ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে রাশিয়াকে দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বুধবার (৬ আগস্ট) মস্কোয় পৌঁছেছেন। 

মস্কোর ভনুকোভো বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহযোগী এবং রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ। খবর ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরের। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে আগেই বলেছেন, শুক্রবারের (৮ আগস্ট) মধ্যে মস্কো যদি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, তাহলে রাশিয়াকে নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। এই পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে, তাদের ওপর ভারী শুল্ক আরোপ করা হবে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ভারত ও চীন।

আরো পড়ুন:

কিয়েভে আবারো রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা, নিহত ৩১

রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের

তবে ট্রাম্প এটাও বলেছিলেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য আরো একটি কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় উইটকফ এই সপ্তাহে মস্কো ভ্রমণ করতে পারেন।

চলতি বছর এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো রাশিয়া সফর করছেন মার্কিন এই বিশেষ দূত। এর আগে এপ্রিল মাসে তিনি দুইবার মস্কো সফর করেন এবং সেই সময় তিনি পুতিনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন।

উইটকফের এবারের সফরের গুরুত্বের ইঙ্গিত দিয়ে ক্রেমলিনও ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। মঙ্গলবার ক্রেমলিন জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে উইটকফের বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তবে ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আল্টিমেটামের কাছে পুতিনের মাথা নত করার সম্ভাবনা কম। কারণ তিনি ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে দখলের লক্ষ্য ধরে রেখেছেন।

ক্রেমলিনে আলোচনার সাথে পরিচিত তিনটি সূত্রের মতে, রাশিয়া জয়লাভ করছে বলে পুতিনের বিশ্বাস। সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধে অর্থনৈতিক শাস্তির ধারাবাহিক ঢেউয়ের পরে বিশ্বে আরো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে এমন সন্দেহ থেকেই পুতিনের এই পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প উদ্দীপিত হয়েছে।

দুটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার নেতা ট্রাম্পকে রাগাতে চান না এবং তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি ওয়াশিংটন ও পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করছেন। তবে এর মধ্যেও তার যুদ্ধের লক্ষ্যগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনীয় অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন সম্পূর্ণরূপে দখল করা, যেগুলোকে রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করেছে এবং তারপর একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে কথা বলা।

‘দ্য রিটার্ন অব রাশিয়া’-এর লেখক জেমস রজার্স বলেছেন, “পুতিন যদি রাশিয়ার জন্য দাবি করা চারটি অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে দখল করতে সক্ষম হন, তাহলে তিনি দাবি করতে পারেন যে ইউক্রেনে তার যুদ্ধ তার লক্ষ্যে পৌঁছেছে।”

প্রথম রুশ সূত্রটি জানিয়েছে, পুতিন মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। পুতিন এখনো আশাবাদী যে রাশিয়া আবার আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করতে এবং পশ্চিমাদের সাথে বাণিজ্য করতে পারবে।

মস্কোর বাহিনী প্রবল সামরিক চাপের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র এবং ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে। তাই পুতিন বিশ্বাস করেন না যে এখন যুদ্ধ শেষ করার সময় এসেছে।

লেখক রজার্স জানিয়েছেন, পুতিন তার রাজনৈতিক খ্যাতি এবং উত্তরাধিকার ইউক্রেনের যুদ্ধে বিনিয়োগ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা তার পূর্ববর্তী লেখা ও বিবৃতি থেকে জানি যে তিনি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার জন্য পশ্চিমা এবং বিশ্বের বাকি অংশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একটি শক্তিশালী ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে নিজেকে দেখেন।”

দ্বিতীয় রাশিয়ান সূত্রটি জানিয়েছে, “ক্রেমলিন নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ককে মূল্য দেন এবং তাকে রাগাতে চান না, তবে, তার কেবল একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রয়েছে - ট্রাম্প কেবল এটি চান বলেই পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন না।”

অস্ট্রিয়ান বিশ্লেষক গেরহার্ড ম্যাঙ্গোটের মতে, “উইটকফের এই সফর উভয় পক্ষের জন্য একটি মুখ রক্ষাকারী সমাধান খুঁজে বের করার শেষ প্রচেষ্টা। তবে, আমি মনে করি না যে উভয়ের মধ্যে কোনো আপস হবে।“ 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ য ক তর ষ ট র ইউক র ন র লক ষ য ইউক র ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পারমাণবিক বিষয়ে বক্তব্য নিয়ে ‘খুব সতর্ক’ থাকা উচিত: মস্কো

পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। আজ সোমবার দেশটি বলেছে, পারমাণবিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রত্যেকেরই ‘খুব সতর্ক’ থাকা উচিত।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিনগুলো ইতিমধ্যে যুদ্ধের দায়িত্বে আছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সামগ্রিকভাবে আমরা এমন কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না এবং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাই না।’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা: বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে০২ আগস্ট ২০২৫

এদিকে উত্তেজনার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আগামী বুধবার রাশিয়া সফর করতে পারেন। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা তাস এ তথ্য জানিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা আগামী শুক্রবার শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে কোনো চুক্তি না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সময়সীমা শেষ হওয়ার দুই দিন আগে উইটকফের এই সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

গত রোববার ট্রাম্প নিজেই উইটকফের রাশিয়া সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বুধ কিংবা বৃহস্পতিবার উইটকফ রাশিয়া সফর করতে পারেন। সফরকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে অনলাইনে বাগ্‌যুদ্ধের জেরে দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সাবমেরিন কোথায় মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

আরও পড়ুনপারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন: ৮ আগস্টের আলটিমেটামের পর কী করবেন ট্রাম্প১৩ ঘণ্টা আগে

উইটকফ এর আগেও বেশ কয়েকটি সফরে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। কিন্তু পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আগামীকালের সফরটি মস্কোর অনুরোধে হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে কিছু বলবে না বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। এ সফর থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়, তা-ও জানায়নি।

পেসকভ বলেছেন, ‘উইটকফ মস্কোতে এলে আমরা সব সময়ই খুশি হই। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পেরেও আমরা খুশি। আমরা এ যোগাযোগকে গুরুত্বপূর্ণ, অর্থবহ ও খুব উপকারী বলে বিবেচনা করি।’

গত সপ্তাহে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি আলোচনায় কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু পুতিনের এমন বক্তব্যের পরেও যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। এমনকি যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মুখেও তাঁর অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পারমাণবিক বিষয়ে বক্তব্য নিয়ে ‘খুব সতর্ক’ থাকা উচিত: মস্কো
  • উত্তেজনার মধ্যেই রাশিয়া যাচ্ছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত