পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূত উইটকফের বৈঠকের পর কি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে
Published: 6th, August 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আজ বুধবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বৈঠককে ‘কার্যকর ও গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বিশেষ দূতের বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তিচুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে শিগগিরই একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। নইলে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুই দিন পর, তথা ৮ আগস্ট রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করবেন ট্রাম্প।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন ট্রাম্প। এ জন্য উইটকফ এরই মধ্যে একাধিকবার মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু আলোচনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। এ নিয়ে ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশ্যে কয়েকবার হতাশা প্রকাশ করেছেন। যেসব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনছে, তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই হুমকি নিয়ে ভারতসহ আরও যেসব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনে, তারা চাপে আছে। রাশিয়া বলেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার জ্বালানি কিনছে, তাদের ওপর ট্রাম্পের এই চাপের আইনি কোনো ভিত্তি নেই।
ট্রাম্পের হুমকি ঠেকাতে আজ বৈঠকে উইটকফের কাছে পুতিন কী প্রস্তাব দিতে পারেন, তা পরিষ্কার নয়। তবে ব্লুমবার্গ ও রাশিয়ার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য বেল জানিয়েছে, ক্রেমলিন হয়তো রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বিমান হামলার ওপর একটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা (মোরেটোরিয়াম) প্রস্তাব করতে পারে। গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো এ ধারণা নিয়ে আলাপ করেছেন।
ক্রেমলিন এ ধরনের কিছু প্রস্তাব করলে তাতে কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। কারণ, ট্রাম্প শুরু থেকেই পূর্ণ যুদ্ধবিরতি চুক্তি চাইছেন, কিয়েভও তা চাইছে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আজ পুতিন যদি বিমান হামলা বন্ধের বিষয়েও কিছুও প্রস্তাব করে, তা–ও উভয় পক্ষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক হবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে গত মে মাস থেকে নতুন করে শান্তিচুক্তির আলোচনা শুরু হয়েছে। তুরস্কে দুই দেশের কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। তবে কয়েক দফায় বন্দিবিনিময় ছাড়া সেসব আলোচনা থেকে বড় কোনো ঘোষণা আসেনি।
আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় গত মাসের শেষের দিকে রাশিয়াকে শান্তিচুক্তি করতে ৫০ দিন সময় বেঁধে দেন ট্রাম্প। পরবর্তী সময়ে তা ১০ থেকে ১২ দিনে কমিয়ে আনেন তিনি। ট্রাম্পের এ সময়সীমার মেয়াদ ৮ আগস্ট শেষ হবে। ট্রাম্প সময় বেঁধে দেওয়ার পর থেকে ইউক্রেনে হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার এসব হামলায় শুধু কিয়েভেই অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। গত সপ্তাহে রাশিয়ার এসব হামলাকে ‘চরম বিরক্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রধান সহকারী আন্দ্রি ইয়ারমাক আজ বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি এবং শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে তিনি লেখেন, ‘যুদ্ধ অবশ্যই থামাতে হবে। এই মুহূর্তে তা রাশিয়ার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
‘শেষ প্রচেষ্টা’
ক্রেমলিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পরিচিত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেয়ে পুতিনের কাছে যুদ্ধের সামরিক লক্ষ্য অর্জনই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পুতিন মনে করেন, যুদ্ধে তিনি জিততে চলেছেন। তাই ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে তাঁর মাথা নত করার সম্ভাবনা খুবই কম।
অস্ট্রিয়ান বিশ্লেষক গারহার্ড মাঙ্গট বলেন, ‘উইটকফের সফর উভয় পক্ষের জন্য সম্মানজনকভাবে মুখ রক্ষার শেষ চেষ্টা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না, উভয় পক্ষের কেউ ছাড় দেবে।’ গারহার্ড পশ্চিমা শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের একটি দলের সদস্য হিসেবে অনেক বছর ধরে পুতিনের সঙ্গে নিয়মিতভাবে সাক্ষাৎ করে আসছেন।
টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাঙ্গট রয়টার্সকে বলেন, ‘রাশিয়া যথারীতি বলবে, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তা কেবল সেই শর্তেই সম্ভব, যা তারা গত দুই-তিন বছর ধরে বলে আসছে।’
এই বিশেষজ্ঞের মতে, ‘ট্রাম্প যেসব ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিজেও চাপে থাকবেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল, গ্যাস এবং সম্ভবত ইউরেনিয়াম কেনে, এমন সব দেশের ওপরও নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।’
রাশিয়ার কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, প্রায় সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার তেমন একটা ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন পুতিন।
তবে রাশিয়ার দুটি সূত্র বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করতে চান না। তিনি বুঝতে পারছেন, এ মুহূর্তে ওয়াশিংটন ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুযোগ তিনি হয়তো হাতছাড়া করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনই এখন তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে পুতিনের কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে তিনি আপস করছেন না। এসব শর্তের কয়েকটি হলো পূর্ব ইউরোপের তথা রাশিয়ার প্রতিবেশী আর কোনো দেশকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। এটির আইনি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। অর্থাৎ ইউক্রেন ন্যাটো বা অন্য কোনো সামরিক জোটে যুক্ত হতে পারবে না। ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে যেসব ভূখণ্ড দখল করা হয়েছে, তা রাশিয়ার বলে স্বীকার করে নিতে হবে।
কিন্তু জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন কখনোই রাশিয়ার দখলদারত্ব স্বীকার করে নেবে না। তা ছাড়া ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কিয়েভের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। এতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ বন ধ ইউক র ন র সব দ শ র প রস ত ব কর ছ ন র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
পারমাণবিক বিষয়ে বক্তব্য নিয়ে ‘খুব সতর্ক’ থাকা উচিত: মস্কো
পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। আজ সোমবার দেশটি বলেছে, পারমাণবিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রত্যেকেরই ‘খুব সতর্ক’ থাকা উচিত।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিনগুলো ইতিমধ্যে যুদ্ধের দায়িত্বে আছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সামগ্রিকভাবে আমরা এমন কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না এবং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাই না।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা: বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে০২ আগস্ট ২০২৫এদিকে উত্তেজনার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আগামী বুধবার রাশিয়া সফর করতে পারেন। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা তাস এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা আগামী শুক্রবার শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে কোনো চুক্তি না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সময়সীমা শেষ হওয়ার দুই দিন আগে উইটকফের এই সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গত রোববার ট্রাম্প নিজেই উইটকফের রাশিয়া সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বুধ কিংবা বৃহস্পতিবার উইটকফ রাশিয়া সফর করতে পারেন। সফরকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে অনলাইনে বাগ্যুদ্ধের জেরে দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সাবমেরিন কোথায় মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।
আরও পড়ুনপারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন: ৮ আগস্টের আলটিমেটামের পর কী করবেন ট্রাম্প১৩ ঘণ্টা আগেউইটকফ এর আগেও বেশ কয়েকটি সফরে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। কিন্তু পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আগামীকালের সফরটি মস্কোর অনুরোধে হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে কিছু বলবে না বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। এ সফর থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়, তা-ও জানায়নি।
পেসকভ বলেছেন, ‘উইটকফ মস্কোতে এলে আমরা সব সময়ই খুশি হই। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পেরেও আমরা খুশি। আমরা এ যোগাযোগকে গুরুত্বপূর্ণ, অর্থবহ ও খুব উপকারী বলে বিবেচনা করি।’
গত সপ্তাহে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি আলোচনায় কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু পুতিনের এমন বক্তব্যের পরেও যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। এমনকি যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মুখেও তাঁর অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।