পরীক্ষার গৎবাঁধা কিছু প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া যদি ব্যর্থতার সমার্থক হয় তবে জেনে রাখুন, এমন ফেলমারা কিছু ফেল্টুসই বদলে দিয়েছে মানবসভ্যতা! পৃথিবী বদলে দেওয়া এমন ৫ আলোকিত মানুষকে হাজির করলেন ইমাম হোসেন মানিক
রিচার্ড ব্র্যানসন
মাত্র ১৬ বছরেই স্কুল ছেড়ে দেন বিশ্বখ্যাত এই উদ্যোক্তা, শিল্পপতি ও দানবীর। ১৯৭০-এ তার হাতে প্রতিষ্ঠিত ভার্জিন গ্রুপ এখন পৃথিবীর প্রায় ৪০০ কোম্পানিকে কোনো না কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ শিক্ষাজীবনে তাকে নিয়ে একরকম হালই ছেড়ে দিয়েছিলেন শিক্ষকরা। তার হেডমাস্টার রবার্ট ড্রেসন দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা ভাবতাম হয় সে জেলে যাবে অথবা ধনকুবের হবে। শিক্ষকদের এই বিশ্বাস যে মিথ্যা নয়, তা তিনি ১৬ বছরেই ‘স্টুডেন্ট’ নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করে দেখিয়ে দেন। সেখান থেকে গানের রেকর্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে ভার্জিন রেকর্ডস বলে পরিচিতি পায় বিশ্বে। ২০১৮ সালে ফোর্বস সাময়িকীর হিসাবে রিচার্ড ব্র্যানসন ৫.
সায়মন কোয়েল
আমেরিকান আইডল আর এক্স ফ্যাক্টরের পরিচিত বিচারক সায়মন কোয়েলের মতামতকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য সংগীত দুনিয়া। সংগীতের এই দাপুটে তারকাও ছাত্রজীবনে ছিলেন তলানির দিকে! টেনেটুনে ও-লেভেল শেষ করে ঝরে পড়েন পড়াশোনা থেকে। কাজ শুরু করেন বাবার প্রতিষ্ঠান ইএমআই মিউজিক পাবলিশিংয়ে। এরপর প্রতিভা খুঁজে বেড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেন ট্যালেন্ট স্কাউট হিসেবে। পরে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রতিষ্ঠান ইঅ্যান্ডএস মিউজিক। তবে সবচেয়ে বেশি সফলতা পান বিএমজে রেকর্ডসে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫০ মিলিয়ন রেকর্ড বিক্রি করেন তিনি। এর ৭০টি গান জায়গা করে নেয় ইউএস আর ইউকের টপচার্টে। মিউজিক নিয়ে এক অক্ষর না পড়েও তিনি জায়গা করে নেন এই দুনিয়ার সেরাদের তালিকায়।
বেনেডিক্ট কাম্বার ব্যাচ
শার্লক হোমস আর মার্ভেলের ডক্টর স্ট্রেঞ্জের অভিনেতা কিন্তু ছাত্রজীবনের শুরুতে তেমন খারাপ ছিলেন না। ব্রিটেনের অন্যতম সেরা স্কুল হ্যারোতে শিক্ষাজীবনের শুরু হলেও ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে থাকেন। তিনি নিজেই বলেন, আমি অনেকটা নিজের দোষেই ও-লেভেল পরীক্ষায় খারাপ করেছি। নিজের এমনকি
শিক্ষকদেরও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এমন বাজে রেজাল্ট। এরপর আমার ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এ-লেভেলে ভালো কিছু করতেই হবে। সে সময়টায় নারী আর নেশার পাল্লায় পড়ে বখে যাই। উল্টো গোল্লায় যায় পড়ালেখা। তারপর বাদ পড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। সেই বখে যাওয়া ছাত্রটিই ঘুরে দাঁড়ায়। পায় গোল্ডেন গ্লোব আর অস্কারের নমিনেশন। এখন তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোটাই আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।
জেকে রাউলিং
হ্যারি পটারের লেখক জেকে রাউলিং বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সাহিত্যিকদের একজন। তাঁর বই পড়েনি এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে দামি লেখকও তিনি! তবে এই সফল সাহিত্যিকের শিক্ষাজীবনের অবস্থা ছিল করুণ।
তিনিও ফেল করেছেন একাডেমিক পরীক্ষায়। তাঁর স্বপ্ন ছিল, ভাষাবিদ্যায় অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করবেন। তাঁর এ-লেভেলের বাজে রেজাল্ট তাঁকে আবেদনই করতে দেয়নি অক্সফোর্ডে। তাতে তিনি যে বিচলিত হয়েছেন তা কিন্তু নয়। পরে ঠিকই তিনি নিজ যোগ্যতায় ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ এক্সটারে।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি পৃথিবীর সেরা বই সিরিজ হ্যারি পটার লেখা শুরু করেন। তারপরের ঘটনা তো বারই জানা!
জ্যাক মা
জ্যাক মা বর্তমানে বিশ্বের সফলতম ব্যবসায়ী ও শীর্ষ ধনীদের একজন। অথচ একটা সময় তিনি ব্যর্থতার পর ব্যর্থতার মুখে পড়েছিলেন।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে দেওয়া এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই তাঁর অতীত জীবনের ব্যর্থতা ও ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ছাত্রজীবনে খারাপ রেজাল্টের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি প্রাথমিক পরীক্ষায় দু’বার, মাধ্যমিকে তিনবার, পুলিশ হতে গিয়ে একবার, হার্ভার্ডে ভর্তি হতে গিয়ে দশবার এবং কেএফসিতে চাকরি করতে গিয়ে একবার ফেল করেছি। তবু এই ফেল্টুসই হার্ভার্ডে পড়ার সাহস দেখিয়েছে। কিন্তু পারেননি। শুধু তাই নয়, তাঁর শহরে যখন কেএফসি ব্যবসা করতে আসে, তখন ২৪ জন চাকরির আবেদন করেন। তাদের মধ্যে জ্যাক ছাড়া বাকি ২৩ জনের চাকরি হয়। তবু জীবনের শেষ হাসিটা নিজের সাফল্য দিয়েই হেসেছেন জ্যাক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ক ষ পর ক ষ য় র কর ড জ বন র সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
চরের কাদায় আটকে ছিল দুটি ডলফিন, নদীতে ছেড়ে দিলেন জেলেরা
নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপের চরে জোয়ারের তোড়ে ভেসে আসে দুটি ডলফিন। এরপর আটকে ছিল চরের কাদাপানিতে। মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা এ সময় ডলফিন দুটি দেখতে পান। পরে ওই জেলেরা ডলফিন দুটিকে নদীর গভীর পানিতে ছেড়ে দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ও পার্শ্ববর্তী দমারচরের মধ্যবর্তী এলাকায় ডলফিন দুটি আটকা পড়ে। নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা এলাকার বাসিন্দা মো. বেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে ওই এলাকায় মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন আশরাফ উদ্দিনসহ স্থানীয় কয়েকজন জেলে। তাঁরা হঠাৎ দেখতে পান, চরের কাদাপানিতে দুটি ডলফিন আটকে রয়েছে। পরে তাঁরা ডলফিন দুটিকে নদীর গভীর পানিতে চলে যেতে সহায়তা করেন।
মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ও দমারচরের মাঝখানে ভাটার সময় নদীর পানি অনেকটাই কমে যায়। দমারচরে যাঁরা চাষাবাদ করেন, ওই সময়টায় তাঁরা হেঁটেই নদী পার হন। আবার ভাটার সময় জেলেরা ওই এলাকায় মাছ ধরতে যান। গতকালও মাছ ধরতে গিয়ে জোয়ারের সঙ্গে আসা ডলফিন দুটি দেখেছেন জেলেরা। তিনি আরও বলেন, জেলে আশরাফ উদ্দিন ডলফিন দুটির ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছেন। এরপর আজ রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়।
জানতে চাইলে বন বিভাগের নিঝুম দ্বীপ বিটের কর্মকর্তা মো. সোহাগ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দেখার পর তাঁরা এ বিষয়ে খোঁজ নেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে জেনেছেন, দুটি ডলফিনকেই নদীর গভীর পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।