বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয়, ২০৩০ সালের মধ্যেই ‘সুপার হিউম্যান’ হবে মানুষ
Published: 27th, June 2025 GMT
২০৩০ সালের মধ্যেই রোবোটিক এক্সোস্কেলেটন, এআইচালিত বিভিন্ন পরিধেয় যন্ত্র, ন্যানো রোবট, উন্নত কন্টাক্ট লেন্স ও মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ মিলবে। এসব প্রযুক্তি ও পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো ‘সুপার হিউম্যান’ হয়ে উঠবে মানুষ। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রযুক্তি ও পণ্য পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, কোথাও কোথাও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রোবোটিক এক্সোস্কেলেটনের মাধ্যমে মানুষের শারীরিক ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলার প্রযুক্তি এখন আর পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সারকোস রোবোটিকস তৈরি করেছে এমন একটি এক্সোস্কেলেটন, যার ‘স্ট্রেন্থ গেইন রেশিও’ ২০:১। এর অর্থ, একজন ব্যক্তি তাঁর নিজের শক্তির তুলনায় ২০ গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এই স্যুট ব্যবহার করে কেউ চাইলে দীর্ঘ সময় ধরে ২০০ পাউন্ড ওজনও বহন করতে পারেন। এদিকে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান ‘জার্মান বায়োনিক’ তৈরি করেছে ‘এক্সিয়া’ নামের বুদ্ধিমান এক্সোস্কেলেটন, যা ব্যবহারকারীর চলাফেরার ধরন বুঝে নেওয়ার মাধ্যমে ভার তোলার কাজে সহায়তা করে। ইতিমধ্যে এটি জার্মানির কয়েকটি হাসপাতালে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মানুষের রক্তনালিতে চলাচলকারী ক্ষুদ্র রোবট বা ন্যানোবট স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। এই ন্যানো রোবটগুলো শরীরের ভেতর কোষ মেরামত, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং এমনকি ক্যানসারের মতো জটিল রোগ নিরাময়ের কাজও করতে পারবে। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিবিদ রে কুরজওয়েইলের দাবি, ২০২৯ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন মাত্রায় পৌঁছাবে, যেখানে প্রযুক্তিটি মানুষের চেয়েও অধিক কার্যক্ষম হয়ে উঠবে।
চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন একটি কন্টাক্ট লেন্স তৈরি করেছেন, যা ইনফ্রারেড আলো দেখতে সক্ষম। ফলে এটি ব্যবহারে ব্যবহারকারীরা অন্ধকারেও দেখার সুযোগ পাবেন। যেটি এখনকার নাইট ভিশন প্রযুক্তির বিকল্প হতে পারে।
প্রযুক্তির অগ্রগতির আরেকটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে মানবিক অনুভূতি, বিশেষত স্পর্শ ও ভারসাম্য। সুইডেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এরিকসনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভবিষ্যতের স্মার্ট ডিভাইস বা রিস্টব্যান্ড ব্যবহার করে মানুষ ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল বস্তুকে স্পর্শ করার অনুভবও পেতে পারে। এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন একদল ‘সাইবর্গ ডিজাইনার’। ট্রান্সহিউম্যানিস্ট লিভিউ বাবিটজ তৈরি করেছে ‘নর্থসেন্স’ নামের একটি ছোট যন্ত্র, যা তার শরীরকে পৃথিবীর উত্তরমুখী দিক শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
প্রযুক্তির পরবর্তী ধাপে রয়েছে মানুষের চিন্তা ও তথ্য গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রূপান্তর।
বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যেই এআইচালিত পরিধেয় যন্ত্র যেমন স্মার্ট চশমা ও কানের ইয়ারবাড এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে, যেখানে ব্যবহারকারী তাঁর চারপাশের প্রয়োজনীয় তথ্য তৎক্ষণাৎ পেয়ে যাবেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লুইস রোজেনবার্গ বলেন, ‘এই স্মার্ট যন্ত্রগুলো আমাদের চোখে যা পড়ে, কানে যা আসে, এমনকি আমরা যা অনুভব করি সবকিছুর সঙ্গেই যুক্ত থাকবে। এরপর সে তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের বুঝতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।’
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক স স ক ল টন ব যবহ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে ২০৪০ পর্যন্ত খরচ ২০ বিলিয়ন ডলার
নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৯৩৩ থেকে ৯৮০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০৩১-৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১ দশমিক ৩৭ থেকে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। অর্থাৎ ২০৪০ পর্যন্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এ জন্য বাংলাদেশে বড় আকারের বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। গবেষণা প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসে (আইইইএফএ) এ তথ্য জানা গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক ও বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বিষয়ক আইইইএফএ’র প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে এই বিপুল অর্থের চাহিদা শুধু সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়, এ জন্য ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে হঠাৎ করে নীতিমালার পরিবর্তন, পাইপলাইন এ প্রকল্প না থাকা, জটিল ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া, ভূমির উচ্চ মূল্য, স্থানীয় মুদ্রার অস্থিরতা (স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন) এবং দেশের দুর্বল ক্রেডিট রেটিং বেসরকারি বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলেও তিনি জানান।
এসব সংকট কাটাতে বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুদ্রা ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষ তহবিল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছে আইইইএফএ।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত সরকারের সময় প্রতিযোগিতাহীনভাবে অনুমোদিত ৩১টি বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগত স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যারান্টি পুনর্বহাল, প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ভূমি বরাদ্দ এবং ব্যাংকিং ও সার্ভিস সেক্টরের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
শফিকুল আলম আরও বলেন, পেমেন্ট নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে সরকার ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ধারা’ পুনর্বহাল অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারীদের আয়ের নিশ্চয়তা দিতে একটি পেমেন্ট সিকিউরিটি কাঠামো গঠন করা যেতে পারে।