বলিউডের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা কারিশমা কাপুরকে বিয়ে করে শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুর আলোচনায় আসতে চেয়েছিলেন। হয়েছিলোও তাই। সঞ্জয় কাপুর মরে গিয়েও অনেক বেশি আলোচনায় ছিলেন কারিশমাকে কেন্দ্র করেই। এদিকে সঞ্জয়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে কারিশমার উপস্থিতি, তার কান্না নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। 

তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘কারিশমা কাপুর কেঁদে বুক ভাসালেন সঞ্জয় কাপুর মারা যাওয়ার পর। সঞ্জয় কাপুরের অন্তেষ্টিক্রিয়ায় সাদা পোশাক পরে গেলেন, সেখানেও কেঁদে বুক ভাসালেন। আগ বাড়িয়ে সৎকারের সবই করলেন তিনি, আর কেঁদে বুক ভাসালেন। কার জন্য কাঁদলেন, যে লোকটা তাকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো! লোকটা বিবাহিত ছিল, তারপরও কারিশমাকে বিয়ে করেছিল। প্রথম স্ত্রী নন্দিতাকে ডিভোর্স দিয়েছিল অবশ্য। কিন্তু নন্দিতার সঙ্গে সুযোগ পেলেই শুতে যেত। বিয়ের পর থেকেই কারিশমাকে নির্যাতন করতো সঞ্জয়। তাকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো! কারিশমা জানিয়েছেন হানিমুনের দিন সঞ্জয় নিলামে উঠিয়েছিল কারিশমাকে। তার এক বন্ধু কিনে নিয়েছিল কারিশমাকে। এমন জঘন্য নারীবিদ্বেষী একটা লোক, যে নিজের স্ত্রীকেও ভোগের বস্তু ছাড়া আর কিছু মনে করে না, তার জন্য কারিশমাকে কাঁদতে হয় কেন? কারিশ্মার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরই সঞ্জয় আরেকটি বিয়ে করেছে। আরেক মহিলার স্বামীর জন্য কারিশমাকে এত আকুল হয়ে কাঁদতে হয় কেন?’’

তসলিমা নাসরিন আরও লিখেছেন, ‘‘লোকে বলছে, আহা কারিশমা কত ভালো, কত ভালবাসতেন তার স্বামীকে! স্বামী তাকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো, নিলামে ওঠাতো, বেচে দিত, তারপরও কারিশমা কত ভালবাসতেন তাকে! কারিশমার বুক ভেসে যাওয়া কান্না দেখে সবাই মুগ্ধ। তার ত্যাগ দেখে সবাই তৃপ্ত। কত লক্ষ্মী মেয়ে কারিশমা! কত নরম মেয়ে কারিশমা! কত দুর্বল মেয়ে কারিশমা! কত পতিব্রতা মেয়ে কারিশমা! কত প্রাক্তনপতিব্রতা মেয়ে কারিশমা! কেউ কি কারিশমা বলেছে, তোকে যে এত নির্যাতন করেছে, তার জন্য কান্না কেন, চোখের জল মুছে ফেল? না, কেউ বলেনি।’’

আরো পড়ুন:

মৃত্যুর সময় কাউকে পাশে পাননি পাকিস্তানী অভিনেত্রী আয়েশা খান

শুভ বিয়ের প্রস্তাব দিলে কী করবেন মন্দিরা, জানালেন নায়িকা

তসলিমা নাসরিন তার পোস্টে স্পষ্ট করেছেন, কেন তিনি কারিশমার এভাবে কান্না করার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারছেন না। 
 
তসলিমা নাসরীন তার দীর্ঘ পোস্টের শেষের দিকে  আরও লিখেছেন, ‘‘আমি বলছি না, মেয়েদের নিষ্ঠুর হতে হবে, অনুদার হতে হবে। না তা নয়, মেয়েরা উদার হোক, মানবিক হোক, সৎ হোক, সহমর্মী হোক, সহানুভূতিশীল হোক, কিন্তু যেন অযোগ্য লোকদের জন্য, যেন নারী-নির্যাতকদের জন্য মায়া মমতা, প্রেম ভালবাসা, সহানুভূতি সহমর্মিতা ইত্যাদি বর্ষিত না হয়।’’

উল্লেখ্য, ১২ জুন যুক্তরাজ্যে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই শিল্পপতির মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। ভারতে তার মরদেহ নিয়ে আসার পর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন কারিশমা। সেখানে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। নায়িকার সঙ্গে ২০১৬ সালে বিচ্ছেদ হয় সঞ্জয়ের। তবে দুই ছেলে–মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। কারিশমার দুই সন্তানের জন্য ১৪ কোটি টাকার বন্ড কিনে দিয়েছিলেন সঞ্জয়। কারিশমার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তর কাদা ছোড়াছুড়ি হলেও বিচ্ছেদের পর দুইজনের সৌজন্য সম্পর্ক বজায় ছিল বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ক তসল ম ন করত

এছাড়াও পড়ুন:

অপ্রিয় সত্য ও সহমর্মিতার গল্প

প্রথম আলোর সঙ্গে আমার প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক শুরু হয় ২০১৩ সালে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার কিছুদিন পর মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ফোনে জানানো হলো আবারও ভাইভা হবে এবং বলা হলো স্বয়ং সম্পাদক স্যার ভাইভা নেবেন। নির্দিষ্ট দিনে সময়মতো হাজির হলাম। একটা মিটিং রুমে ১৫-২০ জনের মতো প্রার্থীকে বসানো হলো। আমার ধারণা ছিল, একজন করে হয়তোবা সম্পাদক স্যারের সামনে প্রার্থীদের নেওয়া হবে। কিন্তু না, উনি নিজেই সেই রুমে এসে হাজির হলেন। সংক্ষিপ্ত পরিচয় পর্বের পর উনি আমাদের সঙ্গে গল্প করা শুরু করলেন। কাঙ্ক্ষিত ভাইভা আর শুরু হচ্ছে না। চাকরির ভাইভা বলতে যে বিষয়টার সঙ্গে আমরা সাধারণত পরিচিত, সে রকম কিছুর লক্ষণ দেখতে পারছি না।

উনি চাকরিপ্রার্থীদের নিজ নিজ জেলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, খেলাধুলা ইত্যাদি নিয়ে নিজে কথা বলছেন এবং সেসব বিষয়ে প্রার্থীদের মতামত জানতে চাচ্ছেন। এভাবে চলল প্রায় আধা ঘণ্টা। আমি খেয়াল করলাম, তিনি যখন কোনো বিষয়ে নিজে কথা বলছেন, তখন হালকা মেজাজে কথা বলছেন, কিন্তু সেই বিষয়েই যখন প্রার্থীদের মতামত জানতে চাচ্ছেন তখন ধীর, তীক্ষ্ণ ও মনোযোগী দৃষ্টিতে উত্তর শুনছেন। যেন প্রতিটি উত্তরের মধ্যে ভেতরের মানুষটাকেই যাচাই করছেন। তখনই আমার মনে হলো, ভাইভা আসলে অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে!

আমাদের বগুড়া জেলা থেকে চারজন প্রার্থী উপস্থিত ছিলাম। যথারীতি তিনি বগুড়া জেলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, খেলাধুলা সম্পর্কে নিজে বললেন এবং আমাদের মতামত শুনলেন। মাত্র কয়েক মাস আগেই চাঁদে একজন রাজনীতিবিদকে দেখার গুজব নিয়ে বগুড়ায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটে গেছে! কে কে চাঁদে সেই রাজনীতিবিদকে দেখেছি, জানতে চাইলেন। একজন বললেন, তিনি দেখেছেন! দ্বিতীয়জন বললেন অস্পষ্ট দেখেছেন, আরেকজন বললেন, তিনি চেষ্টা করেও দেখতে পাননি। আমি বললাম, আমি দেখিনি, দেখার চেষ্টাও করিনি। বললেন, কেন চেষ্টা করেননি? আমি উত্তর দিলাম, চাঁদে কোনো মানুষকে দেখা যাবে, এটা আমার বিশ্বাস হয়নি।

একপর্যায়ে সম্পাদক জানতে চাইলেন, বন্ধুসভা বগুড়ার কার্যক্রম কেমন চলছে? একজন বললেন, তাঁর জানা নেই। দুজন খুব উৎসাহ নিয়ে বললেন, স্যার, বগুড়া বন্ধুসভা খুব ভালো কাজ করছে, নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। কিন্তু আমি জানতাম, বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। বললাম স্যার, বন্ধুসভা বগুড়ার কার্যক্রম আগের মতো সক্রিয় নয়। তিনি বললেন, আপনি কেমনে জানেন? এবার আমি বিপদে পড়ে গেলাম! প্রথম আলোয় চাকরির ভাইভায় এসে কেমনে বলি আমি অন্য পত্রিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত! মনে হলো সত্য বলে বিপদে পড়লাম। বুকে সাহস নিয়ে এবার আরেকবার সত্যরই আশ্রয় নিলাম। বললাম, আমি বন্ধুসভার সদস্য। কিন্তু এখন অন্য পত্রিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তুলনামূলকভাবে তাদের কার্যক্রম ভালো চলছে। আমি সেই পত্রিকার সংগঠনের কী পদে আছি জানলেন। বন্ধুসভার কার্যক্রম কেন আগের মতো সক্রিয় নয়, তার কয়েকটা কারণ শুনলেন। আমার উত্তর শুনে স্যার চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

ভাইভা শেষে বগুড়ার চারজন প্রার্থী আমরা নিচে নেমে একসঙ্গে কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বললাম। অন্য তিনজনকেই খুব খুশি মনে হলো। তাঁরা সবাই আমাকে বললেন, ভাই, আপনি এটা কী করলেন! তাঁর নিজের পত্রিকার সংগঠন সম্পর্কে নেতিবাচক বললেন আবার এখন অন্য পত্রিকার সংগঠন করছেন, সেটাও বললেন—এভাবে চাকরি পাবেন? তাঁদের খুশি হওয়ার কারণ আমার বোধগম্য হলো। মনে হলো, হয়তো অপ্রিয় সত্য বলে ভুলই করলাম। খুব মন খারাপ হয়ে গেল। আমি চাকরির আশা ত্যাগ করলাম।

কিন্তু কয়েক দিন পর মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ফোন এল। বলা হলো, আমি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছি! সেদিন বুঝেছিলাম—প্রথম আলো শুধু একটা প্রতিষ্ঠান নয়, এটা এক মূল্যবোধের নাম। এখানে সত্যকে কখনো ভয় পাওয়া হয় না। অপ্রিয় সত্য কেউ বললেও তাঁকে সম্মান করা হয়। যোগদানের পর সেই উপলব্ধি আরও গভীর হলো। অফিসের পরিবেশে দায়িত্ববোধ, পারস্পরিক সম্মান আর সহমর্মিতার যে মেলবন্ধন দেখেছি, তা অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন। এর বাস্তব উদাহরণ আমি পেয়েছিলাম এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে।

অফিসে আসার পথে আমি মোটরবাইক দুর্ঘটনার শিকার হই। গুরুতর আহত অবস্থায় আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাত দিন আমি হাসপাতালে ছিলাম। সেই সাত দিন প্রতি রাতেই আমার এক সহকর্মী আমার পাশে থেকে দেখাশোনা করেছেন—নির্ঘুম, নিঃস্বার্থভাবে। অফিস ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম ভাই প্রতিদিন এসে খোঁজ নিয়েছেন, ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন, নিশ্চিত হয়েছেন আমি ভালো চিকিৎসা পাচ্ছি কি না। হেড অফিস থেকে বিভাগীয় প্রধান থেকে শুরু করে অনেকেই ফোন করেছেন, সাহস দিয়েছেন, মনোবল জুগিয়েছেন। এক মাস অসুস্থতাজনিত ছুটিতে ছিলাম। অফিসের সংশ্লিষ্ট সবার অফুরন্ত আন্তরিক সহযোগিতায় পরবর্তী তিন মাস হোম অফিস করেছি। চিকিৎসা ব্যয়ের সিংহভাগ খরচ অফিস বহন করেছে। একটা মুহূর্তের জন্যও আমি নিজেকে একা মনে করিনি। অনুভব করেছি, যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, সেখানে সহকর্মীরা শুধু অফিসের সহকর্মী নন—সম্পাদক স্যার থেকে শুরু করে অফিস সহকারী সবাই মিলে যেন একটাই পরিবার।

সেই দুর্ঘটনা আমার শরীরে ক্ষত রেখেছিল, কিন্তু মনে গেঁথে দিয়েছিল এক অমূল্য শিক্ষা—প্রথম আলো শুধু খবরের কাগজ নয়, এটা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক প্রতিশ্রুতি। এখানে সততা যেমন মূল্যবান, তেমনি কর্মীর প্রতি দায়বদ্ধতাও গভীরভাবে অনুভূত।

আমার কাছে প্রথম আলো মানে শুধু কর্মস্থল নয়—একটি নৈতিক বিদ্যালয়। এখানে আমি শিখেছি, সত্য বলা ক্ষতি নয়, বরং সেটাই শক্তি। শিখেছি, দায়িত্ব মানে শুধু কাজ নয়—একে অপরের প্রতি যত্ন। আর সবচেয়ে বড় শিক্ষা—এখানে নেতৃত্ব আলোকিত হয় সততা, যোগ্যতা দক্ষতা আর সহমর্মিতায়।

আজ প্রথম আলো ২৭ বছরে পা রাখল। এই যাত্রায় আমি একজন ক্ষুদ্র কর্মী, তবু গর্বিত—এই আলোর মিছিলের অংশ হতে পেরে।

শুভ জন্মদিন প্রথম আলো।

তুমি ছড়াও সেই সত্যের আলো—যে সত্য এক করে মানুষকে, দায়িত্বে, ভালোবাসায় আর মানবিকতায়।

মাহমুদুল হাসান: সহকারী ব্যবস্থাপক (স্টোর, বিতরণ ও প্রশাসন), প্রশাসন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপ্রিয় সত্য ও সহমর্মিতার গল্প