চিংড়ির মালাইকারী রান্না করে পাক্কা রাঁধুনিতে সেরা সাইমা
Published: 28th, May 2025 GMT
আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল চুলা, হাঁড়িপাতিল। টেবিলে সাজানো নানা পদের সবজি, মসলা। ফ্রিজে রাখা রুই, রুপচাঁদা, চিংড়ি থেকে শুরু করে গরুর মাংস কিংবা আস্ত মুরগি। হুইসেল বাজতেই শুরু হয় রাঁধুনিদের দৌড়। কেউ ঝুড়িতে তুলে নেন শুঁটকি, কেউ মাংস, কেউ মাছ। এরপর চলতে থাকে ৫০ মিনিটে রান্নার ‘পরীক্ষা’।
আজ বুধবার বিকেলে কনফিডেন্স সল্ট-প্রথম আলো ‘পাক্কা রাঁধুনি’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে এ চিত্র দেখা গেল। চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে চিংড়ির মালাইকারি ও বাঁধাকপির পায়েস রান্না করে প্রথম পুরস্কার জিতে নেন রাঁধুনি সাইমা আক্তার। স্বাদে, ঘ্রাণে বিচারকদের মন জয় করায় সর্বোচ্চ নম্বর তুলে নেন তিনি।
বন্দরনগর চট্টগ্রামে তৃতীয়বারের মতো রান্নার এত বড় আয়োজন হলো। এতে অংশ নিতে ৫০০ রাঁধুনি আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে ৮০ জনকে মনোনীত করা হয়। এরপর রেসিপি দেখে ৪০ জনকে দ্বিতীয় পর্বের জন্য নির্বাচিত করা হয়। সেখান থেকে ১০ জনকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য বাছাই করেন বিচারকেরা। বিচারক ছিলেন র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সু শেফ মো.
প্রতিযোগিতায় রাঁধুনিরা বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সব পদ রান্না করেন। রুই মাছের কোরমা, চিংড়ির মালাইকারি, বগুড়ার আলুঘাঁটি, দোমাছা ভুনা, রুই রেজালা, পটোলের দোলমা, লইট্যা শুঁটকি ভুনা, চিংড়ি পোলাও—কী ছিল না চুলায়! বাহারি পদের এসব রান্নার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছিল মিলনায়তনজুড়ে। সেরা তিন রাঁধুনি বেছে নিতে বেগ পেতে হয় বিচারকদের।
চিংড়ি পোলাও রান্না করে দ্বিতীয় হন ফারমিন আজাদ। গরুর মাংসের রেজালা ও মুখরোচক সালাদ বানিয়ে বিচারকদের মন জয় করে নেন জিন্নাত আরা। তিনি অর্জন করেন তৃতীয় পুরস্কার।
রান্নায় ব্যস্ত প্রতিযোগী রাঁধুনিরা। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পোশাক কেনাবেচার কথা বলে ভাড়া নেওয়া হয় বাসাটি
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়া শহরের যে বাসা থেকে আটক করা হয়েছে, সেটি দেড় মাস আগে ভাড়া নেন পেছনের বাড়ির এক দম্পতি। তারা অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার কথা বলে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
বাড়িটির মেসে থাকা কয়েকজন ছাত্র রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য জানান। তবে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
মেসের এক ছাত্র বলেন, মালিকের কাছ থেকে পুরো বাড়িটি তারা (ছাত্র) ভাড়া নিয়েছেন। একজন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন। দেড় মাস আগে পেছনের বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী মিনারা খাতুন (হীরা) আসেন। তারা নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া চান। তারা বলেন, এখানে অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার জন্য পোশাক রাখা হবে এবং তাদের কিছু লোকজন থাকবেন। মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন ছাত্ররা।
আরো পড়ুন:
যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে
কুষ্টিয়ার যে বাড়ি থেকে সুব্রত বাইন আটক হয়েছে
এরপর হেলাল উদ্দিন এই ভবনের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন। ক্যামেরার সংযোগ পেছনে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
ওই ছাত্র আরো বলেন, ভাড়া নেওয়ার কয়েক দিন পর এই বাসায় এক ব্যক্তি আসেন। খুব কম বাসা থেকে বের হতেন তিনি। তার সঙ্গে মেসে থাকা ছাত্রদের কথা হতো না। তার নাম-পরিচয় কেউ জানতেন না।
২০ থেকে ২৫ দিন আগে এক নারীকে নিচতলার এই ফ্ল্যাটে দেখতে পান ছাত্ররা। ওই নারী কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন বলেও ছাত্ররা জানান। তারা জানান, ১০-১২ দিন ধরে এই ভবনের সামনে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কার এসে দাঁড়াত। কিছু লোকের যাতায়াত তারা লক্ষ্য করতেন। তবে, কারো সঙ্গে ছাত্রদের কোনো কথা হতো না।
নিচতলার যে ফ্ল্যাট থেকে সুব্রত বাইনকে আটক করা হয়েছে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গত দেড় মাসে কোনোরকম খাবার রান্না হয়নি। সব খাবার বাইরে থেকে আনা হতো।
মেসে থাকা আরেক ছাত্র জানান, পাঁচ-ছয় দিন আগে আছরের নামাজ পড়তে বের হওয়ার সময় তিনি দেখেন, নিচতলার ওই ফ্ল্যাটের দরজা খোলা এবং সেখানে দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ব্যক্তি ছাত্রকে দেখে দ্রুত ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। আজকে যাকে আটক করা হয়েছে, তিনি সেদিনের ওই ব্যক্তি বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্ররা।
সুব্রত বাইনকে যে ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয়েছে, ঠিক সেই ভবনের পেছনেই মিনারা খাতুন ও হেলাল উদ্দিনের বাড়ি। মিনারা একটি পোশাকের দোকানের মালিক।
তিনি মোবাইলে জানান, তার স্বামীর মাধ্যমে এই ব্যক্তিরা এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। যারা আটক হয়েছেন, তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি। এই নারী জানান, এ ঘটনায় তারা ফেঁসে গেছেন।
মিনারা খাতুন আরো জানান, তার স্বামী হেলাল উদ্দিন ১৭ থেকে ১৮ বছর দুবাই ছিলেন। গত বছরের শেষে বা চলতি বছরের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফেরেন। তার স্বামী জমি কেনাবেচা ও ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা করেন বলেও দাবি করেন তিনি।
দেড় মাস আগে স্বামী মিনারা খাতুনকে জানান, কয়েকজন ব্যক্তি এখানে থাকবে, মিনারা যেন সামনের ভবনের নিচতলাটা ভাড়া নেন। এরপর মেসের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন তারা। এরপর থেকেই ওই ব্যক্তিরা নিচ তলার ফ্ল্যাটটিতে থাকতে শুরু করেন।
মিনারা খাতুন দাবি করেন, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই, এমনকি তাদের আগে কখনো দেখেননি।
স্বামী হেলাল উদ্দিন কোথায় জানতে চাইলে মিনারা খাতুন জানান, তার স্বামী গতরাতে বাইরে গেছেন। কোথায় আছেন, জানেন না।
এদিকে সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীকে আটকের পর ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকা ছাত্ররা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। দুপুরের পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১৮ জন ছাত্রের মধ্যে অন্তত ১০ জন ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ছাত্র বলেন, সকালের পর থেকেই তারা আতঙ্কে ছিলেন। এরপর দুপুরে যখন তারা নিশ্চিত হন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন তাদের এই নিচের ফ্ল্যাটে ছিল, তখনই তারা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এ জন্য পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তারা বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
এই মেসের তৃতীয় তলায় থাকা দীর্ঘদিনের বাসিন্দা শাহীন আলম বলেন, “মেসে থাকা ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাই অনেকেই চলে গেছেন।” তিনি এখানে থাকবেন।
পাশের বাসার বাসিন্দা রোকনুজ্জামান বলেন, “সকালে শব্দ শুনে দেখি, আর্মিরা বাড়িটা ঘিরে রেখেছে। পরে দরজা ভাঙার শব্দ শুনি। জানালা দিয়ে দেখি বাড়ি থেকে দুইজনকে সেনাবাহিনীরা আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে জানতে পারি, তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল।”
তিনি আরো বলেন, “এলাকায় এমন সন্ত্রাসী ছিল এখন তো আমাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ