ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের ৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাট করেই ক্ষান্ত হননি, তারা ব্রোকারেজ হাউজটি বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতা রহমান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমানের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।  

এদিকে আইনি কাঠামো অনুযায়ী তামহা সিকিউরিটিজের দায়-দেনা নিষ্পত্তি এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সহযোগিতা করলেও, বিনিয়োগকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুর রহমান তদন্তসাপেক্ষে  ন্যায়বিচার পেতে গত ২০ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বরাবর আবেদন করেন।   

এর আগে গত ১১ মে ‘দুদকে বিএসইসির চিঠি: তামহার মালিকদের সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ, তদন্তের অনুরোধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি ডটকম। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওবায়দুর রহমান বিএসইসির কাছে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা তুলে ধরতে এবং বিভ্রান্তি দূর করতে চিঠি দেন।  

এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমি তামহা সিকিউরিটিজ কিনতে চেয়েছিলাম। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষকে অগ্রীম টাকাও প্রদান করেছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা তাদের দায়-দেনার তথ্য আমার কাছে গোপন করেছেন। এটি জানার পর অগ্রীম টাকা ফেরত চাইলে তারা জানায়, বিনিয়োগকারীদের টাকা পরিশোধ করে আমাকে প্রতিষ্ঠানটির  শেয়ার বুঝিয়ে দেবে। এ কাজের জন্য তারা আমার কাছে সহযোগিতাও চেয়েছিল, যেটা আইন অনুযায়ী আমি করেছি। এখন তারা আমাকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বুঝিয়ে দিচ্ছে না। টাকাও ফিরিয়ে দিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আমি কমিশনের কাছে ন্যায়বিচার পেতে অনুরোধ জানিয়েছি।”

স্পষ্টীকরণ ও বিভ্রান্তি দূরীকরণ প্রসঙ্গে চিঠিতে ওবায়দুর রহমান উল্লেখ করেন, তিনি রহমান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন স্বচ্ছ ও আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকে তামহা সিকিউরিটিজের দায়-দেনা নিষ্পত্তি ও বিএসইসি'র নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করার জন্য কাজ করছেন। তামহা সিকিউরিটিজের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

হারুনুর রশিদ, পরিচালক শাহনাজ বেগম ও পরিচালক জাহানারা পারভীনের সঙ্গে অন্যান্য বোর্ড অব ডাইরেক্টরসের সম্মতিক্রমে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একটি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি মোতাবেক পরিচালকগণের পক্ষে হারুনুর রশিদকে প্রথমে তিন কোটি এবং পরে আরো দুই কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। 

সে সময় চুক্তি মোতাবেক তামহা সিকিউরিটিজের সমস্ত দায়-দেনা আমাদের কাছে প্রকাশ করতে উক্ত পরিচালকগণ আইনগতভাবে বাধ্য ছিল। কিন্তু তারা অসৎ উদ্দেশ্যে সেগুলো গোপন করে। পরে অডিটের মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত কোম্পানির ৬৫ কোটি টাকার দায়-দেনা আছে যা উক্ত পরিচালকগণ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় জানায়নি এবং এ কাজে তারা দুইটি সফটওয়্যার ব্যবহার করেছে। এটি বাংলাদেশ সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী আইনসম্মত নয়। 

চিঠিতে ওবায়দুর রহমান আরো উল্লেখ করেন, উক্ত পরিচালকগণ বিনিয়োগকারীদের টাকা নিজেরাই তুলে ফেলেছেন এবং গ্রাহকের যে শেয়ার ছিল সেগুলো বিক্রি করে তারা টাকা নিয়ে নিয়েছেন। সত্যি হলো, এ কথা আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান জানত না। মূলত আমরা ভিকটিম। তামহা সিকিউরিটিজের পরিচালকেরা প্রতারণা করেছে এবং আমাদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। 

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর যখন প্রতিষ্ঠানটির কী কী দেনা আছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) জানতে চায়, তখন হারুনুর রশিদ তার ট্রেড সাসপেনশন এবং পুনরায় অডিট করার জন্য আবেদন করে। ৩০ নভেম্বর ডিএসই তামহা সিকিউরিটিজকে চিঠি দেয়, অডিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সেল এবং ট্রান্সফার না করার। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করার জন্য বিএসইসি চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত করে ১০০ কোটির উপরে গ্রাহকের দায় পায়। তামহা সিকিউরিটিজের পরিচালকগণ গ্রাহকের টাকা এবং শেয়ার আত্মসাৎ করেছে বলে রিপোর্টে প্রতিয়মান হয় যা সে সময় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এরপর বিএসইসি, ডিএসই তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণের নামে মামলা করে। 

রাইজিংবিডি ডটকমে প্রকাশিত সংবাদের কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ সম্পত্তি বিক্রয় নিয়ে যে সন্দেহ উত্থাপিত হয়েছে, সেটির বিক্রয় দলিলে ‘পক্ষ ছিলেন না’ উল্লেখ করে চিঠিতে ওবায়দুর রহমান  বলেন, আমি ওই সম্পত্তির সাথে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নই।  যেসব আর্থিক লেনদেনের কথা সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে, তা বাস্তব প্রেক্ষাপটে ছিল তামহা সিকিউরিটিজের গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের জন্য। উক্ত প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন পরিচালকেরা বিএসইসি'র নজরদারির সময় তাদের নিজস্ব ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দ থাকায় আমাকে অনুরোধ করেন, যেন রহমান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের নামে একটি হিসাব খুলে শুধু গ্রাহকের পাওনা পরিশোধে সহায়তা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ধরনের ব্যবস্থায় অনিচ্ছুক থাকলেও, গ্রাহকদের স্বার্থ এবং কমিশনসহ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নির্দেশনার প্রতি সম্মান রেখে আমি সহযোগিতা করেছি। 

ওবায়দুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ বিএসইসি’র

তামহা সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা চলতি বছরের ২৭ মার্চ চিঠির মাধ্যমে কমিশনকে অবহিত করে, এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রির অর্থ মালিকপক্ষ আত্মসাৎ করেছেন এবং এ অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে ওবায়দুর রহমান সহায়তা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। তামহা সিকিউরিটিজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উক্ত সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করবে বলে তাদের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তিপত্র কমিশনে দাখিল করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফিরিয়ে দিতে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি বিক্রির অর্থ মালিকপক্ষের আত্মসাৎ এবং ওবায়দুর রহমানের সহায়তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। 

তামহা সিকিউরিটিজের মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

২০২১ সালে তামহা সিকিউরিটিজ অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে বিনিয়োগকারীর ৮৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে আরো জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করেছেন। ব্রোকারেজ হাউজটি দুটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা ও ভুয়া বিবরণী ও পোর্টফোলিও স্টেটমেন্ট প্রদান করা হতো। হাউজটিতে গ্রহকদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও শেয়ারের বাজার মূল্যের ঘাটতি ৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।

উপরিউক্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএসইসি তামহা সিকিউরিটিজের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেয়। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ ও তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এদিকে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) স্থগিত হওয়া ব্রোকার হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

ঢাকা/তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর প র ক ষ ত গ র হক র ব এসইস প রক শ র জন য অন র ধ কর ছ ন ন র পর র পর চ র সদস ড এসই সহয গ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিতে এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বেধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে অনেক কোম্পানি ব্যর্থ হওয়ায় এবং ওইসব কোম্পানির আবেদনের আলোকে সময়সীমা বাড়িয়েছে বিএসইসি।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে এক বছর সময় দিয়ে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কমপক্ষে এক জন করে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক কোম্পানি এ শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব কোম্পানি থেকে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যার আলোকে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসইসির কমিশনার হিসেবে সাইফুদ্দিনের যোগদান
  • নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
  • নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি
  • সালমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে ‘আজীবন অবাঞ্ছিত’
  • সালমানকে ১০০ কোটি, সায়ানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা
  • বিএসইসির নতুন কমিশনার সাইফুদ্দিন
  • পুঁজিবাজারে বড়-মাঝারি বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিএসইসি
  • ‘পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কাজ করছি’
  • বিএসইসি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে: ডিবিএ সভাপতি