ফারইস্ট লাইফের ৫৫ হাজার কর্মীর তথ্য পাচার, এই অভিযোগে আইডিআরএর সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 7th, August 2025 GMT
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৫৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য পাচার করা হয়েছে। কোম্পানিটি সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য পাঠায়। দাবি করা হচ্ছে, এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
গত বছর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বদলের পর এ তথ্য পাচারের সন্ধান পায় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আপেল মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোম্পানিটির বর্তমান কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত আপেল মাহমুদ নিজেই বর্তমানে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপর দুই অভিযুক্ত হলেন ফারইস্ট লাইফে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ লোকমান ফারুক ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো.
কোম্পানিটির পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন ৪ আগস্ট সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর ১৯, ২১ ও ২২ ধারায় শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন।
জানতে চাইলে ফারইস্ট লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানির বর্তমান পর্ষদের সিদ্ধান্তেই মামলা হয়েছে। সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আসামিরা তথ্য পাচার করেছেন। দেশি-বিদেশি কারও প্রতিষ্ঠানের কাছেও তাঁরা এ তথ্য বিক্রি করে থাকতে পারেন বলে আমাদের সন্দেহ।’
এত দিন পর মামলা করার কারণ জানতে চাইলে ফকরুল ইসলাম বলেন, এত দিন পর ধরতে পেরেছি। আর যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি সাবলাইন নামের কোনো কোম্পানি নেই। ফলে ধরে নেওয়া যায় এটি ভুয়া কোম্পানি।
ঘটনাটি একটু পেছন থেকে দেখতে হবে। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে নতুন ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহকে বানানো হয় চেয়ারম্যান। এ পর্ষদের দুই স্বতন্ত্র পরিচালক মো. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ও বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হককে রাখা হয় পর্ষদে।
পরে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। মোজাম্মেল হক ও রফিকুল ইসলামকে নতুন পর্ষদেও রাখা হয়। এ ছাড়া পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয় বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও জুপিটার বিজনেস লিমিটেডের মনোনীত প্রতিনিধি। বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে আসেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক শেখ মামুন খালেদ।
অন্যদের মধ্যে পর্ষদ সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ও রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক লাফিফা জামাল, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সাবেক সংস্কৃতিসচিব ইব্রাহিম হোসেন খান প্রমুখ। স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত হয়ে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা হিসেবে পরিচিত শেখ কবির হোসেন। তথ্য পাচারের অভিযোগের ঘটনা এ পর্ষদের সময়ের। পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শেখ কবির হোসেন কোম্পানিটি থেকে পদত্যাগ করেন। কাছাকাছি সময়ে পদত্যাগ করেন অন্যরাও।
এজাহারে যা আছেমামলার এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব গোপনীয় তথ্য সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করেছেন। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোল নম্বর, বেতন-ভাতা, কর্মচারীর পরিচিতি নম্বর ইত্যাদি। তথ্যগুলো সরবরাহ করায় ফারইস্ট লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন ও সম্পদ হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এজাহারে আপেল মাহমুদের পরিচয় কোম্পানির সাবেক সিইও দেওয়া হলেও বর্তমানে যে তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য, তা উল্লেখ করা হয়নি। আপেল মাহমুদ আইডিআরএর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর।
এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ২৭ মে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে তাঁরা বেআইনিভাবে কোম্পানির কম্পিউটারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্য সাবলাইন লিমিটেডের কাছে পাঠানোর জন্য সংগ্রহ করেন। সাবলাইনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি আরও প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব তথ্য পাঠান আসামিরা।
আইডিআরএর সদস্য আপেল মাহমুদ গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ফারইস্ট লাইফের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই সাবলাইন লিমিটেডকে তথ্য দেওয়া হয়।
তবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন তা খণ্ডন করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবলাইনকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে আমরা পর্ষদ সিদ্ধান্তের কোনো প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ দেখাতে পারলে সাবেক সিইওর দায় কিছু কমবে বলে মনে হয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ৫৫ হ জ র ল ইসল ম সদস য র একট
এছাড়াও পড়ুন:
পণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের কাছে ইয়াংওয়ান, অর্ধবিলিয়ন ছাড়িয়ে হা-মীম, মণ্ডল ও ডিবিএল
বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানটি দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়ী কিহাক সাংয়ের মালিকানাধীন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের মালিকানাধীন হা-মীম গ্রুপ।
ইয়াংওয়ান ও হা-মীম ছাড়াও রপ্তানিতে সেরা দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা বাকি আট শিল্প গ্রুপ হচ্ছে মণ্ডল গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, অনন্ত, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, পলমল গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ ও মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ।
সেরা দশে থাকা নয়টি শিল্প গ্রুপের রপ্তানির ৯০ থেকে ১০০ শতাংশই তৈরি পোশাক। এই তালিকায় ব্যতিক্রম শুধু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে শুরু করে জুতা, আসবাব, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল পণ্য—প্রায় সবই আছে শিল্প গ্রুপটির রপ্তানির তালিকায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রথম আলো বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর এই তালিকা তৈরি করেছে। এনবিআরের পরিসংখ্যান থেকে স্থানীয় বা প্রচ্ছন্ন রপ্তানি ও নমুনা রপ্তানি বাদ দিয়ে প্রকৃত রপ্তানির হিসাব নেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশ থেকে মোট ৪৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ দশ গ্রুপের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ৫২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১১ শতাংশ।
গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠী