ক্লাব বিশ্বকাপে মেক্সিকান ক্লাব পাচুকার বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ইনজুরি কাটিয়ে বদলি হিসেবে ওই ম্যাচে ফেরেন রিয়াল মাদ্রিদের জার্মান ডিফেন্ডার অ্যান্তোনি রুডিগার। 

ম্যাচের শেষ দিকে তাকে পাচুকার ৩৯ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার গুস্তাভো কাবরালের সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। পরে রুডিগার অভিযোগ করেছেন, তার প্রতি বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে। 

তবে কাবরাল দাবি করেছেন, তিনি বর্ণবাদী কিছু করেননি। কেবল আর্জেন্টিনায় প্রচলিত একটি বাক্য বলেছেন। সেটা হলো- চিকেন শিট (মুরগির বিষ্ঠা)। তার মতে, আর্জেন্টিনায় এটি প্রচলিত খুবই সাধারণ একটা কথা (অনেকটা ইংরেজি বুলশিটের মতো)। 

কাবরাল বলেন, ‘আমি তাকে কিছুই বলিনি। শুধু চিকেন শিট বলেছিলাম। যেটা আর্জেন্টিনায় আমরা সবসময়ই বলি। এর বাইরে কিছু নয়।’ 

বিষয়টি নিয়ে রিয়ালের কোচ জাবি আলোনসো বলেন, ‘রুডিগারের থেকে আমরা এমনই (বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন) শুনেছি এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করি। এসব ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স থাকা উচিত। বিষয়টি নিয়ে ফিফা তদন্ত করছে।’ ফিফার সঙ্গে তদন্তের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স যোগাযোগ করলে তারা তাৎক্ষণিক কিছু জানাতে চায়নি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প আর জ ন ট

এছাড়াও পড়ুন:

স্থবির পাথরঘাটার অর্থনীতি

ট্রলার আটকের পর বরগুনার পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের কার্যালয় ঘেরাও করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। দুই পক্ষের মধ্যে সেখানে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক হয়নি পাথরঘাটার অর্থনৈতিক কার্যক্রম। 
গ্রেপ্তার আতঙ্কে জেলে ও মৎস্যজীবীদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে। ফলে পাথরঘাটা মোকামে মাছের পাইকারি কেনাবেচা কমে গেছে দুই-তৃতীয়াংশ।
বিএফডিসি পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছের মোকাম। এটি পুরো উপজেলার অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এটি ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিকের। মৎস্যজীবী ছাড়াও পরিবহন, বরফ, জ্বালানি ও মুদি-মনোহারি ব্যবসাসহ নানা ধরনের বাণিজ্য হয়। কিন্তু ১৭ জুন সংঘর্ষের পর থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড একরকম স্থবির। 
পাথরঘাটা নতুন বাজারের তেল ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়ার ভাষ্য, দিনে গড়ে তিনি ১০০ ব্যারেল ডিজেল (দুই হাজার লিটার) বিক্রি করতেন। এখন এক ব্যারেলও বিক্রি হয় না। তাছাড়া প্রতিটি ট্রলার সাগরে যাওয়ার জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকার মুদি-মনোহারিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনত। এসব দোকানে এখন দিনে ২ হাজার টাকাও বেচাকেনা হয় না।  
সূত্র জানায়, ১৭ জুন কোস্টগার্ডের সদস্য দুটি অবৈধ ট্রলার আটক করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পাঁচ শতাধিক জেলে ও ব্যবসায়ী তাদের স্টেশন ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে তারা কোস্টগার্ডের দুটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আট শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন আটজন। এতে জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় তাদের বেশির ভাগই এলাকাছাড়া। 
বিএফডিসিতে মাছ বিক্রি কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে বলে জানান বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দুলাল মিয়া। তিনি বলেন, ট্রলারমালিকরা এখন বরফ কিনছেন না। তাই ২০টি বরফকলের উৎপাদন বন্ধ। 
এ বক্তব্যের সত্যতা মেলে উপজেলার আছিয়া বরফকলের মালিক কামরুল ইসলামের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন অসৎ মাছ ব্যবসায়ীর জন্য পাথরঘাটার প্রায় সব ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমরা বরফ বিক্রি করতে পারছি না।  অথচ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। ট্রলার মালিকদের কাছে বরফকল মালিকদের বকেয়া কয়েক কোটি টাকা। তারা এখন অন্য মোকাম থেকে বরফ কিনে সাগরে যাচ্ছেন। মাছও বিক্রি করছেন দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য মোকামে। ইলিশ মৌসুম শেষ হলে ট্রলার মালিকরা বকেয়া দেবেন না। এতে অনেক বরফকল মালিক পথে বসবেন।’
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্যবাজার পাইকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিনের ভাষ্য, কোস্টগার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষের পর অবৈধ ট্রলিং ট্রলার সাগরে যাওয়া বন্ধ। এতে সাগরগামী অন্য ট্রলারের জেলেরা বেশি পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছেন। মোহনা সংলগ্ন নদীতেও ইলিশ মিলছে ভালো। কিন্তু জেলেরা পাথরঘাটা মোকাম এড়িয়ে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য মোকামে মাছ বিক্রি করছেন। 
তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ১১ জুন। এরপর থেকে ওই কেন্দ্রে দিনে ২০০-৩০০ মণ ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হতো। কিন্তু সংঘর্ষের পর থেকে দিনে ২০ মণ ইলিশও মোকামে আসছে না। 
পাথরঘাটা আড়তদার সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ছগির আলম বলেন, জেলে ও ট্রলার মালিকদের দাদন দেওয়া আছে কোটি কোটি টাকা। প্রতি ইলিশ মৌসুমে মাছ দিয়ে দাদনের 
টাকা শোধ করেন তারা। কোস্টগার্ডের সঙ্গে মারামারির পর সাগরের অধিকাংশ ট্রলার পাথরঘাটা বিএফডিসি এড়িয়ে অন্য জায়গায় মাছ বিক্রি করছে। এতে একদিকে আড়তদারির টাকা 
পাচ্ছেন না। অন্যদিকে দাদনের টাকাও পরিশোধ করছেন না কেউ। 
কোস্টগার্ডের সঙ্গে জেলের ঝামেলার পর পাথরঘাটার সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ শিকদার। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে দিনে এক-দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সমুদ্রগামী ট্রলার এখানে মাছ বিক্রি করতে আসছে না। তাই সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায় ধস নেমেছে। কর্মহীন শ্রমিকদের অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ অচলাবস্থা কাটাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ