শচীন টেন্ডুলকার খেলা ছেড়েছেন ২০১৩ সালে। এক যুগ পরও সবচেয়ে বেশি রান (৩৪৩৫৭), সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (১০০), সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্য ম্যাচসহ (৭৬) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অনেক রেকর্ডই তাঁর দখলে। দুই যুগ বিশ্ব ক্রিকেটে পদচারণ করা টেন্ডুলকারের শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে টেস্ট আঙিনায় পা রাখা টেন্ডুলকারের শুরুটা ঘটনাবহুল। যা লেখা আছে ২০১৪ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে-তে।কী লিখেছেন শচীন টেন্ডুলকার

ভারতের ঘরোয়া চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে উজ্জীবিত ছিলাম। আত্মবিশ্বাস নিয়েই পাকিস্তান সফরে যাই। বয়স কম ছিল বলে কোনো বাড়তি চাপ ছিল না। ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট ঘিরে থাকা রাজনৈতিক বোঝাও বুঝতাম না। আমার কাছে এটা নিছকই প্রথম সফর ছিল।

আসলে কেউ ভাবেনি এত অল্প বয়সে আমি একাদশে জায়গা পাব। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে তো নয়ই। কারও ধারণা ছিল ওয়ানডেতে হয়তো সুযোগ পাব। তা–ও দলের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করছে। আবার অনেকে ভেবেছিল আমাকে শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আবহ নেওয়ানোর জন্যই দলে রাখা হয়েছে।

করাচিতে প্রথম টেস্টের আগের রাতে অধিনায়ক শ্রীকান্তের কাছ থেকে একাদশে থাকার খবর পাই।

ওই অনুভূতি ভাষায় ধরা কঠিন। আমি ১১ জন সৌভাগ্যবান মানুষের একজন হয়ে গেলাম, যাদের কাঁধে দেওয়া হয়েছিল ১০০ কোটি ভারতীয়কে প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব। এটি ছিল বিশাল সম্মান। এমন সম্মান প্রত্যেক জাতীয় দলের খেলোয়াড়ই স্বপ্ন দেখে।

(টিম হোটেলে) আমার রুমমেট ছিল ফাস্ট বোলার সলিল আঙ্কোলকার, যিনি পরে অভিনেতা হয়েছিলেন। সলিলেরও পরদিন অভিষেক হবে। ম্যাচের আগের রাতে আমাদের কারও ঘুম হয়নি। দুজনেই জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছিলাম, জানতাম—এটি এমন একটি সুযোগ, যা হয়তো আমাদের জীবনকে চিরদিনের মতো বদলে দিতে পারে।

প্রথম টেস্ট, করাচি, ১৫–২০ নভেম্বর ১৯৮৯

পাকিস্তান টস জিতে সবুজাভ উইকেটে ব্যাটিং বেছে নেয়, তাই ভারতের হয়ে প্রথমবার মাঠে নামতে আমার খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ঘটনাচক্রে এটি ছিল কপিল দেবের ১০০তম টেস্ট ম্যাচ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার প্রথম দিন নাটক ছাড়া কাটেনি। বরং একটি বিশেষ ঘটনা আমার মনে অস্বস্তিকর ছাপ রেখে যায়। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনে দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি সালোয়ার–কামিজ পরে মাঠে ঢুকে সরাসরি কপিল দেবের কাছে চলে আসে। কপিল কেন পাকিস্তানে এসেছে এ জন্য তাকে গালাগাল করতে থাকে। তখন কপিল বল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরে আমাদের বলেন, তিনি ওই লোকটিকে বলেছেন আমাকে খেলতে দাও।

শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেক টেস্ট ছিল কপিল দেবের ক্যারিয়ারের ১০০তম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ন ড লক র র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত সুদানের এল-ফাশার, ৮৯ হাজার মানুষ বাস্তুচু

সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশার এখন এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) দখলে নেওয়ার পর শহরটিতে শুরু হয়েছে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্যমতে, শত শত নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, নারীরা হয়েছেন যৌন সহিংসতার শিকার, ঘরবাড়ি ও শরণার্থী ক্যাম্পে চলছে অগ্নিসংযোগ।

একসময় প্রাণচঞ্চল এই শহর এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রও আরএসএফের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। শুধু একটি হাসপাতালেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ। খবর আলজাজিরা ও আনাদোলুর। 

সুদানে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, আরএসএফ গত মাসে এল-ফাশার দখল করার পর থেকে ‘নৃশংস হামলা’ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শনিবার (৮ নভেম্বর) সুদানে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি লি ফাং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “এল-ফাশার শোকের শহরে পরিণত হয়েছে।” 

তিনি বলেন, “১৮ মাস ধরে অবরোধ ও যুদ্ধে বেঁচে থাকা বেসামরিক নাগরিকরা এখন অকল্পনীয় মাত্রার নৃশংসতা সহ্য করছে।”

এই সতর্কতা এমন সময় এলো যখন সাহায্যকারী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে যে, এল-ফাশার থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ তাওয়িলা শহরে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। অনেকেরই খাদ্য, ওষুধ, আশ্রয় সামগ্রী এবং মানসিক সহায়তার তীব্র প্রয়োজন।

রবিবার (৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, এল-ফাশার শহর থেকে নতুন করে আরো ৭ হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষ পালিয়েছে। যার ফলে গত মাসে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ কর্তৃক শহরটি দখলের পর থেকে মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজারে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘের সংস্থাটির তথ্যানুসারে, ৫ থেকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে এল-ফাশার থেকে আরো ৭ হাজার ৭৫ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাস্তুচ্যুতরা উত্তর দারফুরের তাওয়িলা, মেলিট এবং সারাফ ওমরা সহ একাধিক এলাকায় পালিয়ে গেছে।

আইওএম জানায়, ২৬ অক্টোবর আরএসএফ এল-ফাশার দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৮ হাজার ৮৯২ জন লোক শহর ছেড়ে পালিয়েছে। আরএসএফের দখলের আগে শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ছিল।

গত ২৮ অক্টোবর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক গবেষণাগারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এল-ফাশারে ‘গণহত্যার’ প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে স্যাটেলাইট ছবিতে দৃশ্যমান রক্তের স্রোতও রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক গত শুক্রবার বলেন, এখনও আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের শহরটি থেকে বের হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমি আশঙ্কা করছি যে, শহরের মধ্যে হত্যযজ্ঞ, ধর্ষণ ও জাতিগতভাবে সহিংসতার মতো জঘন্য নৃশংসতা অব্যাহত রয়েছে।” 

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতা দখল নিয়ে সংঘাত শুরু হয়, যা পরিণত হয় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে। জাতিসংঘ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

দুর্ভোগের মাত্রা এতটাই বিস্তৃত যে জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলের বেশ কয়েকটি মধ্যস্থতা সংঘাত শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ