রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ কর্মসূচির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রশিবির।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

আরো পড়ুন:

৭ দিনের জন্য রাবির ‘শাটডাউন’ স্থগিত

রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া ছুটি বাতিল

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “শাটডাউন কর্মসূচি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে জিম্মি করা হচ্ছে। বহু আগেই নিষ্পত্তি হওয়া পোষ্য কোটা ইস্যু আবার সামনে এনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “একইসঙ্গে একটি ছাত্র সংগঠন তাদের মাদার সংগঠনের সহায়তায় নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মূলত এ ধরনের পদক্ষেপের উদ্দেশ্য শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা এবং দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত নির্বাচন বানচাল করা ছাড়া আর কিছু নয়।”

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন বানচাল করা ও শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একটি গোষ্ঠী পোষ্য কোটার মতো মীমাংসিত একটি ইস্যু সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম অচল করে দিয়েছে। কতিপয় শিক্ষক তাদের রাজনৈতিক ব্যানারে সক্রিয় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের উসকানিমূলক বক্তব্যে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করছে।”

তিনি বলেন, “কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের এ ধরনের শাটডাউন কর্মসূচি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চাচ্ছে, যদি আবারো ক্লাস, পরীক্ষা, লাইব্রেরি ও রাকসু নির্বাচনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম চালু করতে চাও, তবে অবশ্যই তাদের ‘পোষ্য কোটা’ মেনে নিতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “একটি ছাত্র সংগঠন তাদের মাদার সংগঠনের সহায়তায় রাকসু নির্বাচন বানচাল করার ফন্দি আঁটছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রও অব্যাহত রেখেছে তারা।”

এদিকে, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার’ বিচার নিশ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার (পোষ্য কোটা) দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো কম্পিলিট শাটডাউন পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এতে পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অবস্থান নেন তারা। গতকাল প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেও সমাধান না হওয়ায় তাদের এই কর্মবিরতি পালন করতে দেখা যায়।

পরে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় অফিসার সমিতির সভাপতি মো.

মোক্তার হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল ও শিক্ষক লাঞ্ছনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে চলমান ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি সাত দিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

তবে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থী দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব উপ-উপাচার্যকে লাঞ্ছনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও নামধারী কিছু ছাত্র আমাদের সহকর্মীদের আটকে রেখেছিল। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

পোষ্য কোটা ইস্যুতে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আজ সোমবার বেলা ১১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে তাঁরা এ দাবি জানান। সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বর্জন করে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করা হচ্ছে।

মানববন্ধনে শিক্ষক-কর্মকর্তারা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনটি দাবি হলো—শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে; যাঁদের ছাত্রত্ব শেষ, তাঁদের সনদ বাতিল করতে হবে এবং যাঁরা রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী, তাঁদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ছাত্র নামধারী কিছু সন্ত্রাসী পরিকল্পিতভাবে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যত দিন পর্যন্ত শাস্তি দৃশ্যমান না হবে, তত দিন আন্দোলন চলবে।

ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আম্মার ও তাঁর সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। শনিবার শিক্ষকদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, আমরা যদি এর সুষ্ঠু বিচার না করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদেরও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘গত নয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রহসনের অনেক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যার একটিও আলোর মুখ দেখেনি। তাই আমরা আর ওই সিদ্ধান্তে ক্ষান্ত হচ্ছি না। শিক্ষকদের ওপর হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখেই আমরা ক্ষান্ত হব।’

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক দিল-আরা হোসেন বলেন, ‘আমার সহকর্মী অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন একজন সহনশীল মানুষ। তাঁর ওপর হামলাটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। আমি তাঁর বিভাগের সভাপতি হিসেবে এসব ছাত্র নামের সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে আজ সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ।

এর আগে গতকাল পোষ্য কোটা নিয়ে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কোটা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পাশাপাশি শনিবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫ সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাঙ্গায় সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো মানববন্ধন
  • এবার সাত কলেজে একযোগে মানববন্ধন করলেন শিক্ষকেরা
  • মির্জাগঞ্জে দুই চিকিৎসকের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ
  • পাবনায় বিএনপি নেতার চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
  • রাবিতে বহাল থাকছে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের
  • রংপুরে সাংবাদিককে হেনস্থার প্রতিবাদে মানববন্ধন, থানায় মামলা
  • ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন