শহরে-গ্রামে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন কর্মজীবী নারীরা। কেউ চাকরি করে, কেউ নিজে কোনো উদ্যোগ নিয়ে। এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে বংশপরম্পরায় নানা ধরনের হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকেন নারীরা। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই বছরের পর বছর সে কাজ করে যান তাঁরা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার টিলাগাঁও তেমনই একটি গ্রাম। ছোট এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠান যেন একেকটি কুটিরশিল্পের কর্মশালা। নারীরা এখানে বংশপরম্পরায় বাঁশ-বেতের চাটাই বুনে জীবন ধারণ করেন। একদিকে ঐতিহ্য, অন্যদিকে দারিদ্র্যের বাস্তবতা—এ দুইয়ের টানাপোড়েনে এখনো টিকে আছে এই হস্তশিল্প। কিন্তু টিকে থাকাটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাটাই বোনার কাজ গ্রামীণ নারীদের জন্য শুধু আয়ের উৎস নয়, এটি তাঁদের আত্মমর্যাদার প্রতীকও। মরিয়ম বিবির মতো অনেকেই স্বামী হারানোর পর সন্তানদের মানুষ করতে এই কাজ আঁকড়ে ধরেছেন। কিন্তু পুঁজির সংকট, কাঁচামালের অপ্রাপ্যতা ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন মহাজনের দয়ায় চলতে। এতে শ্রমের ন্যায্যমূল্য তো পাচ্ছেনই না, বরং একধরনের ঋণচক্রে আটকে পড়ছেন।
এই নারীরা কোনো করপোরেট অর্থনীতির সুবিধাভোগী নন। তাঁরা সরকারের প্রণোদনা বা এনজিও ঋণের আওতার বাইরেই থেকে গেছেন। অথচ তাঁরা দেশীয় শিল্পের ধারক। তাঁদের তৈরি চাটাই শুধু গ্রামীণ সৌন্দর্য নয়, এটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং আমাদের লোকসংস্কৃতির অমূল্য নিদর্শন। তাহলে কেন এই শিল্পীদের জন্য বিনা সুদে বা স্বল্প সুদের পুঁজি বরাদ্দ বা ব্যবস্থা করা হবে না? কেন সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের জন্য বাঁশ সরবরাহ নিশ্চিত করবে না?
দেশকে এগিয়ে নিতে নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে কর্মজীবী নারীদের আরও বেশি উৎসাহিত করতে হবে। আর প্রান্তিক মানুষদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব? বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে নারীর ক্ষমতায়নও পরিপূর্ণভাবে করা সম্ভব নয়।
আমরা মনে করি, চাটাইশিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে এসব নারী কারিগরকে একটি সংগঠিত কাঠামোর আওতায় আনতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, বিপণন ও পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ বাড়াতে হবে। স্থানীয় বাঁশ সংরক্ষণের জন্য বাগান তৈরি কিংবা সমবায়ভিত্তিক মডেল চালু করা যেতে পারে।
টিলাগাঁওয়ের চাটাই শুধু একটি পণ্য নয়, এটি সেখানকার নারীদের টিকে থাকার সংগ্রামের প্রতীক। তাঁদের প্রতি আর কোনো অবহেলা নয়। তাঁদের প্রতি বাড়িয়ে দেওয়া হোক সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতার হাত। এতে স্থানীয় অর্থনীতিও লাভবান হবে, সামাজিকভাবে আসবে সমৃদ্ধি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার
মৌলভীবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাজতখানার ভেতর থেকে মোকাদ্দুস (৩২) নামে আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে পিবিআই।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজার জেলা শহরের টিভি হাসপাতাল সড়কে পিবিআইর হাজতখানা থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়।
মোকাদ্দুস কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তিনি আলোচিত লিটন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের ধানক্ষেত থেকে লিটন নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে মোকাদ্দুস পলাতক ছিলেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন মোকাদ্দুস। পরে তাকে লিটন হত্যার মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে থানা পুলিশ।
পিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর খাওয়া-দাওয়া শেষে মোকাদ্দুসকে ৭-৮ জন আসামির সঙ্গে হাজতখানায় রাখা হয়। সোমবার ভোর ৬টার দিকে ডিউটি অফিসার গিয়ে দেখেন, মোকাদ্দুস নিজের লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মোকাদ্দুসের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
১১ সেপ্টেম্বর লিটনের বাবা সাত্তার মিয়া অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলায় শামিম নামের আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. জাফর হুসাইন বলেছেন, লিটন হত্যা মামলার তদন্ত আমাদের হাতে। মোকাদ্দুস রবিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার সকালে হাজতখানায় আত্মহত্যা করেন তিনি। বিষয়টি আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।
ঢাকা/আজিজ/রফিক