বৃহস্পতিবার রংপুরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা-অগ্নিসংযোগের পর শনিবার দলটির বরিশাল অফিসেও হামলা-লুটপাট হলো। সমকালের খবর অনুসারে, বৃহস্পতিবার জি এম কাদের ঢাকা থেকে রংপুরে আসেন। সন্ধ্যায় তিনি নগরীর সেনপাড়ায় স্কাইভিউ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাত ৯টার দিকে একদল লোক ওই বাসায় হামলা চালায়। জাপা নেতারা এ হামলার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাকর্মীর দিকে আঙুল তুলেছেন। অন্যদিকে, এ হামলার প্রতিবাদে সংঘটিত শনিবার বরিশাল নগরীতে জাপার বিক্ষোভ মিছিলেও হামলা চলে। সমকালের খবর, এ সময় জাপার পাল্টা হামলায় গণঅধিকার পরিষদের জেলা এবং মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। আবার এ হামলার প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতাকর্মী রাতে শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে। মিছিলটি ফকিরবাড়ি সড়কে ঢুকে জাপা কার্যালয় ভাঙচুর করেছে।
৫ আগস্ট-পরবর্তী জাতীয় পার্টির ওপর হামলা কয়েকবারই হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত দলটির প্রধান কার্যালয়ে গত ৩১ অক্টোবর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায়ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের নাম এসেছিল। প্রশ্ন হতে পারে, জাপার ওপর বারবার হামলা কেন? গণঅধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরই বা দলটির ওপর এত ক্ষোভ কেন?
হামলাকারীদের বক্তব্য, জাপা আওয়ামী লীগের দোসর– যাকে তারা ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে মনে করেন, যদিও জাপা আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ঘোরতর সমর্থক ছিল। সে সময় যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তারও কড়া নিন্দা করেছে দলটির নেতারা। সম্ভবত, দলটির সেই ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবেই ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকার বিদায় নেওয়ার পর সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে জাপা নেতারাও ছিলেন। একই দিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও ছাত্রনেতাদের বৈঠকেও দলটির প্রতিনিধি ছিলেন। এমনকি ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বৈঠকেও তারা ছিলেন। মূলত রাজনীতিকদের সঙ্গে ড.
একই সমর্থক-ভিত্তির দাঁড়িয়ে থাকায় বিগত সময়ে বিএনপির সঙ্গে জাপার খিটমিট লেগেই ছিল। অনেকের অভিমত, একই কারণেই জাপাকে গণঅধিকার পরিষদ ও নবগঠিত এনসিপি চক্ষুশূল মনে করে। দল তিনটিই একপ্রকার মুসলিম জাতীয়তাবাদের ওপর গুরুত্ব দেয়, ফলে সমর্থক বা ভোটার নিয়ে এদের মধ্যে টানাটানি থাকাই স্বাভাবিক। প্রসঙ্গত, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি-উভয়েই নতুন দল, যথাক্রমে ২০১৮ ও ২০২৪-এর কোটা আন্দোলনের ফসল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এনসিপিরই পূর্বসূরি। বাঙালি জাতীয়তাবাদবিরোধী বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শিবিরে জায়গা পেতে হলে দু’দলেরই জন্য জাপা হতে পারে সহজ শিকার।
তবে এটাও সত্য যে, গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রাজনীতির ময়দানে বড় খেলোয়াড়রা সবাই এক শিবিরভুক্ত হওয়ায় দেশে এখন বিরোধী দল নাই বললেই চলে। জাপার কর্মকাণ্ড কিছুটা হলেও সেই অভাব পূরণ করছে। বিশেষ করে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের যেভাবে প্রতিটি ইস্যুতে বেশ শক্ত অবস্থান গ্রহণ করছেন, তা নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এটা সত্য, দলটির জন্ম সেনাছাউনিতে, এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ। ১৯৯০ সালে এ দলটিকেও গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। ক্ষমতা ছাড়ার পরও দলটি ক্ষমতারই আশপাশে থেকেছে। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনে প্রথমে সরকারের অংশ হিসেবে এবং পরে সংসদে বিরোধী দল হিসেবেও দলটি ক্ষমতারই আশপাশে থেকেছে। বলা যায়, প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম জাপা প্রকৃত বিরোধী রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছে। এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে জাপাও অচিরেই গণতান্ত্রিক দলের শিবিরভুক্ত হতে পারে।
যদি বলা হয়, আলোচ্য হামলার মধ্য দিয়ে দলটির একপ্রকার মজলুম ভাবমূর্তি দাঁড় করিয়ে জাপাকে সেই পথেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তাহলে হয়তো ভুল হবে না। তবে রাজনীতিতে সংঘাত-হামলা আদৌ কাম্য নয়। সবাই সবার রাজনীতি করার অধিকার পাক, এই কামনা আমাদের।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ এম ক দ র র জন ত র জন ত র ওপর আগস ট সরক র ক ষমত দলট র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় জুলাই হত্যার বিচার ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের আকুতি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় জহির রায়হান মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
জাবি ছাত্রদলের ১৫ নেতাকে অব্যাহতি
এতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ১০ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এসব শহীদরা হলেন, আলিফ আহম্মদ সিয়াম, শ্রাবণ গাজী, শাইখ আস-হা-বুল ইয়ামিন, নাফিসা হোসেন মারওয়া, সাফওয়ান আখতার সদ্য, মো. কুরমান শেখ, ছায়াদ মাহমুদ খান, নিশান খান, আস-সাবুর ও সুজন মিয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর শহীদদের স্বরণে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখানো হয়। পরে শহীদদের স্বীকৃতি স্বরূপ সংবর্ধনা, সনদ ও স্মারক প্রদান করা হয়।
শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি ১ বছর হতে চললো। কিন্তু হত্যাকারীদের বিচার এখনো নিশ্চিত হয়নি। আপনারা শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এ চেয়ারে বসেছেন। ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করুন।”
শহীদ শ্রাবণ গাজীর পিতা মো. মান্নান গাজী বলেন, “আমাদের সন্তানরা তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু হাসাপাতালে যারা আহত আছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।”
শহীদ নাফিসা হোসেনের মামা মো. হজরত আলী নাফিসার শহীদ হওয়ার বর্ণনা করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি জুলাই শহীদদের পরিবারের পুর্নগঠন এবং শহীদদের নামে হল, সড়ক বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের প্রস্তাব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের স্বরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে যেসব দাবি করা হয়েছে, আমি প্রশাসনের একজন হয়ে তা আগামী সিন্ডিকেট সভায় তুলব।”
তিনি বলেন, “আমি চাই আমাদের এখানে যেহেতু কিন্ডারগার্টেন, স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করা হোক। এ বিষয়ে আমরা সিন্ডিকেটে আলোচনা করব। একইসঙ্গে জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এর আগে, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে অদম্য-২৪ স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন শিক্ষকরা।
গত ১৪ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বরণ ও ধারণ করতে মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী