জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রূপকার ছিল প্রতিটা মানুষ: আসিফ নজরুল
Published: 4th, August 2025 GMT
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশকে তুলনামূলকভাবে ভালো একটা জায়গায় নিতে পারি, তবে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকালে যারা অসীম আত্মত্যাগ করেছে, অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, আহত হয়েছে, দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে, তাদের প্রতি প্রকৃত রেসপেক্ট (শ্রদ্ধা) রাষ্ট্র মেরামতের মাধ্যমেই সম্ভব হবে।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রত্যেকটা মানুষ নিজ সিদ্ধান্তে এসেছেন। প্রত্যেকটা মানুষই নেতা ছিলেন এখানে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের রূপকার ছিলেন প্রতিটা মানুষ। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও জুলাই আন্দোলনে নেমেছিলেন ছাত্র-জনতা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটনে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এরশাদের আমলে ৯ বছরে বিভিন্ন আন্দোলনে ৪০–৫০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমার নিজের মনে পড়ে। পলিটিক্যাল কারেক্টনেস। বেগম খালেদা জিয়ার আমলে ’৯৬ সালে মাগুরা নির্বাচনের পরে একটা ভুয়া নির্বাচন হয়েছিল। এরপর আন্দোলন হওয়ার পর কয়েক মাসের মাথায় উনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১০–১২ জনও মারা যায়নি পুরো আন্দোলনে। ওনারা রাস্তার ভাষাটা পড়তে জানতেন। অর্থাৎ, ওনারা রাস্তার ভাষাটা পড়তে পারতেন। রেসপেক্ট ছিল মানুষের প্রতি। হয়তো অন্যায় করার চেষ্টা করেছেন। এরশাদ হোক, খালেদা জিয়া হোক, যে–ই মানুষের পালস দেখেছেন, সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন।’
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলের সমালোচনা করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আর শেখ হাসিনা! কারচুপির মাত্রাটা যদি দেখেন, আগের সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছেন। আগে ইলেকশনটা হতো। উনি ২০১৪ সালে ইলেকশন হওয়ার আগেই সাংসদ নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ১৫৩টা আসনে ইলেকশন হওয়ার আগে ইলেকশন হয়ে গেছে। ইভেন উইথআউট দ্য ইলেকশন, দ্য পার্লামেন্ট ওয়াজ ফর্মড। ইভেন বিফোর দ্য ইলেকশন দ্য পার্ল্টামেন্ট ওয়াজ ফর্মড। সারা পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম ভুতুড়ে নির্বাচন হয়নি। মানুষ কী পরিমাণ বিক্ষুব্ধ হয়েছিল? তখনো উনি প্রায় শ খানেক লোককে হত্যা করেছেন। পরের বছরের আন্দোলনে (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর) এক শ মানুষ মারা গেছেন। ২০১৮ সালে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম নজির নেই। দিনের বেলা করে, আগের রাতে ভরে রাখে। ২০২৪ সালের নির্বাচন তো ফাতরামির নির্বাচন। আমি আর ডামির নির্বাচন। সবকিছুর মাত্রা থাকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওনারটা ছিল সর্বোচ্চতম অপরাধ। উনি পরপর ৩ বার, ১৫ বছর বাংলাদেশের মানুষকে ভোট দিতে দেননি। কোনো রকম অনুশোচনা নেই।’
রাষ্ট্র মেরামতের মাধ্যমেই জুলাইয়ে আত্মত্যাগকারীদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভবআসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টাউপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘পৃথিবীতে কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে যে স্বামী–স্ত্রী সম্পর্ক। আপনি কাকে স্বামী বুঝিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে? শেখ হাসিনা বলত, “আমি এত কিছু দিয়েছি, ভারত ভুলতে পারবে না।” মনে হবে, তিনি যেন তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি দিয়েছেন। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাবতেন। বাংলাদেশের মানুষকে তিনি তাঁর কৃতদাস ভাবতেন। এমনকি তাঁর মন্ত্রীদেরও কৃতদাস ভাবতেন।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি যখন আমার পাসপোর্ট নিয়ে যাই, আপনাদের (কূটনীতিক) তো সমস্যা হয় না। আমার এত লজ্জা লাগে, এত রাগ লাগে। আমার তো এখন একটা স্পেশাল পাসপোর্ট আছে। কিছুদিন পর আবার সবুজ পাসপোর্ট হবে। আমেরিকায় ছয়বার গিয়েছি। তারপরও ভিসা দেয় না। দিনের পর দিন ঘুরায়ে ঘুরায়ে ভিসা দেয়। অনেক দেশ আপনার, এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর এমনভাবে তাকায়, মনে হয়, মরে যাই। হংকং–দুবাইয়ে পাসপোর্ট দেখছে, আর এমন একটা লুক দেয়। এত প্রশ্ন করে, পেছনে লোকজন ক্ষেপতে থাকে, মনে হয় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছি। কী দেশ বানিয়েছি আমরা যে অন্য দেশ আমাদের নিচু চোখে দেখে।’
শেখ হাসিনাকে নিয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের ধারণাই বুঝতেন না। তাঁর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও তাঁর মন্ত্রীদের ক্রীতদাস ভাবত ভারত। হাসিনা এ দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নতজানু করে রেখেছিলেন। লুটপাট, নির্যাতন, গুম, খুন, আয়নাঘরের বীভৎসতার মাধ্যমে তিনি এ দেশের মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করেছেন।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান জাতীয় জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সেমিনারে তিনি বলেন, ‘২৪–এর গণ-অভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের সাহস, দৃঢ়তা ও একতার বিজয় হিসেবে চিহ্নিত।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র র মন ত র উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
অভিনেত্রীর সাত মাসের শিশুকে নিয়ে ট্রল, সাইবার সেলে মামলা
টেলিভিশনের জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্যের সাত মাসের সন্তানকে ঘিরে সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা সামনে এসেছে। সদ্যোজাত পুত্রসন্তান জয়কে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, বিদ্রূপ, এমনকি বর্ণবিদ্বেষমূলক ট্রল করা হয়েছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়ে সাইবার সেলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছেন দেবলীনা।
দেবলীনা ও তাঁর স্বামী শাহবাজ শেখের একমাত্র সন্তান জয়। জন্মের পর থেকেই ইনস্টাগ্রামে জয়কে নিয়ে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও শেয়ার করতেন দেবলীনা। তবে সম্প্রতি ছেলের গায়ের রং নিয়ে তাঁকে টার্গেট করে ভয়ানক বর্ণবাদী মন্তব্য করতে শুরু করেন অনেকে। ইনস্টাগ্রামের বিভিন্ন পোস্টে ছোট্ট জয়কে উদ্দেশ করে ব্যবহার করা হয় অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ।
স্বাভাবিকভাবে একজন মা হিসেবে এই অন্যায্য আচরণ আর সহ্য করতে পারেননি দেবলীনা। তিনি নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে কিছু নেতিবাচক মন্তব্যের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন এবং জানান, ইতিমধ্যেই তিনি সাইবার ক্রাইম সেলে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছেন। দেবলীনার ভাষায়, তাঁর সন্তানের উদ্দেশে দুই হাজারের বেশি বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে।
ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে এ ছবি শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্য