স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ‘মব জাস্টিস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর সঙ্গে (সাবেক সিইসি নূরুল হুদার) যেটা হয়েছে, মানে গলায় এটা–সেটা পরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কোনো কিছু থাকলে আমাদের জানাবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রপার অ্যাকশন নেবে।’

আজ সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ওনার (এ কে এম নূরুল হুদা) ওপর হামলা করা হয়েছে। এটার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে দেখব কারা জড়িত। এর সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

কৃষিজমি দখলের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য একটি আইন করতে যাচ্ছি, যাতে কৃষিজমি দখল না হয়। আমাদের দেশ থেকে অনেক দেশি ফল হারিয়ে যাচ্ছে। তাই সবাইকে সচেতন করবেন, যাতে দেশি ফলের গাছ সবাই বেশি করে লাগায়।’

আরও পড়ুন‘মব’ তৈরি করে সাবেক সিইসিকে হেনস্তার পর পুলিশে সোপর্দ১৫ ঘণ্টা আগে

এ সময়ে উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিজা আরেফীন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো.

যাবের সাদেক, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ, হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক এনামুল হক, কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান, মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুস সেলিম প্রমুখ।

সকাল সাড়ে ১০টায় জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মৌচাক হর্টিকালচার সেন্টারে আসেন। পরে তিনি টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তিনি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি) পরিদর্শন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র রক ষ ক র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ডাকাত-মহাজনদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

সুন্দরবনে দস্যুতা ফিরে আসা শুধু জীবিকার জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জন্য হুমকি নয়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের ত্রাতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়া মহাপ্রাণ বনটির প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের জন্যও অশনিসংকেত। ডাঙার মহাজন কোম্পানি ও বনের ডাকাতদের যৌথ চক্র এক বছরের মধ্যে যেভাবে বন ও বনজীবীদের অশেষ দুর্দশার কারণ হয়ে উঠেছে, তা আমাদের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা ও ভঙ্গুরতার মূর্ত প্রতীক।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার সুযোগে সুন্দরবনে দস্যুতার প্রত্যাবর্তন হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩২টি বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবন ডাকাতমুক্ত হয়েছিল। ফলে অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজি, মাছ লুট, জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করার মতো অপরাধের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা। বর্তমানে ছোট–বড় অন্তত ১৪টি বাহিনী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনের নদীতে তাদের ভাসমান আস্তানা গড়ে উঠেছে। জেলে, মৌয়াল, কাঁকড়া সংগ্রহকারীসহ বনজীবীরা তাদের হাতে অসহায়ভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চাঁদা আর মুক্তিপণ দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার।

সুন্দরবনে কার্যত এখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ শূন্যের কোঠায়। কেননা বনদস্যুদের কাছে যে ধরনের অস্ত্র রয়েছে, তাদের প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা বনরক্ষীদের নেই। কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর টহল ও নজরদারিও অপ্রতুল। ফলে সুন্দরবনে এখন বনদস্যুদের সমান্তরাল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর লোকালয় থেকে এ কাজে তাদের সহায়তা করছেন ‘মহাজন কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত মহাজনেরা। তাঁরাই নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডাকাতদের সঙ্গে বনজীবীদের বন্দোবস্ত করে দেন। আবার তাঁরাই দর-কষাকষি করে জিম্মি বনজীবীদের মুক্তিপণের টাকা পাঠান। কিন্তু এই ‘উপকারে’ বনজীবীরা ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ছেন। এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনে একধরনের আধুনিক দাসতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করি।

দস্যু ও ‘মহাজন কোম্পানির’ যে সমান্তরাল প্রশাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাতে সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এবার অবৈধ জাল ব্যবহার করে ও নির্বিচার বিষ ছিটিয়ে মাছ শিকার কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া আগের মতো মিলছে না। জলজ প্রাণী দেদার মারা পড়ায় সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানে স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। আবার বিষে মারা যাওয়া মাছ, কাঁকড়া খেয়ে নাগরিকেরাও স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। বনদস্যুরা অবাধ হরিণ নিধন করেও সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

বনদস্যুমুক্ত সুন্দরবন আবারও ডাকাতদের অভয়াশ্রমে পরিণত হওয়া যারপরনাই উদ্বেগজনক। আত্মসমর্পণকারী ডাকাতদের একটা অংশ আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অর্থ হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসন করা যায়নি। তারা যেন দস্যুবৃত্তিতে ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য যে প্রশাসনিক ও সমাজভিত্তিক নজরদারি দরকার ছিল, সেটাও যে নেই, তারও প্রমাণ এ ঘটনা। ফলে শুধু ঘটা করে আত্মসমর্পণ করানোই যে যথেষ্ট নয়, এই শিক্ষাটাও নেওয়া প্রয়োজন।

সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এবং বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত করতে বনদস্যু মুক্ত করার বিকল্প নেই। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বনরক্ষীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডাকাতদের হাতে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও মহাজনদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর অভিযান চালানো প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে কেউ আটকাতে পারবে না
  • দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে: র‌্যাব মহাপরিচা
  • পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নামে শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবি
  • ডাকাত-মহাজনদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন
  • দুর্গাপূজা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটর করা হচ্ছে: র‍্যাব মহাপরিচালক
  • পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা: র‌্যাব 
  • ‎মোহামেডান কেন বাফুফে লিগ কমিটির বিলুপ্তি চায়