বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হকের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির মতিজিল জোনাল টিমের উপপরিদর্শক মো.

ফেরদৌস আলম। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল হাসান ও নিজাম উদ্দিন জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। দেশের জন্য অবদান রাখার ২০২১ সালে একুশে পদক পেয়েছিলেন। তিনি কৃষি অর্থনীতিবিদ। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী না। তার জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য বিগত সরকার তাকে প্রতিমন্ত্রী করেন। তাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এতে তিনি সন্দিগ্ধ আসামি। এ মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। 

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আমরা খুবই দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, উনি একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে উনি দেশের ফ্যাসিস্ট রেজিমকে সহযোগিতা করেছেন। সেনাবাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইজিপি, প্রধান বিচারপতি, ডাক্তার হওয়ার পরও তাদের খায়েশ জেগেছে মন্ত্রী, এমপি হওয়ার। তাদের কেন অন্য রাজনীতিতে আসতে হবে? তার বিরুদ্ধে নিউজ করার পর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা সব আসামিকে ধরছি না। যে ঘটনার সঙ্গে আমরা তাদের সংশ্লিষ্টতা পাই, তাদেরই আমরা গ্রেপ্তার করি। ফ্যাসিস্টের সহযোগীরা বিভিন্নভাবে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। দেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার পরিপন্থি কাজ করছেন। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ভারতের আবুল কালাম আজাদ দেশের জন্য অবদান রাখার জন্য তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকের যে বিষয়টা ছিলো সেটা পারিবারিক। সেখানে তার পক্ষে রায় এসেছে। 

এ সময় পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় ডিজিএফআইয়ের একজন এসেছে। তিনি আমার ছবিসহ সব নিয়ে গেছেন। আমাকে একটা কোর্টের দায়িত্ব দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। যদি যেতাম তাহলে আজ পিপি হতে পারতাম না। মানুষ আমাকে চাইবে, কিন্তু আমি কোথায় যাবো, কোথায় যাবো না। সেটা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে।  

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে শামসুল আলমকে আটক করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকা হয়। মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। হামলায় যুবদল নেতা শামীম নিহত হন। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র জন য মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

হাজার হাজার মানুষকে মারার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা: ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষী

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ রোববার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই সাক্ষ্য দেন খোকন চন্দ্র বর্মন নামের একজন মাইক্রোবাস চালক।

আজকের জবানবন্দিতে খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলি তাঁর চোখ, নাক ও মুখে লাগে। এ সময় সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মন মাস্ক খুলে মুখ দেখান। দেখা যায়, তাঁর বাম চোখ, নাক এবং মুখ পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে।

খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, 'যারা হাজার হাজার মানুষকে মেরেছিল, তাঁদের জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান - তাঁরা দায়ী এবং আমি তাঁদের বিচার চাই।'

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।

এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মন জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে আমির হোসেন জেরা করেন। জেরায় সাক্ষীকে আমির হোসেন প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে দায়ী করলেন, তার দলিল আছে?’ জবাবে খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘না।’

জেরায় সাক্ষীকে আমির হোসেন আরেকটি প্রশ্নে বলেন, ‘আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এতে যাত্রাবাড়ী থানার ১৩-১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আরও অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের ওপর হামলায় ছাত্রজনতা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল এবং সেই অস্ত্রের আঘাতে আপনি আহত হয়েছেন।’ জবাবে খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘এসব কথা অসত্য।’

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা সব অপরাধের নিউক্লিয়াস, সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর২ ঘণ্টা আগে

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সব অপরাধের নিউক্লিয়াস।

সূচনা বক্তব্যের আগে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেন, এ মামলার আসামিদের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ সাজা চান।

মামলার বিচারকার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য চলছে, ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সরাসরি সম্প্রচার৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম
  • কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ
  • ‘ঘাড়ে, বুকে, হাতে গরম কিছু এসে লাগল, লুটিয়ে পড়েছিলাম মাটিতে’
  • স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না
  • ‘আমি যৌবনের পিছনে ছুটছি না, সত্যকে আলিঙ্গন করছি’
  • হাজার হাজার মানুষকে মারার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা: ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষী