সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেলের সূর্য ঢলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছিল খুলনা বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোর লড়াই। ম্যাচের শেষ ওভারের সমীকরণ তখনও উত্তেজনাপূর্ণ। জিততে ঢাকার দরকার ২২ রান, হাতে ৩ উইকেট। বল হাতে আসেন জিয়াউর রহমান, আর সেখানেই গল্পের পরিসমাপ্তি লেখেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। নিখুঁত লাইন-লেংথে মাত্র ৪ রান খরচায় নেন ২ উইকেট, নিশ্চিত করেন খুলনার ১৭ রানের দাপুটে জয়।

শুধু শেষ ওভার নয়, পুরো ম্যাচজুড়েই ছিলেন জিয়াউর অনবদ্য। ব্যাট হাতে ঝোড়ো ইনিংস খেলার পর বল হাতে যেন হাজির হলেন বিধ্বংসী রূপে। ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় তার শিকার ৪ উইকেট। ব্যাট হাতে ৭ বলে অপরাজিত ১৭ রানে দলকে জোগান দেন বাড়তি তেজ। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার যায় তার ঝুলিতেই।

আরো পড়ুন:

বিজয়ের ব্যাটে খুলনার দাপুটে জয়

নাসিরের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে চট্টগ্রামের জয়রথ থামাল রংপুর

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে খুলনা নির্ধারিত ২০ ওভারে তোলে ৭ উইকেটে ১৮৬ রান। ইনিংসের মেরুদণ্ড ছিলেন আফিফ হোসেন। যিনি ২৪ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে খেলেন আগ্রাসী ৪৫ রানের ইনিংস। সঙ্গে ছিলেন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন (৪১), ওপেনার ইমরানউজ্জামান (৩৪) ও সৌম্য সরকার (২৪)। শেষ দিকে জিয়াউরের ছোট কিন্তু কার্যকর ক্যামিও ইনিংস খুলনার স্কোর নিয়ে যায় চ্যালেঞ্জিং উচ্চতায়।

ঢাকার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন তাইবুর রহমান। তিনি ৪ ওভারে ৪২ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। রিপন মণ্ডল পেয়েছেন ২টি।

১৮৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ঢাকা শুরুটা করে ঝড়োভাবে। ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলী (১৭ বলে ২৩) ও জিসান আলম (১৭ বলে ২০) এনে দেন ৪.

১ ওভারে ৪১ রানের উদ্বোধনী জুটি। কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় তাদের ব্যাটিং বিপর্যয়।

মাঝে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৩৬ বলে ৪৭) ও আরিফুল ইসলাম (১৭) কিছুটা আশার আলো জ্বালালেও জিয়াউরের জোড়া আঘাতে সেই আলো নিভে যায় দ্রুতই। শেষদিকে সুমন খান (২১) চেষ্টা চালালেও ফল বদলায়নি। ইনিংস শেষ হয় ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৯ রানে।

খুলনার হয়ে জিয়াউর রহমান ছাড়াও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নেন ২টি উইকেট। একটি করে পেয়েছেন সৌম্য সরকার, টিপু সুলতান ও পারভেজ জীবন।

এই জয়ে ছয় ম্যাচের চারটিতে জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে খুলনা পৌঁছে গেছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। ৮ পয়েন্ট নিয়ে ঢাকা বিভাগ নেমে গেছে দ্বিতীয় স্থানে। আর চট্টগ্রাম বিভাগ খুলনার সমান পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে আছে শীর্ষে।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ য় উর র র রহম ন উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাতীবান্ধার ছয়টি ইউনিয়নসহ পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে রেড অ্যালার্ট জারির পর মাইকিং করে তিস্তাপারের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাটসহ নীলফামারী ও রংপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে দুই উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, আমনের খেতসহ আগাম শীতকালীন সবজির খেত।

পাউবো সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার। অর্থাৎ স্বাভাবিক বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিস্তায় পানি বাড়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার ছয় ইউনিয়নের অন্তত ১০টি চর ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলসহ মুন্সিপাড়া, ক্লিনিকপাড়া, কাদেরের চর, মহিমপাড়া, চরপাড়া, কাতিপাড়া, সৈয়দপাড়া এলাকায় পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় পাউবোর কর্মীরা তিস্তাপারের বাসিন্দাদের মাইকিং করে সরে যেতে বলেন।

হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চরসিন্দুর্না এলাকার এনামুল হক বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাঁদের এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। পরিবার নিয়ে তাঁরা কষ্টে আছেন।

পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের কাতিপাড়া গ্রামের আমির হোসেন বলেন, বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় রান্না করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধে কাজ করছে।’

পাউবোর লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ