত বছর কোরবানির হাটে তিনি ৭৪টি গরু-মহিষ বিক্রি করেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, টেকনাফে এবারের কোরবানির পশুর চাহিদা আছে ৭ হাজার ৬৯৬টি। খামারে বিক্রির উপযোগী পশু প্রস্তুত আছে ৬ হাজার ৭৪১টি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারাধন চন্দ্র সুশীল বলেন, আবদুল করিমের মতো বহু খামারি পশু লালন-পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কোরবানির হাটে মিয়ানমারের চোরাই গরু কিংবা রোগাক্রান্ত পশু যেন বিক্রির জন্য তোলা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল কর ম র ক রব ন র ল ল ব দশ হ ১৭ ল খ র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’

তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’

বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউট

কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।

আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
  • দিনলিপির দর্পণে তাজউদ্দীন আহমদ
  • সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫% আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব বিএনপির
  • পিয়াইন নদীতে ভেসে উঠল নিখোঁজ পর্যটকের লাশ