সিরিয়ায় বিমান ঘাঁটি করবে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 6th, November 2025 GMT
সিরিয়ায় বিমান ঘাঁটি স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় হওয়া একটি নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য এই ঘাঁটি স্থাপন করা হবে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছয়টি সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
দামেস্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির পরিকল্পনাটি ইরানের মিত্র দীর্ঘদিনের নেতা বাশার আল-আসাদের গত বছরের পতনের পর সিরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের একটি লক্ষণ হবে। ঘাঁটিটি দক্ষিণ সিরিয়ার কিছু অংশের প্রবেশপথে অবস্থিত, যেখানে ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে একটি অ-আগ্রাসন চুক্তির অংশ হিসেবে একটি সামরিক নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হচ্ছে।
ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে সাক্ষাৎ দেবেন।
রয়টার্স ঘাঁটির প্রস্তুতির সাথে পরিচিত ছয়টি সূত্রের সাথে কথা বলেছে, যার মধ্যে দুই পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং একজন সিরিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য ইসরায়েল-সিরিয়া চুক্তি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করার জন্য ঘাঁটিটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।
পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্যের অনুরোধের জবাবে পেন্টাগন এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট) কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য সিরিয়ায় আমাদের প্রয়োজনীয় অবস্থান ক্রমাগত মূল্যায়ন করছে এবং (আমরা) অবস্থান বা (কোথায়) বাহিনী কাজ করে তার সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করি না।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।
বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।
বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।