বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতে বরাদ্দ কম, বড় বৈষম্য
Published: 17th, June 2025 GMT
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াস) খাতে বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে যা দেশের সার্বিক অগ্রগতি এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে, এমনকি নাগরিকদের নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন পাওয়ার অধিকারও ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া বাজেট বণ্টনের ক্ষেত্রে গভীর বৈষম্যের চিত্রও পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার সকালে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার—পিপিআরসি, ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, এমএইচএম প্লাটফর্ম, ফানসা, বাউইন, এফএসএম নেটওয়ার্কসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্ক অফ ওয়াশ নেটওয়ার্কস যৌথভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যবেক্ষণ করে ওয়াটারএইড এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ওয়াস খাতে ১০৯ দশমিক ০১ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৮২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন টাকার সর্বোচ্চ বরাদ্দ থেকে ক্রমশ কমছে।
এই নিম্নমুখী প্রবণতা এসডিজি ৬ এবং সরকারের জাতীয় অগ্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রা (এনপিটি) ১৭-১৮ অর্জনে বড় বাধা সৃষ্টি করবে, যার ফলে দেশের সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সুযোগ নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড.
তিনি বলেন, পানি ও স্যানিটেশন কেবল প্রযুক্তিগত বিষয় নয়—এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং স্বাস্থ্য, মর্যাদা ও সহনশীলতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাজেট প্রাধান্য এই উপলব্ধিকে প্রতিফলিত করতে হবে, বিশেষত যখন জলবায়ু সংকট বেড়ে চলেছে এবং বৈষম্য গভীরতর হচ্ছে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আগের বছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের বাজেটে ওয়াস খাতে বরাদ্দ কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি ছিল।
তিনি আরও বলেন, শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না—এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং গঠনগত বিন্যাস এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে প্রান্তিক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ওয়াস বাজেট বরাদ্দে অসমতা ও বৈষম্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ বলে মনে করেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। শহরে ও গ্রামীণ-পর্যায়ে বরাদ্দের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা কমলেও, এটি এখনও বেশ বড়—যা সম্পদের সুষম বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিছু দুর্গম এলাকা যেমন হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু চরের জমির মতো অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম এলাকাগুলো নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি, যা দুঃখজনক।
ওয়াটারএইডের প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি পরিচালক পার্থ হেফাজ সেখ বলেন, যদিও বাংলাদেশে খোলা স্থানে মলত্যাগের হার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, ২০২২ সালের হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) অনুযায়ী ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ পরিবারে উন্নত শৌচাগার সুবিধা রয়েছে—তবুও পানির গুণগত মান, স্যানিটেশন অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্বলতাগুলো ওয়াস খাতের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন স্ট্যাটিস্টিক্স (এসভিআরএস) ২০২৩ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৭১ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা রয়েছে। তবে, পানির গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ বিভিন্ন গবেষণায় অনেক পানির উৎসেই ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা মলদ্বারা দূষণের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে, পানির সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততার কারণে মিঠা পানির উৎসগুলো দূষিত হচ্ছে, যার ফলে নারী ও কিশোরীদের নিরাপদ পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় এবং এতে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
যৌথ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সংস্থাভিত্তিক বরাদ্দের দিকে তাকালে দেখা যায়, ওয়াসার চারটি এলাকার মধ্যে ঢাকা ওয়াসার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে, অন্যদিকে সারা দেশে ওয়াস পরিষেবা প্রদানের দায়িত্বে থাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই)-এর বরাদ্দ কমেছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলাগুলোও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কম প্রকল্প সহায়তা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টেগ্রিটি নেটওয়ার্কের কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, শহরাঞ্চলেও বৈষম্যমূলক বরাদ্দ দেখা গেছে। ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে মাত্র ৭টি ওয়াস বরাদ্দ পেয়েছে, যেখানে রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো প্রধান শহরগুলো বাদ পড়েছে। ওয়াসগুলোর ক্ষেত্রে, যদিও সামগ্রিক বরাদ্দ কমেছে, ঢাকা ওয়াসা কার্যত প্রায় সম্পূর্ণ বরাদ্দই নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে শহর-গ্রামীণ এলাকা, ছোট শহর এবং দুর্গম অঞ্চল জুড়ে ওয়াস বরাদ্দে বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করতে এবং ওয়াস পরিষেবাগুলোর ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও, নারী অধিকার নিশ্চিত করতে এবং চা বাগান শ্রমিক, বেদে, দলিত, হরিজন, জলদাস বা জেলের মতো সুবিধাবঞ্চিত ও বাদ পড়া গোষ্ঠীগুলোর জন্য সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বরাদ্দের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা ‘কাউকে পেছনে ফেলে না রাখা’ নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড এডভোকেসি লিড ফাইয়াজউদ্দিন আহমদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর ন র পদ প ন ন টওয় র ক ক বর দ দ র জন য দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা নিয়ে নির্দেশনা মাউশির, কে কত টাকা পাবেন
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা নিয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এতে কোন গ্রেডের শিক্ষকেরা বিশেষ সুবিধা পাবেন বা বিশেষ সুবিধা বাবদ কত শতাংশ হারে টাকা পাবেন, তা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫গতকাল বুধবার মাউশির অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মাদ্রাসা ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাতীয় বেতন স্কেলের তুলনীয় গ্রেড-৯ থেকে তদূর্ধ্ব (ওপরের) গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে প্রতিবছর ১ জুলাই প্রাপ্য মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া গ্রেড-১০ থেকে তদনিম্ন (নিচের) গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে প্রতিবছর ১ জুলাই প্রাপ্য মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে, তবে ১ হাজার ৫০০ টাকার কম নয়, ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন। এই গ্রেডের শিক্ষকেরা ‘বিশেষ সুবিধা’র ক্ষেত্রে কেউই ১ হাজার ৫০০ টাকার কম পাবেন না।
আরও পড়ুনআমেরিকার ফুলব্রাইট বৃত্তি: আবেদনের সময় বৃদ্ধি, প্রয়োজন টোয়েফলে ৮০ কিংবা আইইএলটিএসে ৭৫ ঘণ্টা আগেদেশে এখন ২২ হাজার ১৭৪টি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৮ জনের মতো।