ভালো উদ্যোগের পাশাপাশি বড় চ্যালেঞ্জও আছে
Published: 2nd, June 2025 GMT
বড় একটা অভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এ জন্য বাজেট নিয়ে প্রত্যাশা অনেক বড় ছিল। তবে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে একটা ভঙ্গুর অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে বাজেট ঘোষণা করতে হয়েছে।
বাজেটে কিছু ভালো উদ্যোগের পাশাপাশি বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর কমেছে। বিশেষ করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কর কম হবে। পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে করের পথনকশা ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আমরা অনেক দিন ধরেই প্রত্যাশা করছিলাম। এতে ব্যবসায়ীরা নিজেরা প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাবেন। জানতে পারবেন পরের বছর কী পরিমাণ কর দিতে হবে।
নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে এই বরাদ্দ এক হাজার কোটি টাকা হতে পারত। বাংলাদেশের তরুণদের সংখ্যা অনেক। এই তরুণদের কাজে লাগাতে পারলে দেশের চেহারা বদলে যেতে পারে। আবার অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে কর বসানো হয়েছে। এটা উল্টো হলো, একদিকে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করার ঘোষণা দিলাম, অন্যদিকে অনলাইন ব্যবসায়ের ওপর কর বসালাম। যেহেতু তরুণেরা এখন অনলাইন দিয়েই ব্যবসা শুরু করেন, সেহেতু বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
এদিকে কেন্দ্রীয় বন্ডেড ওয়্যারহাউস গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে পোশাকের পাশাপাশি অন্যদেরও সুযোগ হবে। তবে আবার রপ্তানির নানা ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি ও আরোপ করা হয়েছে। এমন দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা দরকার। আমেরিকা যেভাবে কর আরোপ করছে, সে জন্য সরকারের উচিত এখন রপ্তানিকারকদের পাশে দাঁড়ানো। তাহলে তাঁরা সাহস পাবেন এবং ব্যবসা বাড়াবেন।
অগ্রিম কর নিয়ে আপত্তি নেই, তবে সমস্যা হলো বছরের শেষে যা কর হয়, তা সমন্বয় করা হচ্ছে না। এতে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর হলেও অনেক সময় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে হয়। অতিরিক্ত যে কর দেওয়া হয়, তা ফেরত আসে না। এ জন্যই অনেকে কর ফাঁকি দেন।
মূল্যস্ফীতি এখন বেশি, খরচ অনেকে বেড়ে গেছে। মুদ্রা ৩০ শতাংশের মতো মান হারিয়েছে। এই সময়ে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো দরকার ছিল। বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজন মানুষের হাতে টাকা দেওয়া, যাতে তাঁরা খরচ করতে পারেন। তাহলে কর আদায়ের হারও বাড়বে। নিশ্চয়ই সরকার মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এই পথে যাচ্ছে না।
কর আহরণে বড় লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য এক লাখ কোটি টাকা বেশি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এই সময়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। খুচরা পণ্য বিক্রি ১৫ শতাংশ কমেছে। ফলে করদাতারা যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
— আবুল কাশেম খান, সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫