জোভানের সেই ‘আশিকি’ নিয়ে ইউটিউবে ‘তাণ্ডব’
Published: 10th, June 2025 GMT
চলমান ঈদ উৎসবে সিনেমা পাড়ায় চলছে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’, বিপরীতে নাটক পাড়ায় একইভাবে তুমুল ঝড় তুলেছে জোভান অভিনীত ঈদের বিশেষ নাটক ‘আশিকি’। এই নাটকের গানটির একটি ক্লিপস নিয়ে মুক্তির আগেই চলছিল চর্চা। হচ্ছিল ট্রোল। তবে মুক্তির পর দারুণ দর্শক টানছে নাটকটি।
সিএমভি’র ইউটিউব চ্যানেলে নাটকটি মুক্তি পায় ৮ জুন রাতে। যা এরিমধ্যে উঠে এসেছে ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের এক নম্বরে! মজার তথ্য এই তালিকায় ‘আশিকি’র বেশ পরে অবস্থান করছে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার তুমুল হিট গান ‘লিচুর বাগানে’! সে বিবেচনায় অনুমান করা যায়, ‘আশিকি’র আগাম গতিবিধি।
নাটক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঈদে মুক্তি পাওয়া সব নাটকের জনপ্রিয়তা ও ভিউ ভেঙে দেবে সদ্য প্রকাশ হওয়া ‘আশিকি’।
নাটকটি মুক্তির আগেই জোভান অভিনীত একটি গানের ক্লিপ ভাইরাল হয়। বলা দরকার, এই নাটকে জোভানকে দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আশিক চরিত্রে। তার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য শহরে এসে একটি কলেজে ভর্তি হয়। ভালো গান করে, স্বপ্ন দেখে বড় গায়ক হওয়ার।
একই কলেজের শিক্ষার্থী ধনীর দুলালী জেস। কলেজে যার প্রভাবের অন্ত নেই। এই জেস চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজনীন নিহা।
বিষয়টি এমন নয়, অবশেষে আশিক-জেসের পরিচয় ও প্রেম এবং ঘরপালিয়ে বিয়ে! বরং এই গল্পে রয়েছে জটিল সব বাঁক। রয়েছে আনন্দ আর বিষাদের অসাধারণ মেলবন্ধন। রয়েছে অসাধারণ দুটি গানও। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে ‘আশিকি’ যেন মেলো-ড্রামাটিক এক সিনেমার স্বাদ নিয়ে হাজির হয়েছে ইউটিউব পর্দায়, মানুষের ঘরে ঘরে।
সিএমভি’র ব্যানারে নির্মিত নাটকটি মুক্তি দুই দিনের মাথায় অতিক্রম করেছে ৫০ লাখ ভিউ-এর ঘর।
‘আশিকি’ প্রসঙ্গে এর নির্মাতা জানান, নাটকটির মধ্য দিয়ে অনেকগুলো বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। একজন শিল্পীর স্ট্রাগল এবং সেটি জয়ের গল্প যেমন আছে, তেমনি একজন ধনীর দুলালীর অসাধারণ এক প্রেমের বয়ানও রয়েছে।
প্রযোজক-পরিবেশন এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, ‘‘আশিকি’ নাটকটি প্রকাশের পর থেকে দর্শক-সমালোচকদের পক্ষ থেকে যে সাড়া ও প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি, সেটি সচরাচর মেলে না। এক কথায় অনবদ্য সাড়া। বিশেষ করে দর্শকরা নাটকটি দেখার পর যে মন্তব্যগুলো করছেন, সেসব পড়লে এমন ভালো কাজ আরও করার আগ্রহ জন্মায়। আমি দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, এভাবে সাহস যোগাবার জন্য। আর ধন্যবাদ জানাই পুরো ‘আশিকি’ টিমের প্রতি। কারণ, নাটকটির এই সফলতার পেছনে মূল কারিগর তারাই।’’
‘আশিকি’ নির্মাণ করেছেন ইমরোজ শাওন। পারভেজ ইমামের চিত্রনাট্যে নাটকটির সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন খায়ের খন্দকার।
নাটকটি দেখে হিমালয় হিমু নামের এক দর্শক মন্তব্য করেছেন, ‘এ ধরনের নাটক দেখলে, শত কিংবা হাজার কোটি টাকার সিনেমা দেখতে আর ইচ্ছে করে না। স্যালুট বাংলাদেশ।’ আলামিন হোসাইন লিখেছেন, ‘পুরাই ফাটিয়ে দিয়েছে, যা কল্পনাও করতে পারবে না কেউ। সুপার হিট।’ এমডি রমিম লিখেছেন, ‘ভালো লাগছে, গল্পটা ভালো ছিল। অ্যাটাক, কাউন্টার অ্যাটাক, পরে গিয়ে গল্পের মোড় ঘুরিয়ে, ফিনিশিংটা এক কথায় অসাধারণ!’
এদিক নাটক মুক্তির আগেই জোভানের একটি গানের ক্লিপ ভাইরাল প্রসঙ্গে মহিম আহমেদ নামের একজন দর্শক কমেন্টে লিখেছেন, ‘অসাধারণ অভিনয় জোভানের। নাটকের শেষের কাহিনির কারণে গানে এমন অভিনয়। বেশ ভালো লেগেছে। আসলে আমরা বাঙালি না বুঝে লাফাই বেশি। এই জাতি কখনোই ভালো হবে না। পরিশেষে জোভানকে বলি, ভাই এগিয়ে চলো। সমালোচকরা অনেক কথা বলবে, কাজ দিয়ে প্রমাণ করবে তোমার যোগ্যতা।’
সজীব খান নামের একজন লিখেছেন, ‘ভাইরে ভাই ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ভাবছিলাম গতানুগতিক ধারার নাটক। থাপ্পড় খেয়ে তারপর রিভেঞ্জ। কিন্তু নাটকে এতো টুইস্ট। অবিশ্বাস্য ছিল। ঈদুল আজহাতে দেখা এখন পর্যন্ত সেরা নাটক।’
এভাবে ৮ হাজারের বেশি মন্তব্য যুক্ত হয়েছে নাটকটির ইউটিউব লিঙ্কের নিচে।
বলা দরকার, বিশেষ চমক হিসেবে এই নাটকের দৃশ্যে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কণাকেও দেখা যাচ্ছে! যা, দর্শকদের জন্য বাড়তি পাওনা বলেও মনে করছেন অনেকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টক ন টকট র ন টক র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ