সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দশম করাসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল। এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে এ নিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনরত শিক্ষকদের একটি অংশের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। আগের দিন রোববারও শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁরা ঢাকার কর্মসূচি স্থগিত করে বিদ্যালয়ে তালা ঝোলানোর কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। কিন্তু একজন শিক্ষক নেতা কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলে ফেলেন। এখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, ঢাকার কর্মসূচি আপাতত থাকছে না।

এর আগে সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়, সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীত করার বিষয়ে অর্থ বিভাগের সচিব বলেছেন, সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি জাতীয় বেতন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যা বেতন কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে। কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। আর শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সচিব জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। এ ছাড়া শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দিন ধরে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি গত রোববার থেকে বিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি শুরু হয়। শিক্ষকদের এই টানা আন্দোলনে চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, এমনটি চলতে থাকলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষার ওপর এর প্রভাব পড়বে।

সহকারী শিক্ষকদের তিনটি দাবি হলো—এক.

বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করা, দুই. শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া। এই তিন দফা দাবিতে গত শনিবার থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। ওই দিন শাহবাগে পুলিশি হামলার ঘটনায় শিক্ষকেরা আরও ক্ষুব্ধ হন।

সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন পৌনে ৪ লাখের বেশি। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর লালবাগ এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, আগে এ ধরনের কর্মবিরতি সব বিদ্যালয়ে তেমন দেখা যেত না। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। লালবাগ এলাকার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।

এই প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, গতকাল তাঁদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এসেছিল, কিন্তু সহকারী শিক্ষকেরা ক্লাস নেননি। ফলে তিনি একাই কয়েকটি ক্লাস নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘বার্ষিক পরীক্ষার আগে হাতে সময় খুবই কম। এভাবে কর্মবিরতি চলতে থাকলে পরীক্ষার ওপর প্রভাব পড়বে।’

আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, সারা দেশ থেকে আসা অনেক শিক্ষক সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কথা হয় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা থেকে আসা একজন শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সহকারী শিক্ষক হলেও প্রশাসনিক প্রয়োজনে ২০১৮ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের সবাই কর্মবিরতিতে আছেন। যদিও সবাই শহীদ মিনারে আসেননি।

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবেন উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘বাচ্চাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আমরা এটা করতে চাই না। আমরা দ্রুত বিদ্যালয়ে ফিরতে চাই। আমরা চাই রাষ্ট্র আমাদের দ্রুত বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করুক।’

জামালপুরের মেলান্দহ থেকে আসা আরেকজন সহকারী শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার থেকে আন্দোলনে আছেন। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে আছেন। প্রধান শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে। সম্প্রতি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে, যা সারা দেশের সব প্রধান শিক্ষকের জন্যও প্রযোজ্য হতে যাচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ বিভাগে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডে শুরুর মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা, ১১তম গ্রেডে ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১৩তম গ্রেডে ১১ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া ও অন্যান্য ভাতা যোগ হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক অর থ ব ভ গ মন ত র র একট সরক র সহক র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গুলিতে নিহত মামুন কোর্টে গিয়েছিলেন হাজিরা দিতে

পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম সাইফ মামুন (৫৫)। তিনি একজন ব্যবসায়ী। হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে তিনি কোর্টে গিয়েছিলেন। 

সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে তাকে গুলি করে দুর্বত্তরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে  চিকিৎসক দুপুর ১২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাইফের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মোবারক কলোনী এলাকায়। তার বাবার নাম এসএম ইকবাল হোসেন। বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় একটি বাসায় স্ত্রী ও ২ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখা যায় একজন ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার উপর পড়ে আছেন।

“আমরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢামেকে পাঠানো হয়, পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন,” বলেন তিনি।

নিহতের স্ত্রী রিপা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী আজ কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা আমার স্বামীকে গুলি করে। পরে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে স্বামীর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পাই।”

রিপা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী বিএনপি সমর্থক ছিলেন এবং পাশাপাশি ব্যবসা করতেন তিনি।”

ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।” 

ঢাকা/বুলবুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার: ধর্ম মন্ত্রণালয়
  • চীনের তিয়ানগং স্টেশনে যাবেন পাকিস্তানি মহাকাশচারী
  • উখিয়ায় মার্কেটে আগুন, দগ্ধ একজনের মৃত্যু
  • দিনাজপুরে ভুল অস্ত্রোপচারে দুই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
  • বৈষম্য দূর হবে বাস্তব উদ্ভাবনে
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের টানা আন্দোলনে বার্ষিক পরীক্ষার ওপর প্রভাব পড়ার শঙ্কা
  • গুলিতে নিহত মামুন কোর্টে গিয়েছিলেন হাজিরা দিতে
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু, ৬৫ হাজার স্কুলে ক্লাস বন্ধ
  • পুলিশি হামলার পর কর্মবিরতির ডাক প্রাথমিকের শিক্ষকদের