বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে প্রোস্টেট ক্যানসার পুরুষদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে বয়স ৫০ পেরোনোর পর এর ঝুঁকি দ্রুত বাড়তে থাকে। তবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে রোগটি শুরুতেই শনাক্ত এবং সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে ভালোভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ঝুঁকিতে কারা

পুরুষদের মূত্রথলির নিচে একটি ছোট গ্রন্থি থাকে, যার নাম প্রোস্টেট। এই গ্রন্থির কোষ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করলে সেটি প্রোস্টেট ক্যানসার বা টিউমারে পরিণত হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষেরা এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়া বংশগত বা পরিবারে কারও প্রোস্টেট ক্যানসার থাকলে, অতিরিক্ত ওজন অর্থাৎ স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ধূমপানের মতো বিষয় পোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

উপসর্গ কী

ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ বা রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের প্রবাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব বা বীর্যে রক্ত আসা ও কোমর বা হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন বা পিএসএ নামক রক্ত পরীক্ষা, ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন (ডিআরই), এমআরআই বা বায়োপসির মাধ্যমে প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসা

প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে কোন ধাপে (স্টেজ) রোগটি শনাক্ত হয়েছে, তার ওপর। সার্জারির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ করা হয়। রেডিয়েশন থেরাপি বাংলাদেশে এখন বেশ প্রচলিত। এক্সটারনাল বিম রেডিওথেরাপি অর্থাৎ আইএমআরটি, ভিএমএটি, টোমোথেরাপি ইত্যাদি দেওয়া হয়। ব্র্যাকিথেরাপি অর্থাৎ গ্রন্থির ভেতরে ছোট বিকিরণ উৎস বসানোও এই ক্যানসার চিকিৎসার একটি পদ্ধতি। কখনো হরমোন থেরাপির সঙ্গে দেওয়া হয়। নতুন পদ্ধতিতে (হাইপোফ্র্যাকশনেশন, এসবিআরটি) কম সেশনে কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব। এ ছাড়া হরমোন থেরাপি অর্থাৎ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমিয়ে ক্যানসারের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রোগের অগ্রসর পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয় কেমোথেরাপি।

প্রতিরোধে করণীয়

বয়স ৫০ পেরোনোর পর প্রতিবছর পিএসএ টেস্ট করা উচিত।

পরিবারে ইতিহাস থাকলে ৪৫ বছর থেকেই পরীক্ষা শুরু করা দরকার।

স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

ধূমপান একেবারে পরিহার করতে হবে।

প্রস্রাবজনিত যেকোনো সমস্যায় অবহেলা করা যাবে না।

প্রোস্টেট ক্যানসার যদি সময়মতো শনাক্ত করা যায়, তাহলে সার্জারি বা রেডিওথেরাপি দিয়েই অনেক রোগী পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন। তাই প্রত্যেক পুরুষের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

আরমান রেজা চৌধুরী: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, রেডিয়েশন অনকোলজি, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস র ব পর ক ষ গ রন থ অর থ ৎ

এছাড়াও পড়ুন:

খাওয়ার পরপরই যাঁরা বাসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা কেন অনন্য, জেনে নিন তাঁদের ৮টি গুণ

খাওয়ার পরপরই বাসনকোসন পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে নিয়মানুবর্তিতা, মনোযোগ ও নম্রতা প্রকাশ পায়। অনেকেই যৌথ পরিবার বা মেসে থাকেন। তাঁদের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস অপরকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা প্রকাশ করে।

এ ছাড়া এই অভ্যাস রুটিন মেনে চলা, অবসাদ কমানো, নিজের যত্ন নেওয়া এবং দায়িত্বশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকেই ঘরের কাজ জমিয়ে রাখেন; কিন্তু যাঁরা খাওয়ার পরপরই বাসনকোসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা ঘরের কাজও সেরে ফেলেন চটজলদি। এতে তাঁদের দূরদৃষ্টি এবং উপস্থিত বুদ্ধি প্রকাশ পায়।

তাঁরা কাজ ফেলে রাখেন না

এ ধরনের ব্যক্তিরা বাসন মাজা শেষ না করলে খাওয়া শেষ হয়েছে বলেই মনে করেন না। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এই আচরণ ‘জিগারনিক প্রভাব’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
মনোবিজ্ঞানে জিগারনিক প্রভাব বলে বোঝায়, এম এক মানসিক প্রবণতা, যেখানে কোনো কাজ মাঝপথে থেমে গেলে বা অসম্পূর্ণ থাকলে তা সম্পূর্ণ হওয়া কাজের তুলনায় মানুষের মনে বেশি সময় ধরে থাকে। সহজভাবে বললে, মানুষ অসমাপ্ত বা বাধাগ্রস্ত কাজগুলো সম্পন্ন কাজের চেয়ে ভালোভাবে মনে রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অসমাপ্ত কাজ কীভাবে আমাদের মনে গেঁথে থাকে। কাজ জমিয়ে রাখলে সেসবের কথা আমাদের সব সময় মনে পড়তে থাকে। এতে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।

ঘরের কাজগুলো সময়মতো সেরে ফেললে মন থাকে চাপমুক্ত। কাজ সময়মতো সেরে ফেললে মনে শান্তি আসে। কাজ অসমাপ্ত না রাখার এই অভ্যাসের সুফল শুধু রান্নাঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সময়মতো অফিসে আসা, প্রজেক্ট শেষ করা, রোজকার সব কাজেই প্রতিফলিত হয়।

আরও পড়ুননাভি কত দিন পরপর কীভাবে পরিষ্কার করতে হয়০৪ অক্টোবর ২০২৫তাঁরা অপরকে সম্মান দেন

দ্রুত বাসন মেজে ফেলা মানুষেরা দলবদ্ধভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নোংরা ময়লা তাঁরা বাড়ির অন্যদের জন্য ফেলে রাখেন না। কাজটি নিজে করে ফেলে জায়গাটি পরিষ্কার রাখেন। এ ধরনের মানুষ অন্যের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেন।

ছোট ছোট কাজগুলো তাঁরা নিজেরাই করেন। যেমন রান্নাঘর পরিপাটি রাখা, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া কিংবা ডিশওয়াশার শেষ হয়ে গেলে বোতলটা আবার ভরে রাখা। এসব কাজ বাড়ির অন্য সদস্যদের প্রতি তাঁদের সম্মান ও বিবেচনাবোধ প্রকাশ করে।  

তাঁরা রুটিন মেনে চলেন

খাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে বাসন মেজে ফেলা আদতে তাঁদের দৈনন্দিন রুটিনেরই অংশ। এই ছোট একটি কাজই প্রমাণ করে তাঁরা সময়ের কাজ সময়ে করতে কতটা পছন্দ করেন। ছোট ছোট কাজগুলো জমিয়ে না রাখার কারণে আরও বড় বড় কাজ করার জন্য তাঁরা যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে পারেন।

এই ছোট ছোট অভ্যাস জীবনে স্থিতিশীলতা আনে। আরও অনেক ইতিবাচক আচরণ দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। জীবনের কঠিন সময়গুলোয় তাঁরা সামলে নেন ভালোভাবে। সকালে হাঁটতে বের হওয়া, সন্ধ্যায় বই পড়ার মতো উপকারী অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট সময় পান তাঁরা।

বাসন মাজা শুধু পরিচ্ছন্নতার সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়, কাজটি মনোযোগেরও বটে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিম্নমানের ইঞ্জিন অয়েল সাশ্রয়ে শুরু, সর্বনাশে শেষ!
  • খাওয়ার পরপরই যাঁরা বাসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা কেন অনন্য, জেনে নিন তাঁদের ৮টি গুণ