ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন সরগরম রাজনীতি। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের কথা জানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে নির্বাচনসংক্রান্ত অপতথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার। নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ পাঁচ মাসের নির্বাচনসংক্রান্ত ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণ করে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানটি দেখেছে, দল হিসেবে বিএনপি এবং ব্যক্তি হিসেবে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।

লন্ডন সফরের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা জানান। পরে ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের সঙ্গে পরে বিভিন্ন দলও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনায় যুক্ত হয়।

রিউমর স্ক্যানার চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রচারিত অপতথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এই পাঁচ মাসে নির্বাচনকেন্দ্রিক ৩৯টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে এপ্রিল মাসে এবং এরপর মে মাসে।

এই পাঁচ মাসে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে এমন ঘটনা শনাক্ত হয়েছে ১৯টি, পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা–সংবলিত অপতথ্য ১৮টি, বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে একটিতে। এ ছাড়া হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফ্যাক্ট–চেক করা হয়েছে একটি বিষয়ের।

অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে শীর্ষে ছিল ফেসবুক। এ ছাড়া টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডসেও অপতথ্য ছড়ানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ছাড়াও দেশের গণমাধ্যমও নির্বাচনসংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত পাঁচ মাসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে এমন দুটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পায় রিউমর স্ক্যানার।

নির্বাচনকেন্দ্রিক অপতথ্যের ধরনে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, মন্তব্যের মাধ্যমে ১৬টি এবং বিকৃত মন্তব্যের মাধ্যমে ১৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা এবং জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সংক্রান্ত ছয়টি করে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

ভুয়া ও বিকৃত মন্তব্যের সবচেয়ে বেশি ৫০ শতাংশের শিকার বিএনপি। দলটির নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে গত পাঁচ মাসে আটটি ভুয়া মন্তব্য ও সাতটি বিকৃত মন্তব্য প্রচার করা হয়। বিএনপির পর জামায়াতে ইসলামী ও অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে অপতথ্য বেশি ছড়ানো হয়।

এ ছাড়া বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ১৯টি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টিই ছিল দলটির প্রতি নেতিবাচক। এসব অপতথ্যের মধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি সাতটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের বেশির ভাগ তাঁর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে। এ ছাড়া দলটির নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হয়।

বিএনপির পরে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির আমির শফিকুর রহমানকে নিয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়। জামায়াতের পরে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

গণমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড

পাঁচ মাসে গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা ও লোগো ব্যবহার করে ভুয়া ফটোকার্ডে ১৩টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ২৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে কালের কণ্ঠের নাম জড়িয়ে। এরপর যমুনা টিভি, কালবেলা ও জনকণ্ঠকে জড়িয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়।

রিউমর স্ক্যানার বলছে, মূলধারার গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার সুযোগে তাদের নাম জড়িয়ে এসব অপতথ্য ছড়ানো হয়। অনেকে আবার ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন। এতে বিভ্রান্তি ছড়ায়।

এসব অপতথ্য প্রতিরোধের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো.

মশিহুর রহমান রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, গণমাধ্যমগুলো ভেরিফিকেশন লোগো ও ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক ব্যবহার করে এবং নিজস্ব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ভুয়া ফটোকার্ডগুলোর বিষয়ে মানুষকে জানাতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাক্ট–চেকিং প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়, এমন পদ্ধতি খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন তিনি।

অপতথ্য মোকাবিলায় সতর্কতা ও সচেতনতা ছাড়া তেমন কোনো কার্যকর উপায় নেই বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আল-জামান। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও অসহনশীলতাই নির্বাচনকালীন অপতথ্য প্রচারকারীদের সবচেয়ে বড় পুঁজি হবে। তাই রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কোনো ধরনের উসকানিমূলক তথ্য যাচাই না করে গোলমাল তৈরি না করা উচিত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উমর স ক য ন র এসব অপতথ য ত র ক রহম ন ত অপতথ য সবচ য সরক র দলট র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম জোরদারের নি‌র্দেশ তথ্য কর্মকর্তার

সব মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম আরো জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর।

বুধবার (৩০ জুলাই) তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ নির্দেশনা দেন তি‌নি।

প্রধান তথ্য অফিসার বলেন, “বর্তমান সময়ে সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার প্রতিফলন না ঘটায় জনগণ বর্তমান সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারছে না। এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত জনসংযোগ কর্মকর্তাদেরকে আরো আন্তরিক ও একনিষ্ঠভাবে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের এসব সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ নিয়ে গুজবের ছড়াছড়ি

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ঠেকাতে ডিসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে গুজব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে গুজব ও অপতথ্য প্রচার করছে। গুজবের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে গুজব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।”

গুজব মোকাবিলায় তথ্য কর্মকর্তাদের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “গুজব শনাক্তকরণ ও সঠিক তথ্য প্রচারে তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ কাজ করছেন। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত অপতথ্য তথা গুজব মনিটরিং ও এর সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তথ্য অধিদপ্তরের ‘গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ কমিটি’ কাজ করছে। এই কমিটি গুজব প্রতিরোধে নিয়মিত আইকনোটেক্সট ও ভিডিও তৈরি করছে। গুজব প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এসব আইকনোটেক্সট ও ভিডিও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।”

গুজব মোকাবিলায় তথ্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে নিজামূল কবীর বলেন, “তথ্যের চরিত্র নির্ধারণ ও তথ্যের উৎস যাচাইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। গুজব প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়, সংস্থায় সংযুক্ত তথ্য কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে। মন্ত্রণালয়গুলোর জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত কার্যক্রম গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করতে তিনি জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

আলোচনা সভায় তথ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার ইয়াকুব আলী ও ম. জাভেদ ইকবালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম জোরদারের নি‌র্দেশ তথ্য কর্মকর্তার