ছেলের প্রতি একজন বাবার ভালোবাসা ও একটি সাইকেলের গল্প
Published: 7th, June 2025 GMT
সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে একজন বাবা কী না করেন! গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর রাজু মিয়া (৫৫) প্রমাণ করলেন, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ থাকলে অভাব কোনো বাধা হতে পারে না।
রাজু মিয়ার গল্পটা এ রকম—অভাবের কারণে ছেলের শখের বাইসাইকেল কিনে দিতে পারেননি। ঢাকায় গিয়ে আড়াই মাস রিকশা চালিয়ে দুই হাজার টাকায় কিনে নেন একটি পুরোনো বাইসাইকেল। কিন্তু সেটি বাড়ি নেওয়ার মতো পরিবহন খরচ ছিল না তাঁর। তাই রাজধানী ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে যাত্রা করেন গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের তালুকজামিরা কবিরাজপাড়া গ্রামে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সাইকেলটি তুলে দেন ছেলের হাতে।
ছেলের শখ আর শখপূরণ—এর মাঝখানে আছে এক অন্য রকমের এক গল্প। গল্পটি হয়তো অজানাই থেকে যেত। যদি না ঈদের আগে তাঁর এই বাড়ি ফেরা নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতো।
রাজু মিয়ার এই গল্পের বিস্তারিত জানতে আজ শনিবার ঈদের দিন বিকেলে পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নে তালুকজামিরা কবিরাজপাড়া গ্রামে যান এই প্রতিবেদক। সেখান গিয়ে দেখা গেল, চারদিকে আবাদি জমি। মাঝখানে ছোট্ট দুটি টিনশেড ঘর। তার মধ্যে একটি জরাজীর্ণ। একটি ঘরে থাকে রাজু মিয়ার এক ছেলে ও মেয়ে। জরাজীর্ণ ঘরটিতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রাজু মিয়া। তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কোনো রাস্তাও নেই। বাঁশঝাড় ও অন্যের জমির আইল দিয়ে যেতে হয় বাড়িতে।
অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন রাজু মিয়া পেশায় দিনমজুর। প্রায় তিন শতক বসতভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। এলাকায় কখনো দিনমজুরি করেন, কখনো রিকশা চালান। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। একমাত্র ছেলে রেজওয়ান মিয়া এ বছর পলাশবাড়ীর তালুকজামিরা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
রাজু মিয়ার সাইকেলের গল্প তাঁর এই ছেলেকে ঘিরে। রেজওয়ান হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করত। তার কষ্ট দেখে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মামা রবিউল ইসলাম নিজের বাইসাইকেলটি ভাগনেকে উপহার দেন। এই সাইকেলে চলছিল তার বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া। রেজওয়ান তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। একদিন তার সাইকেলটি বিদ্যালয় থেকে চুরি হয়ে যায়। তখন সে বাবার কাছে একটি বাইসাইকেল চায়। কিন্তু দিনমজুর বাবার সামর্থ্য হয়ে ওঠেনি ছেলেকে সাইকেল কিনে দেওয়ার।
রাজু মিয়া জানালেন, গত রমজান মাসে তিনি কাজের খোঁজে ঢাকায় যান। গিয়ে ওঠেন তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ার একটি মেসে। সেখানে থেকে ভাড়ায় রিকশা চালানোর কাজ বেছে নেন। প্রতিদিন উপার্জন হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে প্রতিদিন রিকশাভাড়া, থাকা–খাওয়াসহ ৭৫০ টাকা খরচ হয়ে যেত। যা বাঁচত তা থেকে কয়েক দিন পরপর বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। আর ছেলের সাইকেল কেনার জন্য কিছু কিছু করে টাকা সঞ্চয় করতেন। ঈদুল আজহার আগে তাঁর সঞ্চয় হয় ৪ হাজার ৩০০ টাকা। নাখালপাড়া থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো বাইসাইকেল কেনেন।
কিন্তু সাইকেলটি বাড়ি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিপত্তি বাধায় আর্থিক অসংগতি। রাজু মিয়া জানান, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নাখালপাড়া থেকে সাইকেলটি চালিয়ে ঢাকার আবদুল্লাহপুরে যান। সেখানে গাইবান্ধাগামী বাসে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাসের সুপারভাইজার সাইকেলটির জন্য দুই হাজার টাকা ও তাঁর ভাড়া বাবদ তিন হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা তাঁর কাছে নেই। কম টাকায় তাঁকে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ কেউ রাখেনি। ট্রাকচালক ও পিকআপভ্যানের চালকদের কাছেও ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। পথে বিপত্তি বাধে যমুনা সেতুতে। সাইকেল নিয়ে সেতু পারাপারের নিয়ম নেই। সেখানে বাসের সুপারভাইজার, ট্রাকচালক ও পিকঅ্যাপ ভ্যানের চালকদের অনুরোধ করেন তাঁকে সেতু পার করে দিতে। কিন্তু কেউ তাঁর কথায় রাজি হননি। পরে একটি ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে ট্রাকচালক তাঁকে যমুনা সেতু পার করে দেন। তবে এ জন্য তাঁকে দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা।
এরপর রাজু মিয়া আবার সাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বগুড়ার চারমাথা থেকে মাটিডালির মাঝখানে সেনাবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে তাঁকে থামানো হয়। তখন সাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার গল্প শুনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে একটি ট্রাকে তুলে দেন। ট্রাকটি ভোররাতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রাজু মিয়াকে নামিয়ে দেয়। গোবিন্দগঞ্জে কিছু সময় কাটানোর পর সাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বাড়ি পৌঁছে ছেলের হাতে তুলে দেন সাইকেলটি।
সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে রাজু মিয়ার কথেপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
রাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেলটা ও তেইশ শ ট্যাকা নিয়্যা ঢাকাত থাকি রওনা দিচিলাম। পথোত যমুনা বিরিজ পার হওয়া, টেরাক ভড়া ও খাওয়া মিলি তেরো শ ট্যাকা গেচে। খালি এক হাজার ট্যাকা নিয়্যা বাড়িত আচ্চি। ত্যাক দিয়্যা চাউল ও সোংসারের জিনিসপাতি কিনচি। কিন্তু ঈদোত খাবার জন্নে গোশত কিনব্যার পাই ন্যাই। ঈদের দিন মানসে কিচু গোশত দিচে, তাক খামো। হামার কসটো হোক, কিনতু ব্যাটা সাইকেলকোনা পায়্যা খুবি খুশি হচে। তাতেই হামি খুশি। কষ্ট হলেও ব্যাটাক আরও নেকাপড়া করামো।’
সাইকেল পেয়ে খুব খুশি রেজওয়ান। সাইকেল হাতে পেয়ে প্রথমেই বড় বোনের বাড়ি যায়, এরপর নানার বাড়ি। আজ ঈদের দিনেও সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুর বেড়িয়েছে সে।
রেজওয়ান জানাল, তার জন্য বাবার ওই ত্যাগস্বীকার সে কখনো ভুলবে না। লেখাপড়া করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সে।
‘আমার বাবার মতো বাবা সবারই হোক। বাবাকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।’ বলল ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চাওয়া রেজওয়ান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জওয় ন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প ও মাস্কের মধুর সম্পর্কে বিচ্ছেদ কেন, কী হবে এবার
একজন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যজন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। বন্ধুত্বের সম্পর্ক দুজনের। বছরের পর বছর ধরে দুজনের বন্ধুত্বে উত্থান–পতন দেখা গেছে। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ইলন মাস্ক যখন সরকারি দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখনো তাঁদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ছিল। তবে কিছুদিন ধরেই সম্পর্কে চিড় ধরার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সম্পর্কের সেই টানাপোড়েন যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর ও ব্যয় বিলকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনের নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধুত্বের এই টানাপোড়েন। এটা এত দূর পর্যন্ত গিয়েছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসনের কথাও এসেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাস্ক একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। এসব পোস্টে ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। প্রমাণ না দিলেও মাস্ক দাবি করেছেন, ট্রাম্প ‘এপস্টেইন ফাইল’–এ আছেন।
‘এপস্টেইন ফাইল’ হলো যৌন অপরাধের মামলায় বিচারাধীন অবস্থায় আত্মহত্যা করা জেফরি এপস্টেইনের মামলাসংক্রান্ত নথিপত্র। এসব নথিতে জেফরি ও তাঁর সহযোগীদের ভ্রমণের নথি, কাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন—এসবের বিস্তারিত আছে। এপস্টেইন ফাইলের কিছু অংশ গোপন রাখা হয়েছে। তাই এটা নিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতূহল আছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বেরও জন্ম দিয়েছে।
ডিওজিই প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। তাঁর বিদায় উপলক্ষে ওভাল অফিসে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মাথায় কর ও ব্যয়সংক্রান্ত বাজেট বিলকে কেন্দ্র করে দুজনের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে।এদিকে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফিউসিলেডে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, তিনি মাস্ককে তাঁর হোয়াইট হাউসের ভূমিকা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। সেই সঙ্গে বিলিয়নিয়ার কোম্পানিগুলোকে দেওয়া সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তিগুলো কাটছাঁট করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন হলো—বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ট্রাম্প ও সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্কের বন্ধুত্বে কীভাবে ফাটল ধরল? এখন এর পরিণতি কী হতে পারে?
মধুচন্দ্রিমার সময়
ট্রাম্প ও মাস্কের বাগ্যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগেও তাঁদের ‘অবিচ্ছেদ্য রাজনৈতিক শক্তি’ মনে করা হতো। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে দ্বিতীয় মেয়াদে জেতাতে প্রায় ২০ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন মাস্ক। ট্রাম্পও তাঁর প্রশাসনে মাস্ককে যুক্ত করে নেন। সরকারি ব্যয়ে কাটছাঁট করতে নবগঠিত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব পান মাস্ক।
নতুন এই প্রতিষ্ঠানের (ডিওজিই) নামটিও ধনকুবের মাস্কের পছন্দের একটি ইন্টারনেট মিম থেকে নেওয়া বলে মনে করা হয়। ২০২০ সালের দিকে কুকুরের এই মিম বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের একেবারে শুরুর সপ্তাহগুলোয় তাঁর বন্ধু মাস্ককে প্রশাসনের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিবেচনা করা হচ্ছিল। এ নিয়ে জনগণের মধ্য থেকে সমালোচনাও কম হয়নি। মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিওজিই ফেডারেল সরকারের হাজার হাজার কর্মীকে বরখাস্ত করে। বন্ধ করা হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডিও রয়েছে।
ওই সময় মাস্ক এতটাই ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন যে ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই তাঁকে ‘প্রেসিডেন্ট ইলন’ বলে ডাকতে শুরু করেন। তখন ট্রাম্প ও মাস্ক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে গেছেন। নিজেদের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ফক্স নিউজকে পাশাপাশি বসে সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প ও মাস্ক। একে অপরকে প্রশংসা করেন তাঁরা।
মাস্কের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তিনি একজন নেতা।’ প্রত্যুত্তরে মাস্ক বলেছিলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টকে ভালোবাসি। আজ এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই।’
এরই মধ্যে মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকসহ মাস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ‘বাজেটে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাশ্রয় করার সবচেয়ে সহজ উপায় ইলনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিল করা।’দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মাস্ক কয়েক বছর ধরে ডানপন্থী মনোভাব পোষণ করতে শুরু করেন। এ সময় থেকে তিনি ডেমোক্র্যাট ও প্রগতিশীলদের সমালোচনা করতেও শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে মাস্কের এমন মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি টুইটারের নাম বদলে ‘এক্স’ রাখেন।
মাস্ক অনিয়মিত অভিবাসনের বিরোধিতা ও বাক্স্বাধীনতার ওপর নজরদারির প্রচেষ্টা হিসেবে এক্সকে ব্যবহার করতে শুরু করেন। বিশেষ করে পরিচয়ের রাজনীতি ও করোনা মহামারির সময় এটা প্রকটভাবে দেখা যায়। মাস্ক রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে একসময় ট্রাম্পের সমালোচনাও করেছেন। এক্সে লিখেছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের সিইও হওয়ার জন্য ট্রাম্প বেশ বয়সী একজন ব্যক্তি। এমনকি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যও।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতার লড়াইয়ে ট্রাম্পের রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ রন ডিস্যান্টিসকে প্রাথমিক সমর্থন দিয়েছিলেন মাস্ক। এমনকি ফ্লোরিডার গভর্নর নির্বাচনের প্রচারেও রনের সমর্থনে এক্সে পোস্ট দিয়েছেন মাস্ক।
পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী প্রচারের সময় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের ওপর হামলা হয়। প্রাণে বেঁচে যান ট্রাম্প। তখন মত বদলান মাস্ক। জানান, তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দেবেন। পরে ট্রাম্পের প্রচার সভায় হাজির হন মাস্ক।
বিরোধের শুরু
এভাবেই প্রকাশ্যে শুরু হয় ট্রাম্প ও মাস্কের বন্ধুত্ব। এর পরের ঘটনা সবার জানা। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি সরাসরি প্রশাসনে যুক্ত করে নেন মাস্ককে। তবে গত এপ্রিলে মাস্ক জানান, তিনি ডিওজিইতে কম সময় দেবেন। আর মে মাসে এসে মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনের কর ও ব্যয় প্রস্তাবনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
সম্প্রতি ট্রাম্পের কর ও ব্যয় বিলকে ‘জঘন্য’ বলে কটাক্ষ করেন মাস্ক। তাঁর ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখুন, ইলনের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। জানি না সেটা আর থাকবে কি না।’
মাস্ককে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভীষণ হতাশ। কারণ, এখানে উপস্থিত অন্য যে কারও চেয়ে তিনি এ বিলের ভেতরের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ভালো জানতেন। হঠাৎই এটি নিয়ে তাঁর সমস্যা শুরু হয়েছে।’ তবে ট্রাম্পের এ দাবিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মাস্ক।
ডিওজিই প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। তাঁর বিদায় উপলক্ষে ওভাল অফিসে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মাথায় কর ও ব্যয়সংক্রান্ত বাজেট বিলকে কেন্দ্র করে দুজনের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এখন কী হবে
ট্রাম্প ও মাস্কের বন্ধুত্বের টানাপোড়েনে এখন কী হতে পারে, সেটা স্পষ্ট নয়। রিপাবলিকানদের মধ্যে মাস্ক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। যদিও তাঁর রাজনৈতিক উত্থান অনেকটাই ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত ধরে। কিন্তু এখন তিনি ডেমোক্র্যাট আর ট্রাম্পের অনুগত—উভয় পক্ষের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে যেতে পারেন।
আরও পড়ুনএবার প্রকাশ্যে বিবাদে জড়ালেন ট্রাম্প ও মাস্ক৭ ঘণ্টা আগেঅন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফৌজদারি অভিযোগসহ সাধারণ মানুষের কাছে কেলেঙ্কারি থেকে বেঁচে থাকার রেকর্ড রয়েছে। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহারের স্পষ্ট ইচ্ছাও দেখিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর ডেমোক্রেটিক পূর্বসূরি জো বাইডেনের প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এরই মধ্যে মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকসহ মাস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ‘বাজেটে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাশ্রয় করার সবচেয়ে সহজ উপায় ইলনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিল করা।’
আরও পড়ুনএবার ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমালোচনায় মাস্ক, কর বিলকে বললেন ‘জঘন্য’০৪ জুন ২০২৫মাস্কও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প তাঁর একটি ইচ্ছার কথা জানান। তিনি বলেন, মঙ্গল গ্রহের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা দেখার অভিপ্রায় রয়েছে তাঁর। কিন্তু গতকাল মাস্ক বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য স্পেসএক্সের রকেট ব্যবহারের যে উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে, তিনি তা বাতিল করার পরিকল্পনা করছেন।
মার্কিন সিনেটে ট্রাম্পের সই করা কর ও ব্যয় বিল আটকে দিতে আর্থিক খাতের রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারেন মাস্ক।
আল–জাজিরা থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন অনিন্দ্য সাইমুম ইমন
আরও পড়ুনইলন মাস্কের মিত্রকে নাসার প্রধান করছেন না ট্রাম্প, ঘোষণা হবে নতুন নাম০১ জুন ২০২৫আরও পড়ুনইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি ট্রাম্পের৭ ঘণ্টা আগে