দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এডিস মশাবাহিত এ রোগে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২১৭ জনের মৃত্যু হলো।
আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সোমবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪২ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে (সিটি করপোরেশন ব্যতীত)। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫১ হাজার ৪০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার রোগী ১৩ হাজার ৮১৮ জন। আর ঢাকার বাইরের রোগী ৩৭ হাজার ৫৮৬ জন। ডেঙ্গু নিয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে। এ সংখ্যা ১৪ হাজার ১৯১। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫২৯ রোগী বরগুনা জেলার।
ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ১০৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এ সংখ্যা ৩২।
এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ রোগীর মৃত্যু হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। এ সংখ্যা ৭৬। এর আগে গত জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৪১ জনের মৃত্যু হয়। আর আগস্টে মৃত্যু হয়েছিল ৩৯ জনের। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন র ম ত য হয় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে হিমাগারে নারী ও কিশোরীকে পিন ফুটিয়ে নির্যাতন
রাজশাহীর একটি হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা ওই হিমাগারের অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ডস্টোরেজের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ওই হিমাগারের মালিক রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার ওরফে জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। এর আগে পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
ভুক্তভোগীদের বাড়ি পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর নারী (৩০) ও কিশোরী (১৩) ওই তরুণের খালাতো বোন। তাঁদের নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হিমাগারের অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে শিশুসন্তান দেখা যায়। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তাঁর কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আহত মেডিকেল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম দেখা যায়। পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর ওই কিশোরীর ঠোঁটে রক্ত দেখা যায়।
নির্যাতনের শিকার নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তাঁর ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাঁদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাঁর (ওই নারী) অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ওই নারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তাঁর খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাঁদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিসকক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁরা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। ওই কিশোরীর দাবি, তাঁকে ও তাঁর খালাতো বোনকে মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে সারা শরীরে সেফটি পিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করেছেন।
এ ঘটনা জানাজানি হলে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলেমেয়েদের অবরুদ্ধ করে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাঁদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর দুইটার দিকে স্থানীয়রা অফিসকক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।