রামুর ‘স্বর্গ জাহাজ’ ভাসানোর উৎসবে কী হয়, কত বছর ধরে হচ্ছে
Published: 7th, October 2025 GMT
পঙ্খিরাজ, হাতি, ময়ূরপঙ্খি, কবুতর ও বুদ্ধজাদির আকৃতির সাতটি জাহাজ। সত্যিকারের জাহাজ নয়, ‘কল্প জাহাজ’। বাঁকখালী নদীর তীরে ভ্যানে করে দল বেঁধে জাহাজগুলো নিয়ে আসেন পুণ্যার্থীরা। এরপর নৌকায় ভাসিয়ে দেন এসব কল্প জাহাজ। পুণ্যার্থীরা একে স্বর্গের জাহাজও বলেন। নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে একসময় চোখের আড়াল হয়ে যায় জাহাজগুলো। বুঝি স্বর্গেই চলে যায়।
বৌদ্ধধর্মের অনুসারীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমার শেষ দিনে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর ফতেখাঁকুল, শ্রীকুল ও পূর্ব রাজারকুল অংশে ২০০ বছর ধরে এই জাহাজ ভাসানোর উৎসব হয়ে আসছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে রামুতে এই উৎসব উদ্যাপিত হয়। জাহাজ ভাসানো উৎসবের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো.
বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জানালেন, আড়াই হাজার বছর আগে বৈশালী রাজ্যে অনাবৃষ্টি, খরা ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর প্রভাবে মানুষ ও জীবজন্তু মারা যাচ্ছিল। তখন গৌতম বুদ্ধ বৈশালী রাজার আমন্ত্রণে শিষ্যদের নিয়ে ওই রাজ্যে যান। তিনি ‘রত্ন সূত্র’ পাঠ করে খারাপ দেবতার প্রভাব থেকে বৈশালীকে রক্ষা করেন। ফিরতি পথে সর্প দেবতারা ৫০০টি নৌকায় শিষ্যসহ বুদ্ধকে নদী পার করে দেন। সেই দিনকে স্মরণ করতেই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ জাহাজ ভাসানো উৎসব পালন করে আসছেন। প্রতিবছর তিন মাস ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত পালন শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার শেষ দিন জাহাজ ভাসানো উৎসব হয়।
বাঁকখালী নদীতে ভাসছে স্বর্গের জাহাজ। আজ বিকেলেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বর গ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে জামাল ভূঁইয়ার হাত ধরে ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল উৎসবের উদ্বোধন
চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম নতুন সাজে সেজে উঠেছে তৃতীয় ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। রঙিন বেলুন, ব্যানার ও ফেস্টুনে সজ্জিত স্টেডিয়ামের ভিতর-বাহির। ভেতরে ‘গোল…গোল…গোল’ থিম সংয়ের তালে তালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস, স্লোগান আর আনন্দঘন পরিবেশে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো চত্বর।
এমন উৎসবের আবহেই আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসর। উদ্বোধনী ম্যাচে সমর্থকদের উল্লাসের পাশাপাশি হারের আক্ষেপ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তেজনা মিলিয়ে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের চট্টগ্রাম পর্ব পেয়েছে বর্ণিল সূচনা।
সকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেন পরিণত হয়েছিল তারার মেলায়। ঢাকা থেকে এসে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক চার অধিনায়ক—টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ইমতিয়াজ সুলতান জনি, চট্টগ্রামের সন্তান মামুনুল ইসলাম ও জাহিদ হাসান এমিলি। তাঁদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামের উৎসবমুখর পরিবেশে যোগ হয় বাড়তি উচ্ছ্বাস। জামালকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের সেলফি তোলা তোলার হিড়িক পড়ে। জাতীয় দলের অধিনায়ককে কাছে পেয়ে শিক্ষার্থীরা ছিলেন আপ্লুত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান মির্জা সালমান ইস্পাহানি, ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা শাকির ইস্পাহানি, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যসচিব ও জেলা ক্রীড়া অফিসার আবদুল বারী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জামাল ভূঁইয়া।
ইস্পাহানির পতাকা উত্তোলন করেন মির্জা সালমান ইস্পাহানি। টুর্নামেন্টের পতাকা, প্রথম আলোর পতাকা ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে এসে নিজের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে নিজের খেলার স্মৃতিচারণা করেন তিনি। এই মাঠে শেখ কামাল টুর্নামেন্টে খেলেছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে। জামাল বলেন, ‘এই মাঠে আছে আমার অনেক ভালো স্মৃতি। ইস্পাহানি-প্রথম আলোকে ধন্যবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সামনে এমন একটি মঞ্চ পেতে দেওয়ার জন্য।’
অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেন তিনি, ‘ইস্পহানি-প্রথম আলো তোমাদের সামনে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সেটি কাজে লাগাতে হবে। মনের আনন্দের খেল, উপভোগ কর, নিজেকে মেলে ধর।’
নকআউটভিত্তিক টুর্নামেন্টের প্রথম দিনের প্রথম ম্যাচটা হয়েছে বেশ নাটকীয়। প্রথম ম্যাচেই পাওয়া গেছে টাইব্রেকারে উত্তাপ। ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম পিছিয়ে পড়েও খেলায় ফিরে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়েছে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশকে। খালেদ বিন সেলিম এগিয়ে নেন বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে। ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রামকে ম্যাচে ফেরান অধিনায়ক অন্তিম হোসেন সৈকত। এরপর টাইব্রেকারে জেতে ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন জয়ী দলের অন্তিম হোসেন সৈকত। তাঁর হাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার তুলে দেন জামাল ভূঁইয়া, মির্জা সালমান ইস্পাহানি ও আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। গত বছরও প্রথম ম্যাচে টাইব্রেকারে জিতেছিল ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে এবার ঢাকার ২৮টি, চট্টগ্রামের ১০টি, খুলনা ও রাজশাহীর ৪টি করে মোট ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিচ্ছে। চট্টগ্রামে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে ঢাকায়।
২৩ নভেম্বর রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে ও ২৫ নভেম্বর খুলনা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা মাঠে ওই দুটি অঞ্চলের খেলা হবে। এরপর ২৮ নভেম্বর ঢাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠে শুরু হবে ঢাকার আঞ্চলিক পর্বের খেলা।