জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে কেউ আটকাতে পারবে না
Published: 24th, September 2025 GMT
জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে কেউ আটকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের সফলতা অনেক। ইতিমধ্যে অনেক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কিছু অস্ত্র বাইরে রয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে আরও অস্ত্র উদ্ধার হয়ে যাবে। আগামী নির্বাচনে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী থাকবে। এখন ৩০ হাজার মাঠে আছে। সেনাবাহিনীর সংখ্যা ওই সময় এক লাখ হবে। সঙ্গে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের লোকজন থাকবেন। নির্বাচন নির্ভর করে জনগণের ওপর। জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে কেউ আটকাতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়ে গেলে নির্বাচন হতে সুবিধা। এরপর নির্বাচনী কর্মকর্তা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু–সুন্দর নির্বাচন হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যদি সত্য ঘটনা প্রচার করেন, তবে গুজব ছড়ানোর সুযোগ কমে যাবে। অতীতে পাশের দেশ থেকে অনেক উল্টাপাল্টা খবর আসত। কিন্তু আপনারা কাউন্টার দেওয়ায় তা অনেক কমেছে। তবু তারা আবার চেষ্টা করতে পারে। আমি আপনাদের অনুরোধ করব, এবারও আপনারা সত্য তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন। আমি ডিসি ও এসপি সবাইকে বলেছি, সত্য তথ্য যেন গণমাধ্যমে যায়। সত্য ঘটনা প্রকাশ না হলে গুজব তৈরি হতে পারে।’
শান্তিপূর্ণ দুর্গাপূজার আশা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর হবে বলে আমরা আশা করছি। কোনো জায়গায় বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। দুর্গাপূজা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এ জন্য এর পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরি। আমি অন্যান্য ধর্মের মানুষদেরও অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন সহযোগিতা করেন, যাতে পূজার আয়োজন শান্তিপূর্ণভাবে হয় এবং ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষা পায়।’
মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি ও মাদক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনারা এখন সীমান্ত এলাকায় নেই, পুরোটা আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছে। আরাকান আর্মি মাদকের ওপর নির্ভরশীল। সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মাদক আসে। এর পরিবর্তে আমাদের দেশ থেকে চাল, শাক, ওষুধপত্র ও অন্যান্য জিনিস যায়। আমরা আলোচনা করছি, যাতে এগুলো আর না যায় এবং মাদকও ঢুকতে না পারে। মাদক আমাদের সমাজকে ধ্বংস করছে। এ জন্য আমরা ফোর্স বাড়িয়েছি, মাদক সমস্যা কমে আসবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ কোনো হুমকির মুখে নেই। আমাদের লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। যত তাড়াতাড়ি তাদের ফেরত পাঠানো যাবে, তত দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’
চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ ঢাকায় মিছিল হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের আইনের আওতায় আনতে। তারা সহজে জামিন না পায়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় মিছিলের সংখ্যা বাড়বে, সবাই মাঠে নামবে। তবে ছোটখাটো এসব (ছাত্রলীগের) মিছিল আর হবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দেশ দেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর
জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ হাবিবুর রহমানের এমন নির্দেশনা দেওয়া একটি অডিও শোনানো হয়েছে। অডিওটি দুবার শোনানো হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আজকে ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন মো. কামরুল হাসান। তিনি ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর কর্মরত আছেন।
জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে কামরুল হাসান ট্রাইব্যুনালকে একটি অডিও রেকর্ড দেন। জবানবন্দিতে কামরুল হাসান উল্লেখ করেন, সেই অডিওতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, তিনি (কামরুল হাসান) এবং অন্যদের বার্তা আদান-প্রদানের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।
জবানবন্দিতে কামরুল হাসান উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৭ জুলাই তিনি ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁর ডিউটি ছিল। বেলা বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের জন্য তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যার সাংকেতিক কল সাইন ভিক্টর মাইক ওয়ানে (victor mike-1) সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন, চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন। তখন বার্তাবাহক হিসেবে তিনি ও তাঁর দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে ওই বার্তা পৌঁছে দেন।
কামরুল হাসানের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তাঁকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অডিও বার্তা যেটা শুনলাম, সেখানে উনি (হাবিবুর রহমান) বলেছেন যে জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করতে বলেছেন। বিষয়টিকে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) কীভাবে ব্যাখ্যা করছে?
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘দেখেন, এই জায়গাটা মামলার আরগুমেন্ট করার জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে, না ওপরে, সেটা অবান্তর।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাক্ষী বলেছেন, ডিএমপি কমিশনার চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অডিওতে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি।
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, চায়নিজ রাইফেলের কথাটা উনি বলেছেন বা বলেননি, এই বিষয়টা ম্যাটার অব আরগুমেন্ট (যুক্তিতর্কের বিষয়)। উনি বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা যখন আরগুমেন্ট করবেন, তখন বিষয়টা ফেস (মোকাবিলা) করবেন।