আমার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে। তবে সেই ডিগ্রিগুলোর সঙ্গে যে পেশাগুলোর সম্পর্ক থাকার কথা, আমার তার কোনোটিই বেছে নেওয়া হয়নি। বলা যায় একেবারে ভিন্ন পথে হেঁটেছি। বৈশ্বিক উষ্ণতা, পরিবেশ বিশ্লেষণ আর ল্যাবরেটরির পরিসংখ্যানের জগৎ থেকে হঠাৎই আমি এসে পড়েছি সাংবাদিকতার সম্পূর্ণ আলাদা দুনিয়ায়।

এই পরিবর্তনটিকে সাধারণ ‘ক্যারিয়ার বদল’ নয়, বরং ‘অনুধাবন’ বলতে চাই। প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া এই যাত্রার মূল কারণ যদি এক কথায় বলতে হয়, বলতে হবে—‘প্রথম আলো’। পুরো গল্পটা বুঝতে চাইলে একটু পেছনে ফিরে দেখা দরকার।

সৃজনশীল কাজে আমার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। লিখতাম, গান গাইতাম, ছবি আঁকতাম। কিছু পুরস্কারও পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে সেই ধারা বজায় ছিল। সুযোগ পেলেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতাম, লেখালেখি করতাম।

ভূগোলের জটিল ভাষার ভিড়ে এসবই ছিল আমার শান্তি খোঁজার উপায়। মাঝেমধ্যে ভাবতাম, আসলে কী ভালো লাগে আর আমি কী করছি—এই হিসেব মিলছে তো? কিন্তু বাস্তবতার নানা পরিক্রমায় আমাকেও বোঝানো হয়েছিল, চাকরি বা ক্যারিয়ারে সৃজনশীলতার নাকি কোনো জায়গা নেই।

তৃতীয় বর্ষে পড়ার হঠাৎই প্রথম আলোর রোববারের ক্রোড়পত্র ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে ফিচার লেখক হিসেবে কাজ করার সুযোগ আসে। তার আগে কোনো সংবাদমাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। এখান থেকেই সাংবাদিকতাকে ‘বোঝা’র শুরু।

পত্রিকার কাজে স্বপ্ন নিয়ে পাতার সম্পাদক মো.

সাইফুল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে প্রায়ই দেখা হতো প্রথম আলোর অফিসে। কাছ থেকে দেখে অনেক কিছু শিখেছি। দেখেছি—একটি লেখা কীভাবে সম্পাদনার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ছাপাখানায় পৌঁছায়।

সাংবাদিকতার ছাত্ররা হয়তো এসব ক্লাসে শেখে। কিন্তু আমি শিখেছি অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে—কখনো পর্যবেক্ষণ থেকে, কখনো কাজের মাধ্যমে, আবার কখনো সাইফুল্লাহ ভাইকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে।

প্রথম আলোতে আমি লিখেছি প্রায় দু বছর। এই সময়টা আমাকে নিজের আগ্রহ ও পেশাগত দিক নিয়ে একদম পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে। বুঝতে পেরেছি, আমি সাংবাদিকতার প্রক্রিয়াটাই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি।

সেই উপলব্ধি থেকেই স্নাতক শেষে স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি পূর্ণকালীন সাংবাদিকতায় মনোযোগ দিই। পরে কাজ করেছি একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি টেলিভিশন চ্যানেলে।

তবে এরই মধ্যে আরও একটি ঘটনা ঘটে যায়। স্নাতকোত্তরের মাঝপথে দিয়েছিলাম বিসিএস পরীক্ষা, আর প্রিলিমিনারিতেও উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় একদিন হঠাৎ মনে হলো—এই পথটা কি সত্যিই আমার জন্য?

চারপাশে সবাই যখন সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা খুঁজছে, তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমি খুঁজছি অন্য কিছু—অর্থ বা নিরাপত্তা নয়, বরং অর্থপূর্ণতা। সাংবাদিকতাকে আরও গভীরভাবে জানার ও গবেষণার দৃষ্টিতে বোঝার ইচ্ছেটাই ভেতরে-ভেতরে দানা বাঁধছিল।

সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি দিই যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছি।

আরও পড়ুনসফল হতে কী লাগে—বললেন এ বছর রসায়নে নোবেলজয়ী সুসুমু কিতাগাওয়া২৬ অক্টোবর ২০২৫

পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহকে আরও বিস্তৃত রূপ দিতে স্নাতকোত্তরের পর আরও কয়েকজন মিলে প্রতিষ্ঠা করি ‘ডালাস বার্তা’, উত্তর টেক্সাসের প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য একটি দ্বি-সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা। বর্তমানে আমি এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। সংবাদ সম্পাদনা, ফিচার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রকাশনার প্রতিটি ধাপে সরাসরি যুক্ত আছি।

স্নাতকোত্তরে পড়ার সময় সাংবাদিকতার গবেষণায় গভীরভাবে যুক্ত হই। সংকট, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে সংবাদ কীভাবে উপস্থাপিত হয় এবং তা মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে—এই বিষয়গুলো আমার গবেষণার মূল বিষয় ছিল।

আমার গবেষণার কাজগুলোর স্বীকৃতি হিসেবে আমি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগবিষয়ক গবেষণা সংস্থা এইজেএমসি (অ্যাসোসিয়েশন ফর এডুকেশন ইন জার্নালিজম অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন) থেকে জিন বার্ড অ্যাওয়ার্ড পাই।

এটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নগর সাংবাদিকতা গবেষণায় অন্যতম বড় সম্মান হিসেবে গণ্য হয়। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি আঞ্চলিক সম্মেলনেও আমার গবেষণা সেরার পুরস্কার পায়। আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আমাকে থিসিসের জন্য গবেষণা অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

এসব অর্জন আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে সাংবাদিকতা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে ও গবেষণাকে ভবিষ্যতের পথ হিসেবে বেছে নিতে। তাই বর্তমানে আমি পিএইচডির প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আরও পড়ুনপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়াই টার্নিং পয়েন্ট, এখন পড়ছেন অক্সফোর্ডে০২ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য প রথম আল ব দ কত র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা ধসিয়ে দিয়েছে রাশিয়া, অন্ধকারে বিভিন্ন অঞ্চল

ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে রাশিয়া ব্যাপক হামলা চালানোর পর দেশটিতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন অঞ্চল। আজ রোববার ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিভ্রাটের সতকর্তা জারি করেছে দেশটির বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ইউক্রেনেরর্গো। হামলার জেরে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ‘শূন্যের’ কোঠায় নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

গত কয়েক মাসে ইউক্রেনের বিভিন্ন অবকাঠামোয় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কয়েক শ ড্রোন হামলা চালিয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের্গো জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ অবকাঠামো মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বিকল্প উৎস থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত শনিবার ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী ভিতলানা গ্রিনচুক জানিয়েছেন, কিয়েভ, নিপ্রোপেত্রাভস্ক, দোনেৎস্ক, খারকিভ, পলতাভা, চেরনিহিভ ও সুমিতে সরবরাহ কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। তবে সেখানে নিয়মিত বিদ্যুৎবিভ্রাট থাকবে।

স্থানীয় টেলিভিশন ইউনাইটেড নিউজকে ভিতলানা গ্রিনচুক বলেছেন, শত্রুরা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এটি প্রতিহত করা খুব কঠিন। আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর এমন হামলা হয়নি।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিয়া জানিয়েছেন, রুশ ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্দ্রি সিবিয়া তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, ‘রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির জবাব দিতে আমরা আইএইএর গভর্নর বোর্ডের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানাচ্ছি।’

হামলা বন্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চীন ও ভারতের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশ দুটি রাশিয়ার জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হিসেবে পরিচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলার কারণে শীতের আগে ইউক্রেনের তাপ সরবরাহ ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়েছে। দেশটির শীর্ষ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলেকজান্দ্রা খারচেঙ্কো সতর্ক করে বলেছেন, তাপমাত্রা যখন হিমাঙ্কের ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসবে, তখন কিয়েভের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তাপকেন্দ্র তিন দিনের বেশি বন্ধ থাকলে রাজধানীতে ‘প্রযুক্তিগত বিপর্যয়’ তৈরি হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ