উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মুরাদনগরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন: ছাত্রদলের সম্পাদক
Published: 4th, August 2025 GMT
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কুমিল্লার মুরাদনগরে একধরনের মাফিয়াততন্ত্র কায়েম করেছে। আপনারা দেখেছেন যে যারা জুলাই ও আগস্টে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তার পূর্বে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিকবার জেলে গিয়েছে, গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দুঃখজনকভাবে তারা জেলে রয়েছে।’ আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে তিনি এ কথা বলেন।
মুরাদনগর থানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় কুমিল্লা কারাগারে আছেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিম উদ্দীন। আজ তাঁর সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেন নাছির উদ্দীন। পরে তিনি কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী (আবু), সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা (টিপু) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ একটি ইতিবাচক রাজনীতিতে থাকলেও কুমিল্লার মুরাদনগর কোনোভাবে ইতিবাচক রাজনীতিতে নেই। এখানে একজন উপদেষ্টা মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন।’
উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া জামিনের মেয়াদ শেষে গত ২৭ জুলাই বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতা–কর্মী কুমিল্লার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই ১৩ জনের মধ্যে ছিলেন মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিম উদ্দীন। নাজিমকে কারাগারে পাঠানোর খবরে তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় মায়ের জানাজায় অংশ নেন নাজিম।
বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘মুরাদনগরে যাঁরা গত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন, সেই আওয়ামী লীগের কোনো দোসর আজ এই কুমিল্লা কারাগারে নেই। তাঁরা প্রকাশ্যে মুরাদনগরে ঘোরাফেরা করছেন, জনাব আসিফ মাহমুদের বাবার সঙ্গে তাঁরা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। অথচ সাড়ে ১৭ বছর ধরে যে রাজনৈতিক কর্মীরা খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, বারবার জেল খেটেছেন, পাঁচ তারিখের পরে গায়ের জোর দিয়ে তাঁদের আবার জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। মাহমুদ এখন উপদেষ্টা, আসিফ মাহমুদ কীভাবে নির্বাচন করবেন? কিন্তু অনেকে বলছেন যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে আসিফ মাহমুদ পদত্যাগ করবেন। এই সরকারকে আমরা কীভাবে নিরপেক্ষ বলব? এখানে (পুলিশের) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, অভিযোগ শতভাগ সত্য। কারণ, আসিফ মাহমুদ যে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন, সে মাফিয়াতন্ত্র থেকে তো থানার ওসি নিশ্চয়ই ওনাকে ভয় পাবেন এবং ওনার কথামতো তিনি মামলা করেছেন। পাঁচ তারিখের পরে হয়েছে, সেই মামলায় আমাদের নেতা–কর্মীদের, আমাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকষণ করে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘মুরাদনগরের থানার ওসির বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, উনি (ওসি) কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নন। উনি আসিফ মাহমুদ, তাঁর বাবা ও আওয়ামী লীগের দোসরদের শেল্টার দিচ্ছেন। অপর দিকে যাঁরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মী, সাড়ে ১৭ বছর ধরে যারা মাঠে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছেন, তাঁদের হয়রানি করছেন, গ্রেপ্তার করছেন। সে জন্য আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করছি। এই বিষয়গুলোকে নিরপেক্ষভাবে বিচার–বিশ্লেষণ করে সংবাদ পরিবেশন করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুনমুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫৩০ জুলাই ২০২৫পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ মার্চ ইফতারের আগে কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম। উবায়দুল সিদ্দিকী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার চাচাতো ভাই। ওই ঘটনার পর পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নেয়। এরপর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরদিন থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানাকে। মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিনসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা বৈষম্যবিরোধী নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের অভিযোগে আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। ওই ১৩ জন পুলিশের করা মামলায় উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। দুই মামলার আসামিদের প্রায় সবাই সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য় ম কর ছ ন ছ ত রদল র ম র দনগর কর ম দ র উপদ ষ ট ব এনপ র র জন ত করছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত
নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. ইদন মিয়া (৬০)। তিনি মুরাদনগর এলাকার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে মোস্তাকিম (৩০) ও আবুল হোসেন (৬০) নামের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেলে সেখানে বিএনপির দুটি পক্ষকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। একটি পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী এবং আরেক পক্ষে সদ্য বহিষ্কৃত সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম মিয়া নেতৃত্ব দেন। মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি দলীয় পদ থেকে বহিষ্কৃত হন আবদুল কাইয়ুম। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় থাকার বিষয়টি মানতে পারছিল না শাহ আলম পক্ষ।
অভিযোগ আছে, আবদুল কাইয়ুমকে ঠেকাতে শাহ আলম চৌধুরীর ইন্ধন ও হস্তক্ষেপে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের আবার এলাকায় ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়। এর অংশ হিসেবে আজ ভোর পাঁচটার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এলাকায় ফিরতে শুরু করে আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ খবর পেয়ে আবদুল কাইয়ুমের সমর্থকেরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষ টেঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইদন মিয়াসহ অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ইদন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবীর। তিনি জানান, ইদন মিয়াকে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনায় হয়। ওই সময় তিনি মৃত ছিলেন। মরদেহ এই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে শাহ আলম চৌধুরী ও আবদুল কাইয়ুম মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।