হোয়াটসঅ্যাপে ফোন। মুঠোফোনের স্ক্রিনে পুলিশের ছবি ভেসে উঠল। গম্ভীর ও স্পষ্ট শুদ্ধ উচ্চারণে বললেন, তিনি মিরপুর মডেল থানা থেকে এসআই মাহফুজ আলম বলছেন। ফোন করার কারণ জানতে চাইলে কণ্ঠ আরও গম্ভীর করে বললেন, এই নম্বরটা আপনার? বললাম, আপনি তো এই নম্বরেই ফোন করেছেন, তো নম্বরটা আমারই।
এসআই বললেন, আপনার বাচ্চা মোবাইল টিপাটিপি করে? বললাম, আমার বাচ্চারা বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজে পড়ে। তাদের মোবাইল নিয়ে খেলার বয়স বা সময় কোনোটাই নেই। এবার তাঁর কণ্ঠে একটু বিরক্তির ভাব। বললেন, আপনার নম্বর পুলিশের সার্ভারে অ্যাড (যুক্ত) হলো কীভাবে? আমিও শীতল কণ্ঠে বললাম, আমার নম্বর যদি আপনাদের সার্ভারে অ্যাড হয়, সে দায় তো আমার না, আপনাদের সার্ভার দুর্বল।
জানতে চাইলাম, এখন আমাকে কী করতে হবে? তিনি বললেন, আমার নম্বরে একটি লিংক পাঠাচ্ছেন, তাতে ক্লিক করে ‘ও কে’ করলেই হবে। আর ধৈর্য রাখা গেল না। বললাম, আপনাকে এ দায়িত্ব কে দিয়েছে? বললেন, তাঁর থানায় এ নিয়ে আলাদা বিভাগই আছে, তিনি সেই বিভাগ থেকে বলছেন। আমি বললাম, ঠিক আছে আমি থানায় ফোন করে খোঁজ নিয়ে আবার আপনাকে ফোন দিচ্ছি। এবার সরাসরিই হুমকি দিলেন। আপনি কি চাচ্ছেন আপনার ফোনটি বন্ধ করে দিই? আমিও বললাম, আপনার ক্ষমতা থাকলে বন্ধ করে দেন। রাগে ফোনটা কেটে দিলেন তিনি।
হোয়াটসঅ্যাপে গত সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আমার কাছে ফোনটি আসে। তার আগে ওই দিন সকালেই দিল আফরোজ নামের একজন এ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেই পোস্ট নিয়ে অফিসে কথাও বলেছিলাম। সে অর্থে এই ‘এসআই মাহফুজ আলম’ আমার পূর্বপরিচিত। তাই কথা বলতে সুবিধা হয়েছে।
রাজধানীর সরকারি সংগীত কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিল আফরোজের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলো। অবশ্য দিল আফরোজকে অন্য একটি নম্বর থেকে এসআই মাহফুজ আলম পরিচয় দিয়ে ফোন দিয়েছিলেন এই প্রতারক। তাঁর কাছেও জানতে চেয়েছেন, তাঁর নম্বর কীভাবে থানার সার্ভারে অ্যাড হলো? বাচ্চাদের হাতে ফোন দেন কি না? বাচ্চারা ফোন টেপাটেপি করে কি না, এখন তো এ নিয়ে বিপদে পড়বেন।
দিল আফরোজ অবশ্য ফেসবুক পোস্টে মজা করে লিখেছেন, তিনি বিপদে থাকতে ভালোবাসেন। তাই প্রসেস বলা বা ওটিপি চাওয়ার আগেই বলে দিয়েছেন তিনি কোনো ওটিপি দেবেন না। তারপর অপর প্রান্ত থেকে অশ্রাব্য গালি দেওয়া হয় দিল আফরোজকে। সে কথাও তিনি পোস্টে লিখেছেন। পুলিশ বন্ধুদের জন্য এসআই পরিচয় দেওয়া ওই প্রতারকের ফোন নম্বরটি পোস্টে তুলে দিয়েছেন, যাতে তাকে ধরতে পারে।
এসআই মাহফুজ আলম পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি প্রতারণা করছেন, এটা চট করে বুঝলেন কীভাবে—এ প্রশ্নের জবাবে দিল আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কথা বলার ভঙ্গি পেশাদার মনে হয়নি। আর আমার নম্বর থানার সার্ভারে এমনি এমনি অ্যাড হয়ে যাবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। আমার বাচ্চার হাতে ফোন যাবে, এটাও হাস্যকর। বাচ্চা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কিছুদিন আগেই ভাইস প্রিন্সিপাল ম্যাডামের ফোন হ্যাক করা হয়েছিল, সেটাও মাথায় ছিল হয়তো।’
দিল আফরোজ বললেন, কাউকে ওটিপি, পিন নম্বর অথবা ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয় না। এ বিষয়ে সবাই সচেতন হবেন, সে জন্যই ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছেন।
এসআই মাহফুজ আলম নামে আসলেই কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আছেন কি না, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় মিরপুর মডেল থানার ওসি মো.
এর আগেও সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ফোন করে এ ধরনের একটি অভিযোগ করেছেন বলে জানান ওসি রোমন। তবে তিনি বা থানার পক্ষ থেকে তখন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এবার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অনেকেই হয়তো বুঝতেও পারবে না যে এভাবে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ফোন করে প্রতারণা করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ল আফর জ কর মকর ত আম র ন ফ ন কর বলল ন বলল ম আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হবে : পুলিশ সুপার
নারায়ণগঞ্জে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন।
শনিবার (২২ নভেম্বর) মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন মামলার অগ্রগতি বিষয়ে অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে অক্টোবর মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা কম সংগঠিত হওয়ায় অফিসার ইনচার্জদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা এবং ডাকাতির ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য তিনি রাত্রি বেলায় পুলিশের টহল জোরদার এবং হাইওয়েগুলোতে হাইওয়ে পুলিশের সাথে সমন্বয় রেখে ক্রস পেট্রোলিং করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
এছাড়াও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রাথমিকভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী এবং বঞ্চিত নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
পুলিশ সুপার মহোদয় আরও বলেন, “সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, আড়াইহাজার থানা এবং পুলিশ লাইন্স থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।” ইতিমধ্যে লুন্ঠিত এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হবে বলে তিনি ঘোষণা করেন।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অক্টোবর/২৫ মাসের বিভিন্ন মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে উপস্থাপন করেন।
আলোচনা সভা শেষে পুলিশ সুপার জেলার শ্রেষ্ঠ এএসআই হিসেবে আড়াইহাজার থানার এএসআই মামুনুর রশিদ, রূপগঞ্জ থানার এসআই জয়নাল আবেদীন, ক্লু লেস মামলা ডিটেকশনে বিশেষ দক্ষতার জন্য ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মোঃ রফিক, অর্পিত দায়িত্ব কৃতিত্বের সাথে সম্পাদনের জন্য সদর কোর্ট, নারায়ণগঞ্জ এএ কর্মরত ইন্সপেক্টর জনাব মোঃ আব্দুল কাইয়ূম, গুরুত্বপূর্ণ মামলা সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য সদর মডেল থানায় কর্মরত ইন্সপেক্টর মোঃ জামাল উদ্দিন, বাৎসরিক ফায়ারিং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এসআই কাজল মিয়া, ১০ বছরের সাজা প্রাপ্ত ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি গ্রেফতারের জন্য রূপগঞ্জ থানায় কর্মরত এএসআই মোঃ শাহারুল ইসলাম এবং সাহসিকতার সাথে কর্তব্য পালনের জন্য আড়াইহাজার থানার ড্রাইভার মোঃ হাওলাদার লপ্তি-দের পুরস্কৃত করেন।
এসময় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, “গ” সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপারসহ সকল থানার অফিসার ইনচার্জ, সিআইডি, নৌপুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ পরিদর্শকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।