ভারত-পাকিস্তান অচলাবস্থার অবসান কি সম্ভব
Published: 24th, July 2025 GMT
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা শুরু করা বা শুরু হলে তা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, চালিয়ে নেওয়া হলে সেই আলোচনা থেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে কি না, এর সবই উভয়ের বর্তমান সম্পর্কের ওপর নির্ভর করছে।
দুঃখজনকভাবে আজ এই তিন ক্ষেত্রেই অবস্থা খুব হতাশাজনক। কারণ, দুই দেশের শাসকগোষ্ঠীর কেউই বড় সমস্যাগুলো সমাধানে আন্তরিক সংলাপে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। পাকিস্তান যেহেতু তুলনামূলক ছোট দেশ, তাই তার উচিত ছিল উত্তেজনা কমানোর জন্য আরও উদ্যোগী হওয়া। কিন্তু সাম্প্রতিক চার দিনের সীমান্ত সংঘাতের পর দুই দেশই সংলাপের ব্যাপারে আরও অনাগ্রহী এখন।
জনগণ বা বিরোধী দলগুলোর তরফ থেকেও সংলাপ চাওয়ার মতো তেমন কোনো চাপ নেই। এখন দ্বিতীয় দফায় আবার সংঘাত হবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। ফের সংঘাত হলে তার ফলাফল কী হতে পারে? এটি এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। কারণ, দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রধারী এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে সেটি কেবল সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রযুক্তিগত চমক বা নতুন যুদ্ধকৌশল যেকোনো সময় পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। এই কারণেই সংলাপের সব সম্ভাবনা খুঁজে দেখা উচিত।
আরও পড়ুনভারত হামলা চালিয়ে যেভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দিল২০ মে ২০২৫কিন্তু বাস্তবে এমনকি অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের মাঝেও এই বিষয়ে কোনো ইতিবাচক মনোভাব দেখা যায় না। কারণ, দুই দেশের রাজনৈতিক ভাষ্য এতটাই পরস্পরবিরোধী হয়ে উঠেছে, বর্তমান অচলাবস্থা চালিয়ে যাওয়ার খরচও কম মনে হয়, সংলাপ শুরু করার রাজনৈতিক ঝুঁকির চেয়ে।
সম্প্রতি এক সাবেক পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক ভারতীয় সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারে আমরা দেখি—সাংবাদিকের প্রশ্ন ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছে, আর মন্ত্রীর উত্তরে ছিল পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি। কোনো পক্ষই গঠনমূলক আলোচনায় আগ্রহী নয়।
ভারতের অনেকে মনে করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা ধরে রাখে, কারণ এটি তাদের দেশীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আবার পাকিস্তানিরাও বলে, বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদ, পাকিস্তানবিরোধিতা, কাশ্মীর নিয়ে আপস না করার মনোভাব এবং পানির প্রবাহ থামিয়ে দেওয়ার হুমকি সম্পর্ক উন্নয়নে বড় বাধা।দুই দেশেই অনেক বড় বড় সমস্যা আছে। যেমন পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা রোধ, জলবায়ু সমস্যার ভয়াবহতা থেকে বাঁচা, সুশাসন, মানবাধিকার, উন্নয়ন এবং দক্ষিণ এশিয়াকে বৈশ্বিক অর্থনীতির কেন্দ্রে পরিণত করা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিবাচক পরিবর্তন এবং সার্কের পুনরুজ্জীবন জরুরি। কিন্তু উভয়ের পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গিই বদলাতে হবে।
ভারত মনে করে, পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র যার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক রাখা অর্থহীন। অন্যদিকে পাকিস্তান মনে করে, ভারত একটি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের আগমন ভারতকে অস্থির করে তুলেছে (যেহেতু ভারতকে চীন মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র)।
এই বাস্তবতায় দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধ্বংসাত্মক কাজ করছে। এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতা, নীতিনির্ধারক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী, কবি, লেখকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা। তাঁদের বুঝতে হবে, দুই দেশের টিকে থাকার স্বার্থেই পারস্পরিক নীতিকে মানবিকভাবে পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। এখন এর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ, দুই দেশের রাজনীতি জনকল্যাণের বদলে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখার দিকে বেশি ঝুঁকে আছে। উভয় দেশই অতীতে অনেক ‘আস্থা তৈরির উদ্যোগ’ নিয়েছে। তার কিছুর বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছুর হয়নি।
আরও পড়ুনইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল২৬ জুন ২০২৫ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের পরস্পরের দেশে সফর করা উচিত। সফরের উদ্দেশ্য হবে বিশ্বাস তৈরি, পারস্পরিক উদ্বেগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার বাস্তব সুযোগ চিহ্নিত করা। এটি দুই দেশের জনগণের মধ্যে একটি ইতিবাচক ও স্থায়ী সম্পর্কের ভিত্তি গড়তে সহায়ক হবে।
আমলারা, কূটনীতিকেরা এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারেন। কিন্তু তাঁরা নিজেরা পরিবর্তন আনতে পারবেন না। ভারতের অনেকে মনে করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা ধরে রাখে, কারণ এটি তাদের দেশীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আবার পাকিস্তানিরাও বলে, বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদ, পাকিস্তানবিরোধিতা, কাশ্মীর নিয়ে আপস না করার মনোভাব এবং পানির প্রবাহ থামিয়ে দেওয়ার হুমকি সম্পর্ক উন্নয়নে বড় বাধা।
ভারত ও পাকিস্তানে সব পেশার কিছু ভালো মানুষ আছেন, যাঁরা শত্রুতা বন্ধ দেখতে চান। কিন্তু তাঁরা সম্মিলিতভাবে তেমন শক্তি নন যে তাঁরা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবেন।
আশরাফ জাহাঙ্গীর কাজী যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন: মিন্টু
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, “নির্বাচনে ফেনীর ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন। নির্বাচন নিয়ে ফেনীতে কোনো চিন্তা নেই।”
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই যে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। তবে, দেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় তার আগেও নির্বাচন হয়ে যেতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে একটি মামলা চলমান আছে। যদি কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রবর্তন হয়, তাহলে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেয়ারটেকার হবে না। কেয়ারটেকার সরকারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা আছে।”
আরো পড়ুন:
প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে আমরা কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা
সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে ভালো কাজ করবে না, উল্লেখ করে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “বিগত ১৯ বছর আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। কেউ যদি বলে, আমরা হঠাৎ করে নির্বাচন চাচ্ছি, বিষয়টি সঠিক নয়। বরং, ২০০৬ সাল থেকে আমরা নির্বাচন চেয়ে আসছি। একটি দেশের সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে, তাহলে তারা কখনো ভালো কাজ করবে না। তাই, আমরা চাচ্ছি নির্বাচন হোক।”
বিএনপির এ সিনিয়র নেতা আরো বলেন, “আমরা বলে আসছি, ২০০৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে, সেটি অবাধ ও সুষ্ঠ হয়নি। ২০০৬ সাল থেকে দেশে কোনো নির্বাচনকালীন সরকার নেই। দুই যুগ ধরে যদি নির্বাচিত সরকার না থাকে, তাহলে মানুষের অর্থনৈতিক বা জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে না। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত থাকে একটি সরকার, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক