শনিবার থেকে নতুন টাকা পাবেন গ্রাহকরা
Published: 1st, June 2025 GMT
নতুন টাকা কিছু ব্যাংকে আজ সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের শাখায় সোমবার (২ জুন) থেকে গ্রাহকরা নতুন টাকা পাবেন। তবে সীমিত পরিসরে নতুন টাকা বিনিময় হবে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার (১ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি গ্রাহক হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তাই আজ কয়েকটি ব্যাংকে সীমিত পরিমাণে নতুন নোট সরবরাহ করা হয়েছে। এসব নোট সোমবার বা তার পরদিন থেকেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে শুরু করবে।”
আরো পড়ুন:
নতুন টাকা বিনিময় শুরু, আসল-নকল চিনবেন যেভাবে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধ, তাই লভ্যাংশ দেবে না ১০ ব্যাংক
প্রথম ধাপে ২০, ৫০ এবং ১০০০ টাকার নতুন নোট ছাড়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে আরো নতুন নোট ছাপানো হবে এবং সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো হবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, খুব শিগগিরই আরো চার ধরনের নতুন নোট বাজারে ছাড়া হবে। এসব নোটের অধিকাংশে মসজিদের ছবি রয়েছে। নতুন নোটগুলো পর্যায়ক্রমে ছাপা ও বিতরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মোট ১১টি ব্যাংকের মাধ্যমে এই নতুন টাকা বিতরণ করা হবে। এসব ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা থেকে গ্রাহকরা নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন।
যেসব ব্যাংকে নতুন টাকা বিনিময় করা যাবে সেগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি ঈদ উৎসবের আগে বাজারে নতুন নোট ছাড়ে। যাতে মানুষ স্বচ্ছ, আকর্ষণীয় ও ঝকঝকে টাকা দিয়ে উপহার লেনদেন করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, দ্রুত নতুন নোট বাজারে আসবে। এই নতুন নোটগুলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সব নোটে রয়েছে নতুন গভর্নর আহসান হাবিব মনসুরের স্বাক্ষর। সব নতুন নোট ডিজাইন করা ও ছাপানো সময় সাপেক্ষ বিষয় হওয়ায় এবার সীমিত পরিসরে নোট বাজারে আসছে।
ঢাকা/এনএফ/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নত ন ট ক নত ন ন ট
এছাড়াও পড়ুন:
দুধের দাম বাড়ায় পুষ্টিতে টান
দেশে গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। আড়ং, প্রাণ, মিল্ক ভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের দুধের দাম বাড়িয়েছে প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে আড়ংয়ের এক লিটার পাস্তুরিত দুধের দাম ১০৫ টাকা, মিল্ক ভিটার এক লিটার দুধের দাম ১০০ টাকা। দাম বাড়ায় অনেক ভোক্তা এরই মধ্যে তাদের দৈনিক দুধ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন। দুধের দাম বাড়ায় এই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক পরিবার।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। এ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আজ রাজধানীর ফার্মগেটের কেআইবি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
জানা গেছে, লোকসানের মুখে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই দাম বাড়ানোর পথে হেঁটেছে মিল্ক ভিটা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খামারিদের কাছ থেকে দুধের ক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়েছে। গড়ে ৪ শতাংশ ফ্যাটযুক্ত দুধের দাম ৫৮ টাকা প্রতি লিটার, পরিবহন খরচসহ ৬১ টাকার বেশি। প্রক্রিয়াজাতকরণসহ অন্যান্য খরচ যোগ করে আমাদের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৮২ টাকার ওপরে। তবে পরিবেশকদের কাছে আমরা দুধ বিক্রি করছি ৭৮ টাকায়। ফলে প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
দুধের দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে প্রাণের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘খামারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে দুধের দাম বাড়াতে হয়েছে। যেটা আমরা ভোক্তা পর্যায়ে বাড়িয়েছি। খামারিদের দাবি ছিল, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। সে জন্য তাদের লোকসান হচ্ছে। তারা বাড়তি দাম চাচ্ছিলেন, যে কারণে আমাদেরও বিক্রির দাম বাড়াতে হয়েছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে দুগ্ধ খামারির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হতো প্রায় ৫০ লাখ ৭০ হাজার টন। এর পরের তিন অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৭২ লাখ টনের বেশি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে হয় ৯২ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি বেড়ে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টন আর ২০২৪ সালে ১ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার টন হয়েছে। বিপরীতে দেশে বছরে তরল দুধের চাহিদা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টনের বেশি। বাকি চাহিদা মেটানো হয় গুঁড়া দুধ আমদানি করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ৯ লাখ টন দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুত করছে। বাকি দুধ খামারিরা মিষ্টি তৈরির দোকান এবং খোলাবাজারে বিক্রি করেন।
দাম নিয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আতিক ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আল মাহমুদ বলেন, আমরা মিল্ক ভিটাকে দুধ সরবরাহ করি। আমার খামারে দৈনিক ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ লিটার দুধ পাই। এগুলো ৫৮ থেকে ৬১ টাকার মধ্যেই সাধারণত বিক্রি করি। তবে বাজার কখনও কখনও নেমেও যায়।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার ফরিদপুর, ভাঙ্গুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিরা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের দাম বাড়ালেও খামারিদের কাছ থেকে ক্রয়মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। অনেক খামারি বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা গো-খাদ্যের খরচ মেটাতে পর্যাপ্ত নয়।
শাহজাদপুরে দুগ্ধ খামারি আছেন প্রায় ৩০ হাজার। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় ৫ লাখ লিটার। খামারির কাছ থেকে বড়-ছোট দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান দিনে সাড়ে ৩ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ, ইগলু ও আকিজের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র রয়েছে শাহজাদপুরে।
উল্লাপাড়ার পশ্চিমপাড়া গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুধের টাকা দিয়ে গরুর খাবার কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। খাবারের দামের চেয়ে দুধের দাম পেলে কিছুটা আয় হতো।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য তো বটেই, বড়দের খাদ্য তালিকায়ও দুধ থাকা উচিত। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে দুধ। এতে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। দাম বাড়ায় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে দুধের গ্রহণ কমে যাচ্ছে; যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক
ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুধ শিশুদের প্রয়োজনীয় খাবার। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে না আনলে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক খামারিদের জন্য দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সুবিধা বাড়াতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পরিবহন সমস্যা সমাধান ও পণ্য বহুমুখীকরণে। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার, প্রতিষ্ঠান ও খামারিদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তা না হলে পুষ্টি সংকট ও খামারিদের লোকসান আরও বাড়বে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সুফিয়ান বলেন, খামারিদের ঘাস চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা গো-খাদ্যের খরচ কমাতে সহায়ক।