ফিলিস্তিন সংকট সমাধান: সবার দৃষ্টি জাতিসংঘের বিশ্ব সম্মেলনে
Published: 28th, July 2025 GMT
ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি ও দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বিষয়ে হতে যাচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলন ফিলিস্তিনের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নাম ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন’। এ সম্মেলন যেমন জরুরি, তেমনি ঐতিহাসিক বলেও অভিহিত করা হচ্ছে।
এই উচ্চ পর্যায়ের জাতিসংঘ সম্মেলনকে গাজা শাসনব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য গঠন, বাধাহীন মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জোরদারে তাৎপর্যপূর্ণ বৈশ্বিক প্রয়াস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় ৩ ইসরায়েলি সেনার কারাদণ্ড
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব এ/আরইএস/৭৯/৮১-এর আলোকে যৌথভাবে ফ্রান্স ও সৌদি আরব এ সম্মেলনের আয়োজন করছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ স্তরের আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি মন্ত্রী পর্যায়ের সভা এবং সমাপনী অধিবেশন- এই দুই ভাগে হবে। থিম্যাটিক রাউন্ড টেবিল এবং আটটি ওয়ার্কিং গ্রুপের সমন্বিত ফলাফল একটি সিদ্ধান্তে যেতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চারটি মূল থিম ঘিরে এ সম্মেলন হবে, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা দূর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অধিবেশনটিকে কয়েক মাসের সমন্বিত কূটনৈতিক তৎপরতার একটি সুন্দর সমাপ্তি এবং এ-সংক্রান্ত উদ্যোগের সূচনা বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটি বলছে, এই সম্মেলন ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির পক্ষে স্থায়ী আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা, জবাবদিহিতা এবং বাস্তবায়নের ভিত্তি স্থাপন করতে যাচ্ছে।
অধিবেশনের অডিও গণমাধ্যম ও অন্যদের জন্য মূল ভাষার পাশাপাশি আরো ছয়টি ভাষায় সরবরাহ করা হবে।
সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্মেলনে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং টেকসই দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তির লক্ষ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সময়সীমা নির্ধারিত রোডম্যাপের পক্ষে মত তুলে ধরবে।
কূটনীতিকরা বলছেন, ২৮ থেকে ২৯ জুলাই এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে আবারও আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসানে এবং টেকসই শান্তির পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। এ সম্মেলন এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন গাজায় মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই চরমে উঠেছে। তাছাড়া ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ায় কূটনৈতিক ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক নজির সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন, যার মধ্যে ৫০ জন ছিলেন ফরাসি নাগরিক। এর পর থেকে গাজা যুদ্ধ এক ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজার অবকাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
এ সম্মেলনের আগে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা জোরদার করেছে। রিয়াদ শুরু থেকেই বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল প্রতীকী নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি কৌশলগত প্রয়োজন।
সম্মেলনের আগে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সৌদি আরব এমন সব প্রচেষ্টায় নিরলস সমর্থন দিয়ে আসছে, যেগুলো ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জনে সহায়ক। দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। কারণ, এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক।”
তিনি আরো বলেন, “এই দৃষ্টিকোণ থেকেই সৌদি আরব ও ফরাসি প্রজাতন্ত্র সম্মিলিতভাবে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে, যার লক্ষ্য হলো—ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করা; যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম করবে।”
জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি স্যামুয়েল জবোগার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, “এই সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য হলো— দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহায়তা সংগ্রহ করা। এর মাধ্যমে এমন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে।”
জানা গেছে, বৈঠকে ফ্রান্স, সৌদি আরব ও অন্যান্য অংশীদার দেশগুলো আরো বেশি দেশকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানাবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত ২৪ জুলাই ঘোষণা দেন, ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে এবং সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ ঘোষণা দেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ফ্রান্সের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় এবং একে ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দিকে একটি ধাপ হিসেবে আখ্যা দেয়। বিপরীতে ইসরায়েল কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ। ফ্রান্স হতে যাচ্ছে প্রথম জি-৭ দেশ যারা এই দলে যোগ দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গাজা যুদ্ধ চলাকালীন স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়েসহ ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র ক টন ত ক লক ষ য মন ত র র জন য ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক-রাজ, টেস্টে অদম্য রুট
বিরাট কোহলি আর সূর্যকুমার যাদবের পর ভারতের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠলেন অভিষেক শর্মা। আজ প্রকাশিত আইসিসির সাপ্তাহিক র্যাঙ্কিংয়ে এ স্বীকৃতি পেলেন ২৪ বছর বয়সী এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
মাত্র এক বছর আগে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। এখন পর্যন্ত শুধুই টি-টোয়েন্টি খেলেছেন অভিষেক। ওয়াংখেড়েতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফেব্রুয়ারিতে ১৩৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন। অবশেষে সে পারফরম্যান্সই এনে দিল র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান।
আরও পড়ুন৫ বল করতে গিয়ে ওয়াইড দিলেন ১২টি, ওভার আর শেষ হলো না৩ ঘণ্টা আগেটি-টোয়েন্টিতে গত বিশ্বকাপের পর থেকে শীর্ষে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। কিন্তু সাম্প্রতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে না খেলায় এক ধাপ পিছিয়ে দুইয়ে নেমে গেছেন হেড। তাঁর জায়গাটা দখল করেছেন সেই আইপিএলের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ সতীর্থ অভিষেকই।
এর আগে এই সংস্করণে ভারতীয়দের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন কেবল সূর্যকুমার যাদব ও বিরাট কোহলি। ২০১৪ থেকে ২০১৭—টানা কয়েক বছর শীর্ষস্থান ছিল কোহলির দখলে।
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে। ছয় ধাপ এগিয়ে শীর্ষ দশে ঢুকে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জশ ইংলিস, অবস্থান এখন নবম। বাংলাদেশের ওপেনার তানজিদ হাসান নেমে গেছেন পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ৪৩তম স্থানে, জাকের আলী ছয় ধাপ পিছিয়ে এখন ৫৯তম। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সেরা খেলোয়াড় ক্যামেরন গ্রিন একলাফে ৬৪ ধাপ এগিয়ে পৌঁছেছেন ২৪ নম্বরে।