রাজধানীর মাদানী অ্যাভিনিউ ধরে সৌদি দূতাবাসের পূর্বপাশ ঘেঁষে একটি শাখা সড়ক পূর্ব দিকে চলে গেছে। একটু বৃষ্টিতেই দূতাবাসের দেয়ালের পাশে নিচু জায়গায় জমে যায় পানি। গতকাল সোমবার দেখা যায়, ঝাঁকে ঝাঁকে মশা সেই পানির ওপর বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর মশার ঝাঁক ভনভন করছে। এলাকার বেশির ভাগ স্থানেই এমন মশার জ্বালাতন।
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশ্চিম পদরদিয়া, সাতারকুল ও উত্তর বাড্ডা মিলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪১ নম্বর ওয়ার্ড। পুরো এলাকাটিই অপরিকল্পিত। ঘিঞ্জি, অপ্রশস্ত সড়কে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে যেখানে সেখানে। একটু বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। কিছুটা নিচু এলাকা হওয়ায় সহজে পানি সরে না। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমও দুর্বল। মশা উৎপাদনের সব অনুকূল পরিবেশ রয়েছে এ ওয়ার্ডে।
জরিপ চালিয়ে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকার প্রমাণ পায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.
অবশ্য এ ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক ফারজানা সোহেলী বলেন, মশার ঘনত্ব এখানে বেশি কিনা, জানি না। তবে ওয়ার্ডটি অনেক ঘনবসতিপূর্ণ। এলাকাবাসীর মধ্যে জনসচেতনতাও কম।
আমার অধীনে ৫৫ পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। এটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। আর এলাকাটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে না ওঠায় ওখানে সঠিকভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা বেশ দুঃসাধ্য।
এলাকার পান-সিগারেট বিক্রেতা আতর হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যে দিনের বেলায় কয়েল জ্বালিয়ে মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। সিটি করপোরেশনের লোকজন মাঝেমধ্যে এলেও তারা শুকনো রাস্তাটুকু ঝাড়ু দিয়ে চলে যায়। মশার ওষুধ ছিটানোর লোকজন ঠিকমতো যায় না।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ওয়ার্ডটির প্রাণকেন্দ্র উত্তর বাড্ডা বাজার এলাকার চারপাশেই ময়লা-আবর্জনা। ভাঙাচোরা রাস্তা ও নিচু এলাকায় পানি জমে আছে। এসব এলাকায়ও মশা-মাছি ভনভন করছে।
১০ নম্বর দক্ষিণ নয়ানগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এখানে ময়লা নিতে আসে না। টাকা দিয়ে ময়লা সরানো লাগে। আর ময়লা থাকার কারণে মশা আরও বেশি হয়।
পাশের মিম ইলেকট্রনিকসের মালিক মোস্তফা কামাল বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে। এ জন্য মশা থেকে আমাদের মুক্তি নেই। সিটি করপোরেশনের লোকজনকে খুব একটা দেখা যায় না। এ রকম হলে কি মশা থেকে রেহাই মেলে? সব সময় মশা ওড়াউড়ি করে।
ওয়ার্ডটির পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক মো. নুরুজ্জামান জানান, তিনি যথাসাধ্য তাঁর লোকজন দিয়ে কাজ করছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু তাঁর বলার নেই।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার মশক নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যে কারণে এখনও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা রাজধানীতে অনেক কম। ঢাকার চেয়ে এবার বাইরের রোগী বেশি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি কারখানা কিনে চালুর উদ্যোগ আকিজ বশির গ্রুপের
চার প্রকৌশলী মিলে ২০১৬ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে গড়ে তোলেন বিদ্যুতের তার ও কেবলস উৎপাদন কারখানা। নাম দেওয়া হয় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস লিমিটেড। তখন প্রকল্পটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থায়ন করে।
তবে ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি ও সময়মতো চলতি মূলধন না পাওয়ায় প্রকল্পটি ব্যবসায়িক উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি। উৎপাদন শুরুর আগেই শতকোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। আর তাতে বিপাকে পড়ে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করা ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।
এখন পুরো ঋণ ও দায়দেনা পরিশোধ করে প্রকল্পটি কিনে নিচ্ছে আকিজ বশির গ্রুপ। এ জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান, আকিজ বশির গ্রুপ ও এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস। কারখানাটি কিনে নিতে আকিজ বশির গ্রুপ প্রায় ১১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ইতিমধ্যে এমিনেন্সকে অর্থায়নকারী চার প্রতিষ্ঠানকে ঋণের একটা অংশ পরিশোধ করে দিয়েছে আকিজ বশির গ্রুপ। আগামী অক্টোবরের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ করে কারখানাটির মালিকানা বুঝে নেবে তারা। এর মাধ্যমে আকিজ বশির গ্রুপ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পণ্য উৎপাদনে বড় পরিসরে যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা করছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্প কিনে আকিজ বশির গ্রুপ নিজেরা লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোও তাতে উপকৃত হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে দেওয়া পুরো অর্থ ফেরত পেতে যাচ্ছে। ব্যাংক দুটির কর্মকর্তারা বলছেন, এতে আমানতকারীদের উপকার হবে। ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলেন, দেশে একটা নতুন প্রকল্প প্রস্তুত করতেই কয়েক বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু এমিনেন্স কিনে নেওয়ার ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন চাইলেই কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
এ বিষয়ে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঋণের একটা অংশ পেয়ে গেছি। পুরো টাকা কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাব। এটা খুবই ভালো হয়েছে। এভাবে বড় শিল্প গ্রুপগুলো এগিয়ে এলে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকবে না।’
প্রকল্পের অবস্থা
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা এলাকায় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যারস অ্যান্ড কেবলস লিমিটেড বৈদ্যুতিক তার ও কেবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম ও কপার বৈদ্যুতিক কেবল, উচ্চ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক কেবল এবং খোলা কপার কেবল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়, যার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৬৭ হাজার ১৫০ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স সিন্ডিকেট করে ৬৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করে। বাকি টাকার জোগান দেন উদ্যোক্তারা।
প্রকল্পটি যখন পরিকল্পনা করা হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা। ২০২১ সালে ডলারের দাম বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এর মধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হলে নির্মাণ ব্যয় আরও বেড়ে যায়। ফলে অবকাঠামো সম্পন্ন করতে আরও ৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হয় প্রতিষ্ঠানটির। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৭৮ লাখ ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলে, যা পরে ফোর্সড ঋণে পরিণত হয়। এর মধ্যে ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ৬৯ কোটি টাকা ঋণ বেড়ে হয় ১১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি চলতি মূলধন না পাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এখন কারখানাটি কিনে নিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে আকিজ বশির গ্রুপ।
আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগামী নভেম্বর থেকে নতুন এই কারখানায় উৎপাদন শুরু করব। কম ভোল্টেজের তার উৎপাদন দিয়ে শুরু করব। কী নামে এই তার বাজারে আসবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। স্থানীয় চাহিদা বিবেচনা করে বাজারে বড় আকারে আসার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
আকিজ বশির যেভাবে কিনছে
এক বছরের বেশি সময় ধরে এমিনেন্সের উদ্যোক্তারা প্রকল্পটি বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। আকিজ বশির গ্রুপও এই ব্যবসায় আসতে পুরোনো প্রকল্প খুঁজছিল। এর মধ্যে তারা একাধিক তার ও কেব্লস উৎপাদন কারখানা কেনার জন্য আলোচনা করে। শেষমেশ এমিনেন্সের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়। দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছালে ৬ আগস্ট এ নিয়ে চুক্তিও হয়। এই চুক্তির ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের পাশাপাশি এমিনেন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা, তাদের সরবরাহকারীদের বিলসহ আরও কিছু দায়দেনা শোধ করবে।
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ ৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ঋণের কিছু অর্থ পেয়ে গেছে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদা খানম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। ৬০ দিনের মধ্যে ঋণের বাকি টাকা পেয়ে যাব। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’