রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় সারাদেশে যখন চলছে শোকের মাতম, তখন পাবনার চাটমোহরে বিএনপির একটি ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ ঘিরে সমালোচনার ঝড় বইছে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

গত সোমবার (২১ জুলাই) রাতে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের দীঘলগ্রাম শাহবাড়ী বাজারে স্থানীয় বিএনপির কর্মী সভা উপলক্ষ্যে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পাবনা-৩ আসনে (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে কর্মী সভার আয়োজন করে ছাইকোলা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠন।

কর্মী সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ গানের আসর বসে। নাচ গানের জন্য বাইরে থেকে নারী শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়। রাত আটটা থেকে শুরু হয়ে এ অনুষ্ঠান চলে রাত তিনটা পর্যন্ত। নাচ-গান আর সাউন্ড সিস্টেমের শব্দে পুরো এলাকা ছিল প্রকম্পিত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে পুরো দেশ যখন গভীর শোকাচ্ছন্ন, দেশজুড়ে যখন চলছে আহতদের চিকিৎসা, স্বজনহারা পরিবারে শোক ও কবরস্থ করার প্রস্তুতি। তখন এই ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ মোটেই কাম্য নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে এ নিয়ে।

স্থানীয় সচেতন মহলের মন্তব্য, এমন ভয়াবহ জাতীয় ট্র্যাজিডির সময় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আরো দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত ছিল। শোকের মুহূর্তে এমন আনন্দোৎসব জনমনে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।

ছাইকোলা ইউনিয়ন বিএনপির এক নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি হাসেন মন্ডলের সভাপতিত্বে বিএনপির কর্মীসভা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পাবনা পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য ডা.

সচিব আহমেদ মোস্তফা নোমান, চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম মাহমুদ, ছাইকোলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তোতাসহ অনেকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম হৃদয় ফেসবুকে মন্তব্য লিখেছেন, “ছাইকোলার এই কর্মকাণ্ডে চাটমোহর লজ্জিত।” উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান লেবুর মন্তব্য, “আজকের দিনে এমন আয়োজন যারা চালাচ্ছে তাদের ধিক্কার দেই।”

সাইদুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, “এই এলাকার বিবেকবান মানুষগুলো কি মরে গেছে? জনগণের দুঃখ দুর্দশায় নেতা যদি দুঃখিত না হয়, তাহলে কিসের নেতা?” জাহাঙ্গীর আলম জাকারিয়া নামের একজনের মন্তব্য, “দুঃখজনক, লজ্জিত আমরা ছাইকোলাবাসী। এদের কি বিবেক বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে? আর এলাকাবাসী কেউ ছিল না প্রতিবাদ করার?”

চাটমোহর উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মোন্তাজ আহমেদ মন্তব্য করেছেন, “‌এই সকল ধিক্কারজনক কাজ যারা করেছে, তাদের দল থেকে চিরতরে বহিঃষ্কার করতে হবে। এরা তুহিন ভাইয়ের ব্যানার ব্যবহার করে তুহিন ভাই এবং দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দুর্দিনে এদেরকে দলের কোনো ব্যানারে পাই নাই।”

জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির উপদেষ্টা ও পাবনা-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ হাসানুল ইসলাম রাজা তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘যখন পুরো বাংলাদেশ শিশুদের মৃত্যুতে শোকে আচ্ছন্ন, তখন একটি রাজনৈতিক কর্মীসভায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এটি শুধু নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবিকতার সর্বোচ্চ লঙ্ঘনই নয়, বরং এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি মানুষের আস্থা ও সম্মানের সঙ্গে প্রকাশ্য বেঈমানি।’’

পাবনা-০৩ আসনের সাবেক এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘‘দেশের এমন একটি শোকাহত পরিবেশে ছাইকোলায় যেটা হয়েছে তা ভাল কাজ হয়নি। ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এটা নিয়ে আমরা খুবই দুঃখিত এবং লজ্জিত।’’

এ বিষয়ে ছাইকোলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তোতা বলেন, ‘‘এই অনুষ্ঠানটা আরো আগে করার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে সোমবার করা হয়। এখন ওইদিনই যে দেশে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটবে কে জানতো? তারপরও আমরা প্রথমপর্বের বক্তব্য অনুষ্ঠান শেষ করে নেতৃবৃন্দ সবাই চলে আসি। আসার সময় অনুষ্ঠানের ব্যানার খুলে নিয়ে জুনিয়রদের বলে আসি- কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না করার জন্য। কিন্তু উঠতি বয়সের ছেলেপেলেরা কথা শোনেনি।”

তিনি বলেন, ‘‘আসলে ঘটনা তেমন কিছুই না। কিন্তু পাবনা-৩ আসনে তুহিন ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে চাটমোহরে বিএনপির তিনটা গ্রুপ আছে, তারা এটাকে ইস্যু বানিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এটা তাদের নোংরা রাজনীতি।’’

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ত ক অন ষ ঠ ন ব এনপ র স ব ক স ন ব এনপ র ল ইসল ম র কর ম

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে ময়লা ছিটিয়ে টাকা ছিনতাই, দুই বছর পর ঢাকা থেকে আসামি গ্রেপ্তার

দুই বছর আগে ময়মনসিংহ নগরের ছোট বাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অভিনব কায়দায় চার লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)।

গ্রেপ্তার মো. হান্নান (৬২) ঢাকার চকবাজার এলাকার মৃত আলী মিয়ার ছেলে। চুরির দায় স্বীকার করে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তিনি ময়মনসিংহের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে তাঁকে ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রাতে পিবিআইয়ের ময়মনসিংহ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।  

পিবিআই সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর ময়মনসিংহ নগরের ছোট বাজার এলাকার পূবালী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ব্যবসায়ী শামছুল আলম জনতা ব্যাংকে লেনদেন শেষে লিমা প্রিন্টিং প্রেসের সামনে আসেন। সেখানে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাঁর কাপড়ে ময়লা ছিটিয়ে দিয়ে ‘ময়লাটা কোথা থেকে লাগল’ বলে বিভ্রান্ত করেন। জামাকাপড় পরিষ্কারের সময় পাশেই রাখা টাকার ব্যাগটি নিয়ে চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ দাখিল করে। পরে আদালতের নির্দেশে পিবিআই ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় সিসি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, ‘ঘটনাটি জনাকীর্ণ এলাকায় হওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজে প্রকৃত চোর শনাক্ত করা কঠিন ছিল। প্রায় দুই বছর ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় আমরা হান্নানকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করি। হান্নান আন্তজেলা চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। বিভিন্ন জেলায় একই কৌশলে মানুষের শরীরে ময়লা ছিটিয়ে টাকা লুটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ