ক্রিকেটার থেকে চাকরিজীবী হওয়া রাফছান আদা চাষ করে যেভাবে সাফল্য পেলেন
Published: 4th, October 2025 GMT
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের চাটখইর গ্রামের রাফছান জানী (৩২) একসময় ছিলেন ক্রিকেটার। প্রিমিয়ার লিগে ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু পারিবারিক দায়িত্বের কারণে তাঁকে ক্রিকেট ছাড়তে হয়। পরে চাকরি করলেও স্বল্প বেতনের কারণে সে পথেও বেশি দূর এগোনো হয়নি। শেষ পর্যন্ত কৃষিকাজেই খুঁজে পান নতুন পথ। পতিত জমিতে ব্যাগিং পদ্ধতিতে আদা চাষ করে এখন তিনি এলাকায় সফল চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের চাটখইর গ্রামে রাফছান জানীর বাড়ি; বাবার নাম সাইফুল ইসলাম। শৈশব থেকেই রাফছান জানীর পড়ালেখার পাশাপাশি ঝোঁক ছিল ক্রিকেটে। ভর্তি হন বগুড়ার ইয়ং টাইগার্স ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখান থেকেই শুরু একাডেমিক ক্রিকেটে তাঁর যাত্রা। পরে প্রিমিয়ার লিগে ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলেন।
অনুশীলনের সময় ইনজুরির কারণে একসময় ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন রাফছান জানী। রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক (পাস) এবং নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর জীবিকার প্রয়োজনে ২০২১ সালে প্রাণ গ্রুপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি নেন। পাশাপাশি সরকারি চাকরির জন্যও চেষ্টা করেন। এক বছরের মাথায় চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন গ্রামে। বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত হন।
শখের চাষে অপ্রত্যাশিত সাফল্যইউটিউবে ব্যাগিং পদ্ধতিতে আদা চাষের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন রাফছান। বছরখানেক আগে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে এক হাজার জিও টেক্সট ব্যাগে আদা চাষ শুরু করেন। এতে খরচ হয় ১৮ হাজার টাকা। প্রথম বছরেই ৪৭ হাজার টাকার আদা বিক্রি করে লাভ পান দ্বিগুণের বেশি।
এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এ বছর বাড়ির পাশে দুই একর পতিত জমিতে ১০ হাজার জিও ব্যাগে উচ্চ ফলনশীল আদা চাষ করেছেন তিনি। খেত থেকে আদা তোলা শুরু করেছেন। প্রতি ব্যাগে গড়ে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ২০০ কেজি আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
রাফছান জানী এ মৌসুমে দুই একর জমিতে ব্যাগিং পদ্ধতিতে আদা চাষ করেছেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দূষণ শুষে নেওয়া পদ্ম ফুল কেন হারিয়ে যাচ্ছে
পদ্ম জলাভূমিতে শোভা ছড়ায়, এর ফুল মধু বিকোয়, কিছু খাদ্যমূল্যও আছে। তবে বিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিদ ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুগুণে সমৃদ্ধ পদ্ম বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদের একটি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের তুলনায় পদ্ম অনেক বেশি সক্ষম।
শুধু কার্বন শোষণ নয়, সিসা, তামা, ফ্লোরাইড কিংবা নাইট্রেটের মতো ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতাও রাখে পদ্ম। পানির মান কতটা ভালো হতে পারে, তার নির্ণায়ক পদ্ম। বৈশ্বিক নানা গবেষণায় দেখা গেছে, যে জলাশয়ে পদ্মের উপস্থিতি থাকে, সেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ভালো থাকে। খাবার, ওষুধ ও কসমেটিক–সামগ্রী হিসেবে পদ্মের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পদ্মের বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কার্বনসহ ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতা রাখে পদ্ম। পানির মান নির্ণায়ক পদ্ম। এর বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় প্রেমিকা বরুনার জন্য ‘বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে’ ১০৮টা নীলপদ্ম আনার কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি আমরাও পদ্ম আর পদ্মবিলের খোঁজে বেরিয়েছিলাম। মাঝশরতের সকাল পেরিয়ে দুপুর। টাঙ্গাইলের নানা স্থানে পদ্মবিলের খ্যাতি আছে। একসময় কালিহাতীর বিলগুলোয় ‘পদ্ম’ ফুটত। আমাদের উদ্দেশ্য, পদ্মশোভিত বিল দেখা। তপ্ত রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়ালাম পাইকড়া বিল, চারাণ বিল, নকীল বিল, কুমার বিল, সিংগুলি বিলসহ আরও কত বিল। কোথাও পদ্ম ফুলের দেখা পাওয়া গেল না। কচুরিপানায় ভরা বিলগুলোর একটির নাম সাতবিল। একটি ছোট নৌকার মাঝি মজনু শাহ বলেন, এ বিলে আগে পদ্ম থাকলেও এখন নেই।
ঘুরতে ঘুরতে জানতে পারলাম, কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউনিয়নের ধানগড়া গ্রামের নান্দাই বিলে পদ্মফুল থাকতে পারে। কচুরিপানা আর হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ ভেদ করে মাঝ বিলে গিয়ে দেখলাম, পদ্মপাতা ভাসছে। কিন্তু ফুল খুব কম। নৌকাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিলে মাছে ছাষ অয়। আগে তো ম্যালা জায়গায় পদ্ম হইত। এহন এহানেই টিক্যা আছে। মাছের চাষ করতে গিয়্যা পদ্ম উডাইয়া ফেলে।’
আন্ধাশুরা বিলে ফুটে আছে পদ্ম। একসময় এ বিলে অনেক পদ্ম ফুটত। এখন তা কমে গেছে