নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের স্লোগান–সংবলিত এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার পরিকল্পনার অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে ডিএমপির মুখপত্র ডিএমপি নিউজেও খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের এসব নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা রাজধানী ঢাকায় ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। এ ছাড়া ১০-১২ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার আশপাশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের স্লোগান–সংবলিত এক লাখ গ্যাস বেলুন ওড়ানোর পরিকল্পনা করছিলেন।

ডিবির মিরপুর বিভাগ তিনজন, রমনা বিভাগ তিনজন, সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ দুজন, মতিঝিল বিভাগ চারজন, ওয়ারী বিভাগ পাঁচ জন, উত্তরা বিভাগ দুজন, তেজগাঁও বিভাগ দুজন, লালবাগ বিভাগ তিনজন ও গুলশান বিভাগ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবি সূত্রের বরাত দিয়ে ডিএমপি নিউজ লিখেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাশকতা প্রতিরোধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নওপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি রূপচান ব্যাপারী; ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও গুলবাগ ১২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবরার খান তাহমিদ ওরফে তাহমিদ আশরাফ (২২); নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রায়হান খান আজাদ (২৭); শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এ বি এম নুরুল হক ওরফে ছোটন চৌধুরী (৬৯); শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো.

আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবলু; ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন খোকন (৭০); মিরপুর মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহসাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া; ভাষানটেক থানা যুবলীগের সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে আহমাদ আলী (৪০); মোহাম্মদপুর থানার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাবেক সহসভাপতি ম. জসিম ওরফে বিল্লাল; ঢাকা মহানগর গেন্ডারিয়া থানা মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুব রহমান (৫৫); শ্যামপুর থানার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০); কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম (৪০); আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহজালাল (৩৮); ঢাকার রায়েরবাগ ইউনিট যুবলীগের সেক্রেটারি মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে পলাশ; শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার ডিংগামানিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস সরদার (৪৫); ঢাকার পল্টন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর হোসেন (৫২); পল্টন থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবু সাঈদ (৫৬); নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. সামছুদ্দিন আহমেদ সেলিম (৬২); হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন রেহান (৫১); আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সহসম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রিন্স (৪৩); সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম পারভীন; ঢাকা মহানগর উত্তর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির সরকার ওরফে গলাকাটা নাছির (৫৪); নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা শ্রমিক লীগের সদস্য আলী হোসেন (৩১); কুমিল্লা জেলার ৬ নম্বর নিকলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক খন্দকার (৫২) এবং বরগুনা জেলার তালতলী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান কামাল (৪২)।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বল গ র স র সদস য আওয় ম ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে

এ দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ–সম্পর্কিত পরিসংখ্যান একটি ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরছে—অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জীবন-মৃত্যু নির্ধারণ করছে মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা। অপরাধ প্রমাণের তো প্রশ্নই নেই, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়েরও প্রয়োজন দেখা হচ্ছে না; শুধু সন্দেহবশত মব তৈরি করে কিংবা গণপিটুনি দিয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

মাগুরার মহম্মদপুরে মো. ইসরাফিলকে মুঠোফোন ও টাকা চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার ভাই মামলা করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনা ‘জটিল’ ও ‘স্পর্শকাতর’। প্রশ্ন হলো, একজন মানুষ হত্যার পর জটিলতার অজুহাত কেন? অপরাধী শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘নীরব’ থাকা কি আদৌ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ?

প্রথম আলোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৩ মাসে গণপিটুনিতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। ৪৬টি ঘটনায় মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ১.২৭ শতাংশ আসামি। অর্থাৎ প্রায় ৯৯ শতাংশ হত্যাকারী নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থা যখন এমনভাবে ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, রাষ্ট্র কোথায়?

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর মব বা গণপিটুনির মতো সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়েছে। মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিশোধের রাজনীতি যেখানে বিচার-বিবেচনাকে গ্রাস করে, সেখানে গণপিটুনি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মব সহিংসতার শিকারদের মধ্যে শিশুও যেমন আছে, তেমনি মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষও রয়েছে। আরও ভয়ংকর হলো, কেউ কেউ এসব ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ বলে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, অপরাধীও আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাও ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত হিসেবে আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার কথা বলেছে। তাহলে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কীভাবে রাস্তায় ‘বিচার’ চালানোর অধিকার পেল?

পুলিশ কর্মকর্তাদের যুক্তি হলো, গুজব বা তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় ঘটনাগুলো ঘটে এবং জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যখন ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমের নজরে পড়ে, তখনই কেন গ্রেপ্তার হয়? রংপুরের একটি ঘটনায় দলিত সম্প্রদায়ের দুজনকে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে ঘটনাগুলো আলোচিত নয়, সেখানে তদন্ত ও গ্রেপ্তার শূন্যের কোঠায়। এর মানে স্পষ্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘সিলেকটিভ’ তৎপরতা চালায়। কিছু ঘটনায় মামলা শেষ পর্যন্ত হয়ই না। পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে ভয় পান—শত্রু তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করেন। 

গণপিটুনি শুধু আইন ভাঙা নয়, এটি বর্বরতার চূড়ান্ত। একটি সমাজ তখনই বর্বর হয়, যখন অভিযোগ প্রমাণের আগেই শাস্তি দেওয়া হয়। এ রকম অবস্থায় রাষ্ট্রকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে: কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন হাতে তুলে নিলে শাস্তি হবেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত প্রতিটি গণপিটুনি মামলার অগ্রগতি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্তে প্রযুক্তির ব্যবহার করা।

অন্যায়ের বিচার না হলে সেই অন্যায় চলতেই থাকে। শুধু মামলা নেওয়া বা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা নয়; রাষ্ট্রের কর্তব্য ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন করাও। এর পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মনস্তাত্ত্বিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। সমাজেরও উপলব্ধি জরুরি—গণপিটুনি ন্যায়বিচার নয়; এটি হত্যাকাণ্ড। ন্যায়বিচার আদালতে হয়, রাস্তায় নয়।

অন্যায় থামাতে হলে একটা মাত্র উদাহরণ দরকার—প্রতিটি মামলায় দ্রুত ও যথাযথ শাস্তি। যখন মনে হবে অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না, তখনই থামবে এই উন্মাদনা। বিচারহীনতার সংস্কৃতির এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ. লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে কেউ মাঠে নামলেই গ্রেপ্তারের নির্দেশ
  • শেখ হাসিনার বিষয়ে রায়ের তারিখ ঘিরে অনিরাপদ বোধ করছে না প্রসিকিউশন
  • সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে, প্রত্যাহারের খবর গুজব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও মনোনীত প্রার্থীর শোডাউন, প্রশাসনের ১৪৪ ধারা
  • সুনামগঞ্জে ধোপাজান নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা
  • বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে
  • নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের সুযোগ নেই: প্রেস সচিব
  • সরকার, রাজনৈতিক দল সবার জন্য সতর্কবার্তা