ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা
Published: 4th, October 2025 GMT
বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে ভাষাসৈনিক, কবি, প্রবন্ধকার, গবেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ তাঁকে জাতীয় ইতিহাসের অংশ করে তুলেছে, আর আজীবন সাহিত্যচর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মুক্তচিন্তার এক নির্ভীক দিশারি হিসেবে। শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা এই মনীষী রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ হিসেবেও দুই বাংলায় সমানভাবে শ্রদ্ধেয়। তাঁর জীবনসংগ্রাম, সাহিত্যভুবনে বিচরণ ও গবেষণাকর্ম—সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য আলোকবর্তিকা।
আহমদ রফিক জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশ ভারতের এমন এক কালপর্বে, যখন বাংলার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নানা ধরনের পরিবর্তন চলছিল। তিনি ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অধ্যবসায়ী ও মেধাবী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় মোড় পরিবর্তন ঘটে এখানে—চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন বাংলা ভাষা রক্ষার লড়াইয়ে, ভাষা আন্দোলনের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আহমদ রফিক ছিলেন প্রথম সারির কর্মী। ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালে তিনি ভাষার অধিকারের দাবিতে অংশ নেন মিছিল ও সভা-সমাবেশে। সেই সময় তিনি ফজলুল হক হল, ঢাকা হল এবং মিটফোর্ড মেডিকেলের ছাত্রদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষাসহ প্রয়োজনীয় তৎপরতার মাধ্যমে আন্দোলনের সাংগঠনিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আহমদ রফিক ছিলেন প্রথম সারির কর্মী। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালে তিনি ভাষার অধিকারের দাবিতে অংশ নেন মিছিল ও সভা-সমাবেশে। ১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র আহমদ রফিকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র আহমদ রফিকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তখন তিনি আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন এবং ১৯৫৫ সালের শেষ দিকে প্রকাশ্যে ফিরে এসে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করলেও কখনো চিকিৎসক পেশায় যুক্ত হননি। তাঁর ঝোঁক ছিল সাহিত্য, সংস্কৃতি আর মুক্তচিন্তার দুনিয়ায়।
এক সাক্ষাৎকারে আহমদ রফিক বলেন, ‘আমি কিন্তু ভর্তি হতে চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুযোগ পেয়েছিলাম কেমিস্ট্রিতে অনার্স পড়ার। ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে দরখাস্ত করেছিলাম; কিন্তু আমি যেহেতু তদবিরে অভ্যস্ত নই, পছন্দও করি না, সেহেতু আমাকে সুযোগ দেওয়া হলো না। অথচ আমার এসএসসি এবং এইচএসসিতে যে রেজাল্ট, তাতে অনায়াসে তারা আমাকে আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তির সুযোগ দিতে পারত। তা না করে অনাবাসিক ছাত্র হিসেবে আমার দরখাস্ত গ্রহণ করেছিল। সেখানে সুযোগ পেলে আমার গ্রহণযোগ্যতা বিদ্বৎসমাজে আরও বেশি হতো। “ঘটনাই মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে।” সারা জীবন আমি লক্ষ করেছি, ঘটনা যেন আমাকে টেনে পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর আমি চেষ্টা করেছি, ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তাকে প্রতিহত করতে। একটা বিপরীত স্রোতে গতিশীল থেকেছি সারাটা জীবন। নইলে মেডিকেল কলেজে কারও নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো না, আমার নামেই হলো—ইস্কান্দার মির্জার গভর্নর ৯২ক ধারায়। দেড় বছর নিজের খরচও নিজেকে জোগাতে হয়েছে। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। না পরিবার, না কোনো স্বজন। আত্মগোপনে থাকতে হলো। আমার দল একবার আমার খবরও নেয়নি, কোনো আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেনি।’ (আজকের পত্রিকা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১)
আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫).উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার দাবি নাগরিক কোয়ালিশনের
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দাবি জানিয়েছে নাগরিক কোয়ালিশন। শনিবার কোয়ালিশনের এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম নাগরিক কোয়ালিশন। বিবৃতিতে এই কোয়ালিশন বলেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত সম্মেলনে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। দেশের কিছু বড় ও মূলধারার রাজনৈতিক দল আসন্ন নির্বাচনে ভোটের প্রতিযোগিতায় তুষ্টিবাদী রাজনীতির অংশ হিসেবে আহমদিয়াদের প্রতি বিষোদ্গার করছে। এটি খুবই আশঙ্কাজনক ব্যাপার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অনুরোধ করছি, এই সংকটকালে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন যেকোনো গোষ্ঠীর ব্যাপারে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে; বিশেষ করে যারা ধর্মকে অবলম্বন করে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।’
দেশের অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই সংবিধানে আহমদিয়াদের ধর্ম পালনের অধিকার সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত রয়েছে বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য এই অধিকার রক্ষায় আমরা অবিচল থাকব।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো শ্রেণি, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিসত্তা এবং ধর্মীয় পরিচয়–নির্বিশেষে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা বিষয়ে সরব থাকা। আমরা বিশ্বাস করি, এই মৌলিক সাম্যই হতে হবে জুলাই ২০২৪–পরবর্তী বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর।’
আরও পড়ুনখতমে নবুওয়তের মহাসম্মেলন থেকে ১ দফা দাবিতে বছরজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা৮ ঘণ্টা আগে