ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৫৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য পাচার করা হয়েছে। কোম্পানিটি সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য পাঠায়। দাবি করা হচ্ছে, এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।

গত বছর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বদলের পর এ তথ্য পাচারের সন্ধান পায় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আপেল মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোম্পানিটির বর্তমান কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত আপেল মাহমুদ নিজেই বর্তমানে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপর দুই অভিযুক্ত হলেন ফারইস্ট লাইফে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ লোকমান ফারুক ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো.

ওসমান গনি। অজ্ঞাতনামা আরও আসামির কথা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।

কোম্পানিটির পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন ৪ আগস্ট সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর ১৯, ২১ ও ২২ ধারায় শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন।

জানতে চাইলে ফারইস্ট লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানির বর্তমান পর্ষদের সিদ্ধান্তেই মামলা হয়েছে। সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আসামিরা তথ্য পাচার করেছেন। দেশি-বিদেশি কারও প্রতিষ্ঠানের কাছেও তাঁরা এ তথ্য বিক্রি করে থাকতে পারেন বলে আমাদের সন্দেহ।’

এত দিন পর মামলা করার কারণ জানতে চাইলে ফকরুল ইসলাম বলেন, এত দিন পর ধরতে পেরেছি। আর যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি সাবলাইন নামের কোনো কোম্পানি নেই। ফলে ধরে নেওয়া যায় এটি ভুয়া কোম্পানি।

ঘটনাটি একটু পেছন থেকে দেখতে হবে। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে নতুন ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহকে বানানো হয় চেয়ারম্যান। এ পর্ষদের দুই স্বতন্ত্র পরিচালক মো. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ও বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হককে রাখা হয় পর্ষদে।

পরে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। মোজাম্মেল হক ও রফিকুল ইসলামকে নতুন পর্ষদেও রাখা হয়। এ ছাড়া পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয় বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও জুপিটার বিজনেস লিমিটেডের মনোনীত প্রতিনিধি। বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে আসেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক শেখ মামুন খালেদ।

অন্যদের মধ্যে পর্ষদ সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ও রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক লাফিফা জামাল, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সাবেক সংস্কৃতিসচিব ইব্রাহিম হোসেন খান প্রমুখ। স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত হয়ে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা হিসেবে পরিচিত শেখ কবির হোসেন। তথ্য পাচারের অভিযোগের ঘটনা এ পর্ষদের সময়ের। পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শেখ কবির হোসেন কোম্পানিটি থেকে পদত্যাগ করেন। কাছাকাছি সময়ে পদত্যাগ করেন অন্যরাও।

এজাহারে যা আছে

মামলার এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব গোপনীয় তথ্য সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করেছেন। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোল নম্বর, বেতন-ভাতা, কর্মচারীর পরিচিতি নম্বর ইত্যাদি। তথ্যগুলো সরবরাহ করায় ফারইস্ট লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন ও সম্পদ হুমকির মধ্যে রয়েছে।

এজাহারে আপেল মাহমুদের পরিচয় কোম্পানির সাবেক সিইও দেওয়া হলেও বর্তমানে যে তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য, তা উল্লেখ করা হয়নি। আপেল মাহমুদ আইডিআরএর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর।

এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ২৭ মে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে তাঁরা বেআইনিভাবে কোম্পানির কম্পিউটারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্য সাবলাইন লিমিটেডের কাছে পাঠানোর জন্য সংগ্রহ করেন। সাবলাইনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি আরও প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব তথ্য পাঠান আসামিরা।

আইডিআরএর সদস্য আপেল মাহমুদ গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ফারইস্ট লাইফের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই সাবলাইন লিমিটেডকে তথ্য দেওয়া হয়।

তবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন তা খণ্ডন করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবলাইনকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে আমরা পর্ষদ সিদ্ধান্তের কোনো প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ দেখাতে পারলে সাবেক সিইওর দায় কিছু কমবে বলে মনে হয়।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ৫৫ হ জ র ল ইসল ম সদস য র একট

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ামিতেই থাকছেন মেসি, নতুন চুক্তি চূড়ান্ত

মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি যেন থাকছেন আরও কিছুটা সময় আমেরিকায়। বুধবার ইএসপিএনের খবরে জানা গেছে, ইন্টার মায়ামির সঙ্গে কয়েক বছরের নতুন চুক্তির প্রায় শেষ ধাপে পৌঁছে গেছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। শুধু সামান্য কিছু বিষয় গুছিয়ে নিলেই ঘোষণা আসতে পারে। যদিও আর্থিক শর্তাবলীর বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

২০২৩ মৌসুমে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েছিলেন মেসি। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত তাকে পাবে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাব। তবে নতুন চুক্তি হলে হয়তো আরও দীর্ঘ সময় মায়ামির হয়ে মাঠ মাতাবেন ৩৮ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।

আরো পড়ুন:

মেসির গোলে, অ্যাসিস্টে মায়ামির জয়

মেসির পেনাল্টি মিস, মায়ামির হার

এ মৌসুমেই দুর্দান্ত ছন্দে আছেন তিনি। এমএলএসে ২১ ম্যাচে করেছেন ২০ গোল, যা লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পাশাপাশি ১১টি অ্যাসিস্টও করেছেন, যা তাকে অ্যাসিস্টের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রেখেছে। গত মৌসুমেও ছিলেন সমান উজ্জ্বল। ২০ গোলের সঙ্গে ১৬ অ্যাসিস্ট করে দুই বিভাগেই শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

ইন্টার মায়ামির হয়ে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৪৬ লিগ ম্যাচে করেছেন ৪১ গোল এবং ২৭টি অ্যাসিস্ট। আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তার গোল সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪, খেলেছেন মাত্র ৬২ ম্যাচ। মায়ামির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতা দুটোই তিনি।

ফুটবলের ইতিহাসে সর্বাধিক ৮ বার ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি গড়েছেন এক অনন্য সাম্রাজ্য। ২০০৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বার্সেলোনায় থেকে ১০টি লা লিগা ও ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতান তিনি। এরপর পিএসজির হয়ে খেলেন দুই মৌসুম, জেতেন আরও দুটি লিগ ওয়ান শিরোপা। জাতীয় দলের জার্সিতে জিতেছেন ২০২১ ও ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা এবং ২০২২ সালের বিশ্বকাপের গৌরবময় ট্রফি।

এমএলএসে আসার পরপরই ইন্টার মায়ামিকে এনে দেন ২০২৩ সালের লিগস কাপ শিরোপা। তার পরের বছর ২০২৪–এ তারা জেতে সাপোর্টার্স শিল্ড, যদিও প্লে–অফের প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিতে হয়। বর্তমানে ইন্টার মায়ামি এমএলএস ইস্টার্ন কনফারেন্সে ১৪ জয়, ৬ ড্র ও ৭ হারে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।

আগামী শনিবার ডি.সি. ইউনাইটেডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে নামবে তারা। আর দলটির আস্থার নাম একটাই- লিওনেল মেসি। এখনও যেমন আছেন, তেমনি থাকলে হয়তো মায়ামির আকাশে আরও অনেক দিন উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবেন আর্জেন্টিনার ফুটবল রাজপুত্র।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় জমি কিনবে ক্রাউন সিমেন্ট
  • টিকটকের অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে
  • কর্মী ভিসায় ট্রাম্পের ফি আরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোন দেশ
  • মার্কিন চাকরির বাজারে মন্দা, কমেছে নিয়োগ
  • আত্তীকরণ বিধিমালা সংশোধনসহ ছয় দাবি শিক্ষকদের
  • নবমের বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সময় বৃদ্ধি
  • ভাঙ্গায় থানা ভাঙচুর মামলায় বিদেশে থেকে আসামি হলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি
  • বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার তথ্য চেয়ে সকালে চিঠি, বিকেলে না
  • মায়ামিতেই থাকছেন মেসি, নতুন চুক্তি চূড়ান্ত
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন সংস্কার: আশার আলো নাকি মরীচিকা