মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এক ভয়াবহ সংকটের মুখে। রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি এখন একদল বেপরোয়া বালুদস্যুর লালসার শিকার। মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকল্পের সুরক্ষা বাঁধ ধসে পড়ছে আর পুরো প্রকল্পই বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে। এখন প্রশ্ন, রাষ্ট্রীয় ও সরকারি কর্তৃপক্ষ কি এই বালুদস্যুদের নিরাপত্তা দেবে নাকি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি রক্ষা করবে?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এক মাস ধরে প্রকাশ্যে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে প্রকল্পের একেবারে গা ঘেঁষে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা সত্ত্বেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এমনকি গজারিয়ার ইউএনও এবং ওসিকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে জমি অধিগ্রহণ, বালু ভরাট ও ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, যা এখন বালুদস্যুদের থাবায় বিলীন হওয়ার পথে।
আশ্চর্যজনকভাবে এ অবৈধ বালু উত্তোলনের পেছনে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের একটি সিন্ডিকেট জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, বালু উত্তোলনকারীরা অস্ত্রধারী লোকজন নিয়ে আসে, ফলে স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে নির্দিষ্ট কিছু মৌজায় বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে আদন ড্রেজিং লিমিটেডকে। শর্ত ছিল, নদীর তীর থেকে ৮০০ থেকে ১০০০ ফুট গভীরে বালু উত্তোলন করতে হবে।
কিন্তু এ শর্তের তোয়াক্কা না করে ইজারা নেওয়া এলাকার বাইরে এবং প্রকল্পের বাঁধ ঘেঁষে বালু তোলা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বড় বোন হলেও মূলত বিএনপি নেতা মিয়া নুরুদ্দিন অপু এ বালুমহাল পরিচালনা করছেন। মিয়া নুরুদ্দিন অপুর ঘনিষ্ঠ যুবদলের সাবেক নেতা মুজিবুর রহমান এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলামও এ কার্যক্রমে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা ৬০০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করেন, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন কথা বলছে।
জেলা প্রশাসক ফাতেমাতুল জান্নাত অভিযান চালানোর কথা বললেও বাস্তবতা হলো বালু কাটা থামেনি। শুধু লোকদেখানো অভিযান কোনো সমস্যার সমাধান নয়। এ সমস্যার কার্যকর সমাধান করতে হলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, সে যেই হোক না কেন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, এই বালুদস্যুদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিন। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র
এছাড়াও পড়ুন:
সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও ঘর দিল জামায়াত
মাগুরায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে দুটি গরু ও একটি গোয়ালঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আছিয়ার পরিবারকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার হস্তান্তর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
এ সময় জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের, সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় এবং জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা
গত ১৫ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার চান। সে সময় আছিয়ার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে একটি গোয়াল ঘর এবং দুটি গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জামায়াতের আমির।
আট বয়সী আছিয়া মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আছিয়ার।
ঢাকা/শাহীন/রফিক