দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি
Published: 30th, September 2025 GMT
বিরোধীদের নিয়ে কড়া বাক্য উচ্চারণের জন্য বহুল আলোচিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য রীতিমতো শঙ্কার বার্তা নিয়ে হাজির হলেন।
দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেছেন, “বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অনেকের আত্মীয়-স্বজনের খবর আমরা পাচ্ছি। উপদেষ্টাদের কে কে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তা জনগণের সামনে আনতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি।”
আরো পড়ুন:
বক্স অফিসে ‘ওজি’ সিনেমার দাপট: কে কত টাকা পারিশ্রমিক নিলেন?
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভারতের ভিসা জটিলতা কমবে: হাইকমিশনার
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতীক ইস্যুতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নাসীরুদ্দীন।
যে প্রতীক ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে, সে বিষয়ে জোর দিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, “শাপলা পেতে কোনো আইনি বাঁধা দেখছি না। এখানে ইসি স্বৈরাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। প্রতীক প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যাখ্যা দিয়েই কমিশনকে যেতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এনসিপির সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ইসি। তারা একটি দলের পক্ষ নিয়ে তাদের সুবিধা দিচ্ছে।”
রাকঢাক ছাড়াই অভিযোগের তীর ছুড়ে নাসীরুদ্দীনের সোজা কথা, “অসাংবিধানিক আচরণের জন্য ইসি কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনার প্রসঙ্গ এলে এক্ষেত্রেও সেটি সরাসরি খারিজ করে দিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “একীভূত হওয়ার সুযোগ নেই। এনসিপিতে যোগ দিতে হলে সদস্য ফরম পূরণ করতে হবে। নির্বাচনেও এনসিপির হয়েই দাঁড়াতে হবে।”
অবশ্য এনসিপির অন্য নেতারা বলে আসছেন, একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। কোনো সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতাকে চ্যালেঞ্জন করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “আওয়ামী লীগ, ভারত, বিএনপি ও নির্বাচন কমিশন সব এক পক্ষে। এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।”
বিএনপির বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দলটি ভারতের পক্ষে কাজ করছে, তাদের বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করার আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনীতির মাঠে বিরোধীদের নিয়ে কড়া বাক্য উচ্চারণ করায় এনসিপির নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাসীরুদ্দীন। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছিলেন, আগে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান ছিল, এখন শুনছি কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে।
নাসীরুদ্দীনের ওই মন্তব্যের জেরে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয় সালাহউদ্দিন আহমেদের জন্মভূমি কক্সবাজারের চকরিয়ায়।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প উপদ ষ ট আওয় ম ল গ এনস প র উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন
পর্তুগাল আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটা পর্তুগিজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে, এমনকি ড্র করলেও সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু হারলে নেমে যেতে হতে পারে প্লে-অফের পরীক্ষায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পাচ্ছে না পর্তুগাল। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আজ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
তবে রোনালদো ও পর্তুগালের জন্য বড় বিপদ সামনে। লাল কার্ডের জন্য এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সবাইকেই কাটাতে হয়। শাস্তির মূল পরিমাণ ঠিক কত ম্যাচের বা দিনের, সেটি অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে পরে ঘোষণা করা হয়। আর এখানেই শঙ্কা রোনালদোকে নিয়ে।
আইরিশ ফুটবলার দারা ও’শেয়ারকে আঘাতের দায়ে রোনালদো যদি দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তাহলে পর্তুগাল বিশ্বকাপে উঠলে গ্রুপ পর্বের একটি বা দুটি ম্যাচই তিনি মিস করবেন। আর গ্রুপ পর্বে ম্যাচ যেহেতু মাত্র তিনটি, দল আগেভাগে খারাপ করে বিদায় নিশ্চিত হলে রোনালদোর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি কি সত্যিই তৈরি হতে পারে? রোনালদোর বিশ্বকাপে ১-২ মিস করার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হবে জুনে, যা এখনো ছয় মাসেরও বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে পর্তুগাল ম্যাচও খেলবে। আর রোনালদোকে আসলে কত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে, সেটি জানা যাবেই–বা কবে?
রোনালদোর অপরাধ কী ছিলআয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৬১তম মিনিটে ও’শেয়ারকে কনুই দিয়ে মেরেছেন রোনালদো। রেফারি গ্লেন নাইবার্গ এ ঘটনায় তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে ভিএআরে ঘটনা পর্যালোচনার পর রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টান, দেখান লাল কার্ড। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলের অর্থ হচ্ছে, রেফারির কাছে ঘটনাটি গুরুতরই মনে হয়েছে।
শাস্তি কীলাল কার্ডের ন্যূনতম শাস্তি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঠিক করে সেটি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাড়বে। বাড়লে কতটা? ফিফা তাদের শৃঙ্খলাবিধির ১৪.১ ধারা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ধারার ‘ই’ অনুচ্ছেদ অনুসারে, গুরুতর ফাউল খেলার জন্য দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই নিয়মটি বল দখলের জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক চ্যালেঞ্জের আওতায় পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির কথা বলা যেতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের হয়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়—একটি লাল কার্ডের জন্য, অন্যটি গুরুতর ফাউলের জন্য।
পর্তুগালের জন্য বিপদ হচ্ছে রোনালদোর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। ফিফা আইনের অধীনে তাঁর কনুই মারাকে সহিংস আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪.১ ধারার ‘এইচ’ এবং ‘আই’ অনুচ্ছেদে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে।
এইচ. সহিংস আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ।
আই. আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ বা উপযুক্ত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে কনুই মারা, ঘুষি মারা, লাথি মারা, কামড়ানো, থুতু দেওয়া, বা কোনো খেলোয়াড় বা রেফারি নন এমন কাউকে আক্রমণ করা অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু রোনালদো আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন, তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়্গে পড়তে পারেন, যার ফলে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে আর্মেনিয়ার তিগরান বারসেঘিয়ানকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়কে সামান্য মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।
পর্তুগাল আজই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলে কী হবেআজ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জিতলে বা ড্র করলে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা হয়ে যাবে পর্তুগালের। এর অর্থ হচ্ছে, পর্তুগাল তাদের পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের জুনে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে ক্ষেত্রে রোনালদো গ্রুপ পর্বের প্রথম একটি বা দুটি ম্যাচ (মোট নিষেধাজ্ঞা দুই বা তিন ম্যাচ সাপেক্ষে) মিস করবেন। এর আগে মার্চে ফিফা উইন্ডো আছে। তবে সে সময় পর্তুগাল খেললেও তা হবে ‘প্রীতি ম্যাচ’। রোনালদোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই।
কবে জানা যাবে রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কত ম্যাচেরঘটনার কত দিনের মধ্যে ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি ঘোষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। সাধারণত, ঘটনার পরবর্তী মাসের শুরুতে রায় পাওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর। সে দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত (ড্র) হবে। এর কাছাকাছি সময়েই রোনালদো তাঁর নিষিদ্ধ ম্যাচসংখ্যার খবর পেয়ে যাবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলার কি কোনো উপায়ই থাকবে নাপ্রথম কথা, রোনালদো এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পাননি। যদি অন্তত দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তবেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকে না খেলার প্রশ্ন আসবে। তবে অপরাধের ধরনের কারণে ধরে নেওয়া যায় নিষেধাজ্ঞা তিনি পেতে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের বিশ্বকাপে জায়গা করাও একটা বিষয়। আজ পর্তুগাল যদি আর্মেনিয়াকে হারাতে না পারে এবং একই গ্রুপে হাঙ্গেরি আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পর্তুগাল গ্রুপে পিছিয়ে ইউরোপিয়ান প্লে-অফে নেমে যাবে।
সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের পরবর্তী দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে প্লে-অফ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। নিষেধাজ্ঞা পেলে রোনালদো এই ম্যাচগুলো মিস করবেন। দল বিশ্বকাপে গেলে সেখানে শুরু থেকেই খেলতে পারবেন ‘সিআরসেভেন’। কিন্তু যে প্লে-অফের ওপরে বিশ্বকাপে খেলা, না খেলা নির্ভর করবে, সেই ম্যাচে না খেলতে পারাও তো রোনালদো এবং পর্তুগালের জন্য ধাক্কা।