ছয় বিভাগে এগিয়ে বিএনপি, একটিতে জামায়াত
Published: 24th, September 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন—এমন প্রশ্নে দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ছয়টি বিভাগের উত্তরদাতারা বিএনপিকে এগিয়ে রেখেছেন। জামায়াত এগিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগে। আর বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ।
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে ‘জনগণের নির্বাচন–ভাবনা’ শীর্ষক জরিপের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। জরিপটি পরিচালনা করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিং। সহযোগিতা করেছে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (বিআরএআইএন)। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার।
জরিপে অংশ নেওয়া ১০ হাজার ৪১৩ জনের মধ্যে ৪ হাজার ৭২১ জন ভোটে নিজেদের পছন্দের দলের কথা জানিয়েছেন। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। এসব বিভাগে বিএনপিকে সমর্থন করেছেন যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার।
অন্যদিকে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার সমর্থন নিয়ে রংপুর বিভাগে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। আর ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার সমর্থনে বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোটারের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির পক্ষে সমর্থন বেড়েছে, উল্টো ঘটেছে জামায়াতের ক্ষেত্রে। আর শিক্ষা বাড়ার সঙ্গে ভোটাররা মত দিয়েছেন জামায়াতের পক্ষে, উল্টো ঘটেছে বিএনপির বেলায়। জেন-জি ও নারীদের মধ্যে জামায়াতের সমর্থন বেশি।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, আগামী সরকার গঠনের জন্য সবচেয়ে যোগ্য দল বিএনপি। জামায়াতকে যোগ্য মনে করেন ২৮ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা। ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা যোগ্য দল মনে করেন আওয়ামী লীগকে। আর এনসিপিকে যোগ্য মনে করেন ৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি
জরিপে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় রাজনীতি নিয়ে সন্তুষ্টির বিষয়ে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এতে এগিয়ে জামায়াত। জামায়াতের কার্যক্রমে শতভাগ, অনেক ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর দলটির কার্যক্রমে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এরপরই রয়েছে এনসিপি। এনসিপির কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর একেবারেই সন্তুষ্ট নন ১৭ শতাংশ।
অন্যদিকে বিএনপির কার্যক্রমে শতভাগ, অনেক ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা। আর দলটির কার্যক্রমে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও উত্তরদাতারা সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে। দলটির কার্যক্রমে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা। তবে দলটির কার্যক্রমে শতভাগ, অনেক ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ২৬ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা।
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
জরিপে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁরা যদি ভোট না দেন, তাহলে কেন দেবেন না। উত্তরে সবচেয়ে বেশি ৩২ দশমিক ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থার অভাবের কথা বলেছেন ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা। আর পছন্দের দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
আরও পড়ুন‘জনগণের নির্বাচন–ভাবনা’ জরিপ: কোন দলের প্রতি কত সমর্থন২ ঘণ্টা আগেভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
জরিপে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক হবে, সে প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ উত্তরদাতাই দুই দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চেয়েছেন। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান ৭২ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা। আর পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ এম শাহান, ভয়েস ফর রিফর্মের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর, বিআরএআইএনের নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাইমা ইসলাম।
আরও পড়ুনপিআর সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশের২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপিতে ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্যাগী, স্বচ্ছ, হামলা-মামলার শিকার ও কারাভোগকারী শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি ২৩৭টি মনোনয়ন ঘোষণা করলেও এখনও সুযোগ রয়েছে শিক্ষক সমাজকে মূল্যায়ন করার। আমরা আশা করবো বিএনপি দীর্ঘদিনের নির্যাতিত ত্যাগী শিক্ষকদের মনোনয়নের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক মর্যাদা রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যজোট সবসময় প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছে। যখন গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ ছিল, তখনও আমরা থেমে থাকিনি। ‘আমরা বাংলাদেশী’ এবং ‘প্রফেশনাল মুভমেন্ট’-এর মতো নতুন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। বিগত ১৭ বছর শিক্ষক নেতাদের ওপর নির্যাতন, মামলা, হয়রানি, চাকরিচ্যুতি, হামলা ও কারাবরণ- সব কিছুই আমরা দেখেছি, সহ্য করেছি। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো থেকে পিছপা হইনি। এই ত্যাগ-তিতিক্ষা কেবল শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন, ছাত্রসমাজ এবং লাখো অভিভাবকের স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করে।’’
লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, সংবিধান অনুযায়ী জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আর সেই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। জাতীয় সংসদে যদি সৎ, স্বচ্ছ, দেশপ্রেমিক, নীতিবান ও জনদরদী প্রতিনিধি না থাকেন তাহলে দেশ কখনও সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারে না। শিক্ষকেরা দেশের বিবেক। শিক্ষকরা সমাজের নৈতিক ও বৌদ্ধিক নেতৃত্ব দেন। তাই জাতীয় সংসদে শিক্ষকদের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল ইতোমধ্যেই ৩১ দফা প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মানবাধিকার, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের যে পরিকল্পনা দলটি ঘোষণা করেছে, তাতে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ থাকলে নীতিনির্ধারণ আরও শক্তিশালী হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ১৭ বছর শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের বহু নেতা হামলার শিকার হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, দীর্ঘ কারাবাসসহ মারাত্মক হয়রানি সহ্য করেছেন। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, পরিবারে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। কিন্তু তারা আন্দোলনের পথ ছাড়েননি। আজ যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে, যখন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা সামনে, তখন এই ত্যাগী, স্বচ্ছ, নীতিবান শিক্ষক নেতাদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যারা ত্যাগ করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলেছেন, তারাই নতুন রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারেন।’’
এমন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে তারা নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের ত্যাগী শিক্ষককে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।
ঢাকা/নাজমুল//