অপহরণের এক দিন পর ব্যবসায়ীকে বাড়ির বারান্দায় ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা
Published: 17th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় অপহরণের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর জাহাবক্স নামের এক ব্যবসায়ী বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল সোমবার গভীর রাতে উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে নিজ বাড়ির বারান্দায় তাঁকে হাত-চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
আটক ব্যক্তির নাম আলী হায়দার। তিনি আব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও একই ইউপির চেয়ারম্যান।
অন্যদিকে জাহাবক্স একই ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় ব্যবসায়ী। গত রোববার রাত একটার দিকে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নগদ টাকাসহ তিনি অপহৃত হয়েছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ির পাশে ‘প্রান্ত স্টোর’ নামের জাহাবক্সের একটি দোকান আছে। অপহরণের পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির সামনে একটি চিরকুট খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পাঁচ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় টাকা না পৌঁছালে তাঁকে গুম করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে জাহাবক্সের ছেলে প্রান্ত বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টার দিকে আমাদের বাড়ির বারান্দায় কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ পাই। বাইরে বেরিয়ে দেখি, অচেতন অবস্থায় বাবা পড়ে আছেন। তাঁর মুখ ও চোখ বাঁধা ছিল। পরে জানতে পারি, দুজন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে করে বাড়ির সামনে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। বাবাকে মারধর করা হয়েছে, আপাতত কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’
অপহরণের বিষয়ে প্রান্ত বলেন আরও বলেন, অপহরণের রাতে এক ব্যক্তি স্যালাইন নেওয়ার জন্য তাঁর বাবাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। ওই ব্যক্তিকে পরিচিত মনে করেছিলেন। পরে বাইরে বেরিয়ে দেখেন, তিনি অপরিচিত। প্রথমে একজন থাকলেও পরে আরও একজনকে সেখানে দেখা যায়। দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে মুখ, চোখ ও হাত বেঁধে ওই দুর্বৃত্তরা তাঁকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। এরপরের ঘটনা আর বলতে পারেননি বাবা। ওই দোকানে ক্যাশবাক্সে যা টাকা ছিল, সেগুলো নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
সুস্থ হওয়ার পর জাহাবক্সকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আটক আলী হায়দারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে। সবকিছু খতিয়ে দেখে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ব ত তর অপহরণ র জ হ বক স ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহরণ’, ফেনী থেকে মিলল কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ
২০১৯ সালের ৭ মে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহৃত’ হয়েছিলেন কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদ (৪৬)। এরপর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের দাবি, আবদুল আহাদের মুক্তির জন্য অপহরণকারীদের মুক্তিপণও দিয়েছিল তারা। তবে ফেরত পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত ছয় বছর পর গতকাল বুধবার আহাদের মরদেহ মিলেছে ফেনীতে।
পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আহাদের মরদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের ধারণা ছিল, আহাদ দিনমজুরের কাজ করেন। তবে তাঁর পকেটে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আসল পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ পরিবারকে খবর দেয়।
নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্র জানায়, আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার ভূইগাঁও ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো. ইমানি মিয়ার ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রথমে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
নিহত আহাদের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই চট্টগ্রামে একাই থাকতেন। সেখান থেকেই নিখোঁজ হন। ২০১৯ সালের ৭ মে ভোরে তাঁর ভাবিকে মুঠোফোনে জানানো হয় ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীদের তাঁর ভাবি মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকাও দেন। তবে তাঁর ভাইকে ফেরত পাওয়া যায়নি।
নাঈমা নাসরিন দাবি করেন, তাঁর ভাই আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তবে দলীয় কোনো পদে ছিলেন না। তাঁর ভাইকে কেন অপহরণ করা হয়েছে, কেন গুম করা হয়েছে তাঁরা জানেন না। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
লাশ ফেনীতে কীভাবে এল, জানে না পুলিশ
নিহত আবদুল আহাদের ফেনীর ছাগলনাইয়া কীভাবে এসেছে, তা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এত দিন আহাদ কোথায় ছিলেন, এর কোনো ব্যাখ্যাও তাঁরা দিতে পারেনি। পুলিশের দাবি, আহাদের শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক ধারণা।
নিহত আহাদের ভাগনে মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের ঘটনার পর তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তবে তাঁর মামার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি চান।
জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম বলেন, নিহত কাস্টম কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে ছয় বছর আগে অপহরণের যে বিষয়টি জানানো হচ্ছে, সে বিষয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন।