বাম সংগঠনগুলোর ঘৃণা মিছিল, ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন
Published: 6th, August 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ইসলামী ছাত্রশিবিরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি রাখার ঘটনায় ঘৃণা মিছিল করেছে বামপন্থী সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ মিছিল হয়। একই সময়ে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রশিবির।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে। প্রদর্শনীতে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের রাখা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে সন্ধ্যায় প্রদর্শনী থেকে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে প্রদর্শনীতে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি রাখার প্রতিবাদে টিএসসির মূল ফটকে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ‘২৪-এর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘৭১ হারে নাই, হেরে গেছে স্বৈরাচার’, ‘তোরা যারা রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় টিএসসির মূল ফটকের অন্য পাশে অবস্থান নেওয়া ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘শাহবাগীদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
পরে রাত নয়টার দিকে বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা টিএসসি থেকে ‘রাজাকার-স্বৈরাচারের প্রতি ঘৃণা মিছিল’ বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রক্টরের কাছে চার দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো তাৎক্ষণিক যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরিয়ে নিয়ে আয়োজনটি বন্ধ করতে হবে; এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রশিবিরকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে; পরবর্তী সময়ে এমন কর্মকাণ্ড যেন না ঘটে, তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা কীভাবে ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ পর ধ দ র স গঠনগ ল ট এসস
এছাড়াও পড়ুন:
১/১১ এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে: মাহফুজ আলম
১/১১ এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানোর ১ বছর পূর্তির আগের দিন তার দেওয়া এ পোস্ট ঘিরে আলোচনা তৈরি করেছে। পোস্টিটি ইতোমধ্যে তার প্রায় আড়াই হাজার অনুরাগী শেয়ার করেছেন।
আরো পড়ুন:
‘চল চল যমুনা যাই’— এই ধরনের রাজনীতি আর হতে দেব না: তথ্য উপদেষ্টা
জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান: উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ
মাহফুজ আলম তার পোস্টে লিখেছেন, “১/১১ এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে!”
ওই পোস্ট দেওয়ার ২৩ মিনিট পর তিনি সেখানে যুক্ত করেন, “তবে, জুলাই জয়ী হবে। জনগণের লড়াই পরাজিত হবে না “
মাহবুব হাবিব নামে একজন পোস্টটির মন্তব্যে লিখেছেন, “১/১১ এখন আর শুধুমাত্র একদিনের ঘটনা নয়, এটা একটা রাজনৈতিক মডেল। রূপ বদলেছে, কৌশল বদলেছে, কিন্তু রেশনাল সেই একই; গণতন্ত্রহীনতা, সিভিল প্রশাসনের সামরিকীকরণ এবং আইনশৃঙ্খলার নামে শাসনযন্ত্রের নিপীড়ন। আজকের রাষ্ট্র কাঠামো দিনকে দিন সেই মডেলেরই দীর্ঘায়িত সংস্করণ হয়ে উঠছে বিনা পোশাকে, কিন্তু একই হিংস্রতা ও কর্তৃত্ববাদ নিয়ে।”
এর প্রতি-উত্তরে মাহফুজ লিখেছেন, “সেটাকেই পুরাতন বন্দোবস্ত বলেছি। নতুন বন্দোবস্তের লড়াই দীর্ঘ। কোন শর্টকাট নেই; দৃশ্যমান হচ্ছে, হবে।”
ওই পোস্টটির ১২ মিনিট পর ‘জুলাই আমাদের সবার’ শিরোনামে তিনি আরেকটি দীর্ঘ পোস্ট শেয়ার করেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, “দলীয় বা আদর্শিক বিরোধের জেরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত না। এখানে শিবির ভূমিকা রেখেছে তাদের ‘জনশক্তি’ ও কো-অর্ডিনেশন দিয়ে। বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে শিবিরের কর্মীরা অভ্যুত্থানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, ক্ষেত্র বিশেষ চালিয়ে নিয়ে গেছেন।”
ছাত্রদল ও ছাত্রশক্তি সম্পর্কে তিনি লেখেন, “ছাত্রদল ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছে, প্রতিরোধ স্পটগুলোতে লড়াই করেছে, তৃণমূলে লীগকে প্রতিরোধ করেছে। ছাত্রশক্তি কো-অর্ডিনেট করছে মাঠে-সামনে থেকে, সিভিল সোসাইটি আর কালচারাল সার্কেলে এবং আস্থা তৈরি করতে পেরেছে।”
তিনি আরো লেখেন, “ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীরা সারাদেশে প্রতিরোধ গড়েছেন এবং আগের কোটা আন্দোলনের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, ছাত্র ফেডারেশন ও অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠনগুলো মাঠ ও বয়ান ধরে রাখছে। বামপন্থি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো জুলাইয়ের শেষ দিনগুলোতে মাঠে নেমে জনগণেএ মধ্যে সাহস সঞ্চার করেছে।”
মাহফুজ লেখেন, “আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্ররা রাজপথে নেমে দীর্ঘসময় প্রতিরোধ ধরে রেখেছিলেন। যাত্রাবাড়ী যার উজ্জ্বল উদাহরণ। শ্রমজীবীরা এবং প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধের স্পটগুলোতে দীর্ঘসময় লড়াই করেছে, রিক্সাচালক ও নিম্ন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষেরা প্রতিরোধ গড়েছেন।”
মাহফুজ আরো লেখেন, “নারীরা রাজপথে লড়েছে এবং আহতদের সহযোগিতা করেছে। অভিভাবক বিশেষ করে মায়েরা, বোনেরা কার্ফিউর দিনগুলোতে এবং জুলাইয়ের শেষ থেকে রাস্তায় নেমে সাহস জুগিয়েছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধের স্পটগুলোতে নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়ে অভ্যুত্থান এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিক সমিতি ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অভ্যুত্থানের পক্ষে নীরব অথচ কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।
ছাত্রলীগের কথা টেনে এ উপদেষ্টা লেখেন, “ছাত্রলীগের একটা অংশ বিদ্রোহ করে অভ্যুত্থানে যুক্ত হয়েছেন। উঠতি মধ্যবিত্ত জুলাইয়ের শেষদিকে নেমে অভ্যুত্থানকে আরো ব্যাপক করেছেন। পেশাজীবী সংগঠনগুলো এবং সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া কর্মীরা জুলাইয়ের শেষদিকে একাত্মতা প্রকাশ করে অভ্যুত্থানকে শক্তিশালী করেছেন।”
“প্রবাসী শ্রমিক, চাকুরে এবং প্রফেশনালরা জুলাইকে, বাংলাদেশের লড়াইকে বৈশ্বিক করতে ভূমিকা রেখেছেন। কবি, সাহিত্যিক, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার এবং র্যাপাররা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। জনগণের লড়াইয়ের কার কোন অবদান অস্বীকার করবেন?” -যুক্ত করেন মাহফুজ।
২০০৬ সালের শেষ দিকে দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে আবির্ভাব ঘটে ১/১১ এর। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের এ দিনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
এই সরকারের বিরুদ্ধে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে ‘মাইনাস’ করার ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক দলগুলোকে টার্গেট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। পরে অবশ্য এই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ।
গুঞ্জন আছে, ১/১১ এর কুশীলবদের দায়মুক্তি দেওয়ার শর্তে ওই নির্বাচনে বিজয়ী করা হয় আওয়ামী লীগকে। এরপর দেশে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ।
ঢাকা/মেহেদী