কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা থে‌কে অপহৃত ব‌্যবসায়ী মো. জাহা বক্সকে বা‌ড়ির সাম‌নে ফে‌লে গে‌ছেন অপহারণকারীরা। সোমবার‌ (১৬ জুন) দিবাগত রাত ১২টার দি‌কে মোটরসাইকে‌লে দুইজন ব‌্যক্তি জাহা বক্সকে চোখ ও মুখ বেঁধে বা‌ড়ির সাম‌নে ফে‌লে রে‌খে যায় ব‌লে পু‌লিশ ও পা‌রিবা‌রিক সূত্র নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন। তা‌কে মারধর করা হ‌য়ে‌ছে। অসুস্থ থাকায় জাহা ব‌ক্সের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়‌নি।

প‌রিবা‌রের সদস্যরা জানান, জাহা বক্স জী‌বিত ফি‌রে এসে‌ছেন, এতেই তারা সন্তুষ্ট। কা‌রো বিরু‌দ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। জাহা বক্স উপ‌জেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের মৃত কুদ্দুস আলীর ছে‌লে। তি‌নি বাড়ির পাশে প্রান্ত স্টোর নামে একটি পাইকারি মুদি দোকান চালাতেন। গত র‌বিবার (১৫ জুন) দিবাগত রাত ১টার দি‌কে নিজ প্রতিষ্ঠান থে‌কে নগদ টাকাসহ জাহা বক্স‌কে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠে। অপহরণকারীরা চিঠিতে লি‌খে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পাঁচ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় টাকা না পৌঁছালে লাশ গুম করার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৮টায় জাহা ব‌ক্সের ছে‌লে প্রান্ত বলেন, ‘‘বাবা ফি‌রে এসে‌ছেন। রাত ১২টার দি‌কে বা‌ড়ির বারান্দায় কিছু একটা প‌ড়ে যাওয়ার শব্দ শু‌নতে পাই। বাইরে বে‌রিয়ে দে‌খি, অচেতন অবস্থায় বাবা প‌ড়ে আছেন। তার মুখ ও চোখ বাঁধা ছিল। প‌রে জান‌তে পা‌রি, দুইজন ব‌্যক্তি মোটরসাইকেল ক‌রে বা‌ড়ির সাম‌নে তাকে না‌মি‌য়ে দি‌য়ে গে‌ছেন। বাবা‌কে মারধর করা হ‌য়ে‌ছে। মাথায় একটু দাগও আছে। তিনি কারো সঙ্গে কথা বলার ম‌তো অবস্থায় নেই।’’ 

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, ইউপি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ

র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ: চক্রের মূল হোতা গ্রেপ্তার

প্রান্ত আরো ব‌লেন, ‘‘অপহরণের রা‌তে যে ব‌্যক্তি স‌্যালাইন নেয়ার জন‌্য বাবাকে বা‌ড়ি থে‌কে ডে‌কে দোকানে‌ নি‌য়ে যান, তা‌কে বাবা প‌রি‌চিত কেউ ম‌নে ক‌রেন। বাইরে বে‌রি‌য়ে দে‌খেন তিনি অপ‌রি‌চিত। প্রথ‌মে একজন থাক‌লেও প‌রে আরো একজন‌কে দেখ‌তে পান। দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থে‌কে বাবাকে মুখ, চোখ ও হাত বেঁধে মোটরসাইকে‌লে তু‌লে নি‌য়ে যান। এরপরের আর কিছু বাবা বল‌তে পা‌রেননি।’’

প্রান্ত আরো বলেন, ‘‘দোকা‌নে ক‌্যাশ বক্সের নি‌চে যে টাকা ছিল তাও নি‌য়ে গে‌ছে। আব্বা বাড়ি আসার পর রা‌তেই বা‌ড়ি‌তে পু‌লিশ এসে কথা ব‌লে গে‌ছে। আমা‌দের আর কিছু দরকার নেই। কা‌রোর বিরু‌দ্ধে অভিযোগও নেই। বাবা জী‌বিত ফি‌রে এসে‌ছেন, এটাই য‌থেষ্ট।’’ 

ইসলামী বিশ্ব‌বিদ‌্যালয় (ইবি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মে‌হেদী হাসান জানান, জাহা বক্স‌ অসুস্থ। পু‌লি‌শের তত্ত্বাবধা‌নে আছেন। সুস্থ হ‌লে তাকে সা‌র্বিক বিষ‌য়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হ‌বে। 

আটক হওয়া ইউপি চেয়ারম‌্যা‌নের বিষ‌য়ে ওসি জানান, তার বিরু‌দ্ধে আরো অভিযোগ র‌য়ে‌ছে। তা‌কে অন‌্য এক‌টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হ‌বে। 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপহরণ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ